এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের আলোচিত উপপরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ঘুষের টাকা গুনে পকেটে নেওয়ার অভিযোগ নিশ্চিত হওয়ায় তাকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাতে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব কালের কণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ভিডিও ফুটেজ দেখা এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে। তাই সরকারি চাকরিবিধির শৃঙ্খলা-আইনের ধারায় উপপরিদর্শক মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিশ্চিত হওয়া গেছে।
যে কারণে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
পুলিশ সুপার আরো জানান, এটি অন্যদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। যাবে ভবিষ্যতে এই দিকে কেউ পা না বাড়ায়। তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আরো কোনো অভিযোগ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে সেই কমিটি। কমিটির প্রধান হলেন পুলিশের সংশ্লিষ্ট সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ কুমার দে। অন্য দুই সদস্য হলেন জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ডিআইওয়ান ও পুলিশের কোর্ট পরিদর্শক। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে এই কমিটি পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিবের কাছে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, এসআই মাহফুজুর রহমান স্থানীয় একটি দোকানের চেয়ারে খোশমেজাজে বসে আছেন। তিনি বলছেন, ‘১০ হাজার টাকা কইছি।’ সামনে বসে থাকা এক ব্যক্তি বলছেন, ‘সবুরে মেওয়া ফলে।’ পুলিশ কর্মকর্তা তার দিকে মনোযোগ দিয়ে আঙুল উঁচিয়ে বলেন, ‘এক টাকাও কম হইত ন।’ সামনে বসে থাকা ব্যক্তি বলেন, ‘বস, একটু বসেন।
’ এসআই তখন মুচকি হাসেন। মুখে আলতো করে হাত বুলিয়ে বলেন, ‘কাম শেষ, এখন টিয়া।’ এ সময় আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘মাহফুজ ভাই, আসলে যে মুরুব্বি, সে বেকার মানুষ তো জানেন।’
এ সময় এসআই মাহফুজ হেসে হেসে বলেন, ‘বেকার না আকার।’ তখন দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘যাই হোক তাঁর ছেলেমেয়ে বাদ, তিনি বেকার মানুষ। তিনি আগে ড্রেজার ব্যবসাটেবসা করতেন। অনেকের কাছে টাকা পাওনা ছিল। এর আগে যাই দিছি দেখছেননি। তারে একজন দিয়ে গেছে, তার আবার ওষুধ কিনা লাগে, এরপর এই ঝামেলা লাগি গেছে।’এ সময় মাহফুজ বলেন, ‘দেন দেন।’ তখন প্রথম ব্যক্তি বলছেন, ‘গরিব মাইনসের লাগি একটু দিলটা নরম করেন।’
এরপর মাহফুজ আরেক ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে দ্বিতীয় ব্যক্তির দিকে হাত এগিয়ে দিলে ওই ব্যক্তি মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে মাহফুজের হাতে দেন। ওই ব্যক্তি টাকা দিতে দিতে বলেন, ‘আমি না পারতে এ পর্যন্ত আসলাম। বিশ্বাস করেন। আমি আরেক দিন এসে ডিটেইলস বলব, তখন বুঝবেন। না হলে আমি আপনার কাছে আসতাম না। যদি অফিশিয়ালি সলিউশন করতে পারতাম।’
এ সময় প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘টাকা গইন্নেন না, গইন্নেন না।’
তখন মাহফুজ বলেন, ‘টাকা গুনে নেওয়া সুন্নত।’ প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘রুম অন্ধকার, আল্লাহ কইছে মাইনসেরে দেহাই কিল্লাই।’ এ সময় মাহফুজ মুচকি হাসতে হাসতে টাকা গুনছেন কয়েকবার। দ্বিতীয় ব্যক্তি বলছেন, ‘চা খাবেন?’ মাহফুজ জবাব দেন, ‘পরে খাব’। এই বলে টাকা হাতের মুঠোয় নিয়ে বের হয়ে যান।
কয়েকদিন আগে হাজীগঞ্জ বাজারের একটি দোকানে সিসিটিভির ফুটেজে এমন চিত্র ধরা পড়ে। এদিকে, ঘুষ খাওয়ার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে বলেন, এটি তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র। তবে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমানের সামনে ফুটেজ উপস্থাপন করা হলে চুপসে যান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানায় কর্মরত অবস্থায় বিভিন্নজনকে রাজনৈতিক মামলায় ফেলে মোটা অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্য করেন মাহফুজুর রহমান। কিন্তু ওই থানা থেকে হাজীগঞ্জে এসেও পুরনো স্বভাব পরিবর্তন করেননি তিনি।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব জানান, ভিডিও ফুটেজ দেখে এরই মধ্যে উপপরিদর্শক মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাকে হাজীগঞ্জ থানা থেকে প্রত্যাহার করে চাঁদপুর পুলিশ লাইনস এ সংযুক্ত করা হয়েছে। তা ছাড়া বিভাগীয় ব্যবস্থা হিসেবে জ্যেষ্ঠ একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত শুরু করা হচ্ছে।
৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ফরিদগঞ্জ থানা থেকে হাজীগঞ্জ থানায় বদলি করা হয় উপপরিদর্শক মাহফুজুর রহমানকে। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। তবে গত দেড় মাস ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) বদলি হলেও অদৃশ্য খুঁটির জোরে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানা ছাড়েননি তিনি। আর এখন চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়ায় কর্মস্থল ছাড়তে হচ্ছে মাহফুজুর রহমানকে।