আনিসুর বুলবুল : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আজ তারেক রহমানের জন্মদিন পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ২০ নভেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে দল ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের কোনো অনুষ্ঠান পালন না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ রয়েছে এতে। প্রশ্ন উঠছে, কেন তারেক রহমানের জন্মদিন পালনে এমন নিষেধাজ্ঞা? এর পেছনে কি কোনো রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে, নাকি বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের ইঙ্গিত?
নেতার জন্মদিন উদযাপনে নতুন ভাবনা
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতাদের জন্মদিন উদযাপন, কেক কাটা, ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো, এমনকি বড় আকারে মিছিলের মাধ্যমে আবেগ প্রকাশের বিষয়টি পরিচিত দৃশ্য।
তবে এ ধরনের আয়োজন দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কতটা প্রাসঙ্গিক বা ফলপ্রসূ, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপির মতো বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল তাদের নেতাদের জন্মদিনের উদযাপন থেকে সরে আসা নতুন একটি উদাহরণ স্থাপন করছে। বিএনপির এই পদক্ষেপ ইঙ্গিত করছে যে, তারা হয়তো রাজনীতিকে ব্যক্তিপূজার চর্চা থেকে বের করে আনার পথে অগ্রসর হচ্ছে। যদি এটাই তাদের নতুন কৌশল হয়, তাহলে এটি দলের ভাবমূর্তি ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে।
শৃঙ্খলা ও লক্ষ্যবোধের প্রতি মনোযোগ
বিএনপির এই সিদ্ধান্ত হয়তো তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের প্রমাণ। বর্তমান সময়ে দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য রয়েছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক সংকট এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। এ ধরনের সময় যখন দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে, তখন জন্মদিনের মতো ব্যক্তিগত উদযাপনে শৃঙ্খলা আনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বিএনপি নেতাদের হয়তো মনে হচ্ছে, দলকে ব্যক্তিপূজার বাইরের জায়গায় নিয়ে আসা প্রয়োজন, যেখানে নেতাকর্মীরা ব্যক্তিগত উদযাপনের চেয়ে দলের মূল লক্ষ্য অর্জনের দিকে মনোযোগী হবেন।
এমন সিদ্ধান্ত বিএনপির শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধকে প্রাধান্য দিতে চাইছে বলে প্রতীয়মান হয়।
ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক সংকেত
যদি বিএনপি সত্যিই জন্মদিন পালনসহ ব্যক্তিপূজামূলক চর্চাগুলো থেকে বেরিয়ে এসে দেশের জন্য কাজ করা ও জনস্বার্থে প্রাসঙ্গিক রাজনীতি করার উদ্যোগ নেয়, তবে এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ধারায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এই পরিবর্তন দেশের রাজনীতিকে আরো দায়িত্বশীল ও জনবান্ধব করে তুলতে পারে। এর ফলে দেশের তরুণ প্রজন্ম রাজনীতিতে নতুন অনুপ্রেরণা খুঁজে পাবে এবং দলীয় কর্মীরা জনকল্যাণে আরো নিবেদিত হবেন।
বিএনপির উদাহরণ ও অন্যান্য দলের জন্য বার্তা
বিএনপির এই সিদ্ধান্ত দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও অনুপ্রাণিত করতে পারে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে ব্যক্তিপূজা ও অনুষ্ঠানমুখী রাজনীতির চর্চা রয়েছে। যদি এই ধারা পরিবর্তিত হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো ব্যক্তিপূজা নয় বরং নীতি ও আদর্শকে সামনে রেখে রাজনীতি করতে শুরু করে, তবে দেশের রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক ও গঠনমূলক পরিবেশ তৈরি হতে পারে।
শেষকথা
তারেক রহমানের জন্মদিন পালনের নিষেধাজ্ঞা বিএনপির জন্য শুধুই একটি সিদ্ধান্ত নয় বরং এটি দলের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের ইঙ্গিত হতে পারে। জন্মদিনের মতো ব্যক্তিগত উদযাপনের পরিবর্তে দলীয় ঐক্য, শৃঙ্খলা এবং মূল আদর্শকে প্রাধান্য দিয়ে একটি দায়িত্বশীল দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে বিএনপি। এটি ভবিষ্যতের রাজনীতির জন্য একটি শুভ সংবাদ হতে পারে। বাংলাদেশে গঠনমূলক ও জনকল্যাণমুখী রাজনীতি গড়ে তুলতে এটি একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
-আনিসুর বুলবুল, উপবার্তা সম্পাদক, কালের কণ্ঠ