এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক: মা ইলিশ রক্ষা ও নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে নদী ও সাগরে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে এখনো জেলেদের জালে ধরা পড়ছে মা ইলিশ। আর এতে অবাক সবাই।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বুড়াগৌরাঙ্গ নদী থেকে ইলিশ ধরে নিয়ে আসা ট্রলারে এ চিত্র দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে মৎস্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘নদীতে এখনো ডিম ছাড়ছে মা ইলিশ। তাদের ধারণা, নিষেধাজ্ঞার সময় আরো বেশি হওয়া দরকার। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় এগিয়ে আনা দরকার। কিন্তু মৎস্য দফতর বলছে, মা ইলিশের প্রজননের জন্য এ নিষেধাজ্ঞাই উপযুক্ত সময়। এ সময়ই মা ইলিশ বেশি পরিমাণ ডিম ছাড়ে।’
জানা গেছে, মা ইলিশ রক্ষায় সরকার উপকূলের ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় গত ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয়। তবে নিষেধাজ্ঞার পরেও জালে ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ায় কিছুটা হতবাক উপকূলীয় জেলেরা। এতে ইলিশ উৎপাদন কমতে পারে বলে ধারণা করছেন জেলেরা।
বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে মাছ শিকার করা জেলে ইব্রাহীম মৃধা বলেন, ‘শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মাছের পেটে এখনো ডিম আছে। আরো কিছুদিন নিষেধাজ্ঞা থাকলে ইলিশ মাছ বেশি ডিম ছাড়তে পারত।’
পাইকারি ব্যবসায়ী মো: বেল্লাল খান বলেন, ‘এখনো প্রায় ইলিশ মাছের পেটে ডিম আছে। কিন্তু ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার শেষে জেলেদের জালে মা ইলিশের ছড়াছড়ি। মা ইলিশের পেটে ডিম থাকায় বেশি সাঁতার কাটতে না পারায় দুর্বল হয়ে জেলেদের জালে আটকে যায়। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় বেশি হলে মা ইলিশ আরো ডিম ছাড়তে পারবে বলে আমি মনে করি।’
এ ব্যাপারে মেরিন ফিশারিজ অফিসার এস এম শাহাদাত হোসেন রাজু বলেন, ‘আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমা ছিল ইলিশের উপযুক্ত প্রজনন মৌসুম। এ সময় ডিম ছাড়ার জন্য ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মা ইলিশ গভীর সমুদ্র হতে নদীর মিঠা পানিতে চলে আসে। তাই মা ইলিশের প্রজনন ঘটাতে পূর্ণিমার আগে ১৮ দিন ও পরে চার দিনসহ মোট ২২ দিন ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা ছিল। আমরা বলছি না যে, নিষেধাজ্ঞাকালীন ইলিশে সব ডিম ছাড়বে। ওই সময়টা ছিল বেশি পরিমাণে ডিম ছাড়ার সময়। তবে ২২ দিনের বেশি সময় ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে কিনা এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন।’
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যাকুয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ইলিশ মাছ ১২ মাস ডিম দিয়ে থাকে কিন্তু ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় মা ইলিশ রক্ষার সময় বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়। বর্তমান সময়ের জাটকা ইলিশ আহরণে বিরত থাকলে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে যাবে। তাই সংশ্লিষ্টদের উচিত মা ইলিশ রক্ষার পাশাপাশি জাটকা ইলিশ রক্ষা করা এবং অবৈধ জাল ব্যবহার বন্ধ করা।’