ঢাকা : বৃক্ষমানব আবুল বাজনদারের প্রথম অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। তার ডান হাতের দুই আঙ্গুলে অস্ত্রোপচারের কথা থাকলেও পুরো পাঁচটি আঙ্গুলেরই অস্ত্রোপচার করা হয়। কেটে ফেলা হয়েছে তার ডান হাতে গজানো ‘শিকড়’র মতো আঁচিলগুলো। এতে তিনি তার আঙুলগুলো নাড়াতে পারছেন।
শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের অপারেশন থিয়েটারে আবুলের অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচার শেষে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে তাকে।
ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম, অধ্যাপক রায়হানা আউয়াল ও অধ্যাপক মো. সাজ্জাদ খন্দকারসহ ৯ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল তার অস্ত্রোপাচার সম্পন্ন করেন। তারা ছাড়াও এ অপারেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন যৌন ও চর্ম বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। এসময় উপস্থিত ছিলেন বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।
অস্ত্রোপচার শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. আবুল কালাম জানান, প্রথমে আবুলের ডান হাতের দুটি আঙুল (বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী) থেকে গাছের মতো গজানো শিকড় কাটার কথা ছিল। পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় তার ডান হাতের পাঁচটি আঙুলেরই অস্ত্রোপচার করা হয়। সফলভাবে তার অস্ত্রোপচার হয়েছে বলে জানান তিনি।
চিকিৎসকরা বলেন, জটিল এ অপারেশন ছুরি দিয়ে করা সম্ভব নয়। তাই ডায়োথার্মিক মেশিনের মাধ্যমে তার অস্ত্রোপচার করা হয় এবং এলএলটি প্রযুক্তিতে ড্রেসিং করা হয়।
অধ্যাপক আবুল কালাম বলেন, অপারেশনের সময় তাকে পুরো অজ্ঞান করা হয়নি। তার হাতটিই শুধু অবশ করা হয়। একবার অবশ করলে দেড় ঘণ্টা অবশ থাকে। কিন্তু মূল অস্ত্রোপচারে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তাই তার হাত দুবার অবশ করা হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে অস্ত্রোপচার শুরু করা হয়। শেষ হয় বেলা সাড়ে ১২টায়।
তিনি বলেন, আশা করছি ছয় মাসের মধ্যে তাকে পুরোপুরি সুস্থ করা সম্ভব হতে পারে। তবে এর থেকে বেশি সময়ও লাগতে পারে। আগের বৃক্ষমানবকে ১৪ বার অপারেশন করা হলেও আবুলের আরো কম অস্ত্রোপচার দরকার হবে।
এসময় তিনি বিত্তবানদের কাছে আবুলের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আবুলের স্ত্রী, মেয়ে মা-বাবা রয়েছে। তাদের বেঁচে থাকার জন্য অর্থের প্রয়োজন। বিত্তবানরা যদি একটু সহযোগিতা করেন তাহলে আবুলের পরিবার একটু ভালো থাকতে পারবে।
অস্ত্রোপচারের সময় আবুলের বাবা মানিক বাজানদার, মা আমেনা বেগম, স্ত্রী হালিমা আকতার ও তিন বছর বয়সী মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস উপস্থিত ছিলেন। আবুলের সুস্থতার জন্য তারা দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
২০ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম