এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : শেখ হাসিনার অডিও বার্তা শুনে সহিংসতার চেষ্টার অভিযোগে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ রিজভী আহমেদ খালেদ (৫০) ও আওয়ামী লীগ নেতা গৌরমনি সরকার (৫৫)কে পুলিশে সোপর্দ করেছে ছাত্রদল-যুবদল নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা গৌরমনিকে কান ধরে উঠবস করায় উত্তেজিত জনতা।
রোববার (১০ নভেম্বর) এ ঘটনায় নবীগঞ্জে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার আওয়ামী লীগ পন্থি বাজারের কোন কোন ব্যবসায়ী বাজার ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান।
তবে যুবদল-ছাত্রদলের নেতারা জানান, এরা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসনের আমলে নবীগঞ্জে সাধারণ মানুষ ও তাদের মতের বাইরের নেতাকর্মীদের নানাভাবে নির্যাতন ও হয়রানি করেছে। গতকাল রোববারও তারা হাসিনার অডিও বার্তা শুনে সহিংসতার চেষ্টা চালায়। এসময় স্থানীয় উত্তেজিত জনতা তাদের আটক করে হেনস্তা করে পুলিশে সোপর্দ করেছে।
রোববার দুপুর ও সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ শহরের নতুন বাজার মোড়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের আটকের ঘটনা ঘটে। তবে নবীগঞ্জ উপজেলার রাজনৈতিক ইতিহাসে কোন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক দলের নেতাদের আটক করে হেনস্তা করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করার ঘটনা নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেছেন সাধারণ মানুষ।
আটক শাহ রিজভী আহমেদ খালেদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুর্শি গ্রামের শাহ মোছন আলীর ছেলে। এছাড়া খালেদ নবীগঞ্জ শহরের গোল্ডেন প্লাজা মার্কেটের আয়শা ভেরাইটিজ স্টোরের সত্ত্বাধিকারী। অপর আটক গৌরমনি সরকার পৌরসভার জয়নগর এলাকার ধরনি সরকারের ছেলে ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা।
স্থানীয়রা জানান, রাজধানী ঢাকার নূর হোসেন চত্বরে আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচির ডাকে সারাদেশে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করার ডাক দিয়ে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ শহরের নতুন বাজার মোড়ে রোববার সকাল থেকে আলাদা আলাদা বলয়ের বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়।
নবীগঞ্জ শহরের বিভিন্ন সড়কে পৃথক পৃথক ভাবে আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে নানা শ্লোগানে মিছিল ও শো-ডাউন দেয়া হয়। দুপুরে আওয়ামী লীগ নেতা গৌরমনি সরকার (৫৫) নবীগঞ্জ শহরে নতুন বাজার এলাকায় আসলে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মোশাহিদ আলম মুরাদের নেতৃত্বে যুবদল-ছাত্রদলের একটি অংশ গৌরমনিকে আটক করে। পরে গৌরমনি সরকারকে নবীগঞ্জ থানার একদল পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নবীগঞ্জ শহরের গোল্ডেন প্লাজা মার্কেটের আয়শা ভেরাইটিজ স্টোরের সত্ত্বাধিকারী শাহ রিজভী আহমেদ খালেদকে আটক করা হয়। পরে খালেদকেও হেনস্থা করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন যুবদল ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। দুই নেতাকে আটকের পর হবিগঞ্জের রিপন শীলকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে খালেদ ও গৌরমনির সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে দাবি করে যুবদল ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগ নেতাদের পরিবারের দাবি, নবীগঞ্জ শহরের গোল্ডেন প্লাজাস্থ আয়শা ভেরাইটিজ স্টোর নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময় খালেদকে আটক করা হয় এবং গৌরমনি নবীগঞ্জ বাজারে সবজি কিনতে আসলে তাকে আটক করা হয়। তারা কোন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে যাননি।
অপরদিকে যুবদল-ছাত্রদলের দাবি, পলাতক শেখ হাসিনার নির্দেশে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচিতে হামলার চেষ্টাকালে সাধারণ জনগণ ও ছাত্রজনতা আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
এ দিকে এ ঘটনার পর থেকে আওয়ামীলীগ পন্থি নবীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেক আওয়ামী লীগ পন্থি ব্যবসায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী রেখে আত্মগোপনে চলে যান।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন জানান, আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে বিএনপি-যুবদলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আটক করে আমাদের খবর দেয় পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। তিনি বলেন, যারা আটক করেছে তারা অভিযোগ করেছে হবিগঞ্জের রীপন শীল হত্যা মামলায় তারা জড়িত ছিল। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল হক খান জানান, নবীগঞ্জের আওয়ামী লীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে বলে এলাকাবাসী আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। তাদের প্রাথমিকভাবে আটক করা হয়েছে। পরে মামলার বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।