এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : কারামুক্ত হয়ে সন্তানদের বুকে জড়িয়ে নিলেন রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া গোপালগঞ্জে কোটালিপাড়ার সেই দিনমজুর বাবা জামাল মিয়া। মা হারা সন্তানদের আর্তনাদে কেঁপেছে রাষ্ট্র এবং বিচারবিভাগ। খুলেছে জেলের তালা। এক সপ্তাহ পর বাবাকে কাছে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা বড় ছেলে সাজ্জাদ ও বড় মেয়ে ফারিয়া। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর গোপালগঞ্জের সেই দিনমজুর জামাল মিয়ার জামিন দেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরের গোপালগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ফিরোজ মামুন জামাল মিয়াকে জামিন দেন। এদিন বিকেলে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্ত হন তিনি।
দিনমজুর জামাল মিয়ার পক্ষে জামিন আবেদন করেন গোপালগঞ্জ জেলা লিগ্যাল এইড এর আইনজীবী অ্যাডভোকেট শারমিন জাহান।
জেলা লিগ্যাল এইড এর আইনজীবী অ্যাডভোকেট শারমিন জাহান বলেন, জেলা লিগ্যাল এইডের পক্ষ থেকে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার দিনমজুর জামাল মিয়ার জামিন আবেদন করি। আদালতে বিচারক আমাদের কথা বলার আগেই নথি হাতে পেয়ে জামিন মঞ্জুর করেন। হয়ত বিচারক আগে থেকেই জামাল মিয়ার চার বাচ্চার সংবাদটির বিষয়ে অবগত ছিলেন। মানবিক দিক থেকে তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। এতে করে ওই চার বাচ্চা ফিরে পেল তাদের বাবাকে।
দিনমজুর জামাল মিয়া বলেন, আমি এক সপ্তাহ জেল খেটে যে কষ্ট পেয়েছি, আমার সন্তানদের বুকে নিয়ে তার সব দূর হয়ে গেছে। আমার সন্তানদের আর্তনাদ আমাকে জেলখানা থেকে বের করে এনেছে। এখন একটাই লক্ষ্য তাদের যেন মানুষের মত মানুষ করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা পোস্টসহ যেসব গণমাধ্যম আমার এবং আমার সন্তানদের পাশে দাড়িয়েছে, আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এ ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হলো দেশে মানুষের কথা বলার এখনো একটি মাধ্যম আছে।
জামাল মিয়ার বড় ছেলে সাজ্জাদ বলেন, আমার বাবাকে কাছে পেয়ে আমাদের অনেক ভালো লাগছে। আমার বাবা না থাকায় আমরা তিনদিন না খেয়ে ছিলাম। আমাদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর আমারা অনেক সাহায্য পেয়েছি। আমার বাবাকে ছাড়িয়ে আনতে সাংবাদিকরা অনেক কষ্ট করেছেন।
জামাল মিয়ার বড় মেয়ে ফারিয়া বলেন, অনেকদিন পর বাবার কোলে ঘুমায়ছি। আমার খুব ভালো লাগছে। আমার বাবা আমাদের কাছে থাকুক।
স্থানীয় মিরাজ নামে এক যুবক বলেন, জামাল মিয়ার পাশে সাংবাদিকরা যেভাবে দাঁড়িয়েছেন, এটি ইতিহাস। আমরা ভাবিও নাই জামাল মিয়াকে ছাড়াতে সারা দেশের মানুষ দাবি তুলবেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে সাংবাদিকদের জন্য।
এর আগে, বৃহস্পতিবার সকালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এই ঘটনা নজরে নিয়ে শিশুদের দেখভাল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্থানীয় সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও গোপালগঞ্জের ডিসিকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। আদালতে এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনেন আইনজীবী ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ, ব্যারিস্টার নাজিয়া কবির ও ব্যারিস্টার সিফাত মাহমুদ শুভ।
হাইকোর্টের নির্দেশের পরই জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে জামাল মিয়ার চার বাচ্চাদের দেখতে ছুটে যায় কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার। এ সময় চার বাচ্চা বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীসহ নগদ টাকা দেওয়া হয়।
সেখানে ইউএনও শাহিনুর আক্তার বলেন, জেলা প্রশাসক কামরুজ্জামান বিষয়টি অবগত আছেন। তার অনুমতিক্রমে আজ আমরা প্রাথমিকভাবে সাজ্জাদসহ তাদের চার ভাই বোনের জন্য দশ হাজার টাকা ও কিছু শিশু সামগ্রী নিয়ে আসছি। একটা কথাই বলবো, সাজ্জাদ এবং তার বোনদের পাশে উপজেলা প্রশাসন সব সময় আছে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (০৮ নভেম্বর) দিনগত রাতে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ জামাল মিয়াকে বাড়ি থেকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। এরপর তাকে গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশ পরদিন শনিবার (০৯ নভেম্বর) জামাল মিয়াকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায়।