এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, ‘বিগত ১৬ বছরে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত করেছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ভারত এনে দিয়েছে। ১৬ ডিসেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির টুইটার পোস্টে আমরা দেখেছি- তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ হিসেবে প্রেজেন্ট করছেন।’
আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের পলোগ্রাউন্ডের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক গোল টেবিল বৈঠকে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য প্রতিরোধে, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সমস্যার সমাধান এবং বৈষম্যহীন কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর।
বৈঠকে সারজিস বলেন, ‘তারা (ভারত) ভেতরে ভেতরে যেটা বিশ্বাস করত এত দিন পর এসে সেটা প্রকাশ করছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের ওপরে এ বিশ্বাসটাকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বোঝাতে হবে কিভাবে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করার অন্তর্নিহিত ইচ্ছা সেটার বহিঃপ্রকাশ ১৯৭১ সালে ভারত করেছিল। শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, নিজের সেভেন সিস্টারকে সেভ করার জন্য কিভাবে ভারত এই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে।
সারজিস বলেন, ‘আমরা যে যার জায়গা থেকে পারি শিক্ষাবিদ, সিভিল সোসাইটির অংশ, রাজনীতিবিদ ও ধর্মীয় যারা আছেন, আমরা একাত্তর ও তার পরবর্তী সময় ভারতের যে ভূমিকা সেসবের মধ্যে কোনগুলো ভারতের এবং কোনগুলো আমাদের স্বার্থে ছিল এগুলো যাতে লেখা, কথা ও চিন্তায় তুলে ধরি।’
শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত পুরো বাংলাদেশের মানুষের সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে উল্লেখ করে সারজিস বলেন, ‘তাকে দেশে পাঠিয়ে বিচার মঞ্চে ফিরিয়ে দিতে হবে। ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ ভারতকে বাংলাদেশের মনিবের কাতারে নিয়ে গিয়েছে। রক্তপিপাসু খুনি শেখ হাসিনার খুনের পিপাসা এখনো শেষ হয়নি। বিন্দুমাত্র অনুশোচনা না করে এই মহিলা এখনো খুনের কথা বলে আসছেন।’
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) স্বেচ্ছায় দাসত্ব বরণ করেছে শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষমতাকে নিরাপদ করার জন্য। তাদের কাছে দেশ, দেশের সার্বভৌমত্বের চেয়ে ক্ষমতার মূল্য বেশি ছিল। যে কোনো মূল্যে তারা ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল, যার একটি প্রমাণ খুনি শেখ হাসিনা তার একটি অডিও রেকর্ডে নিজেই দিয়েছেন।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ না করে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করা নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলে তা দেশবাসী মেনে নেবে না। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলে তা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক।’
তিনি বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ব্যানারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমরা ন্যায়ের পক্ষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলাম, কিন্তু এখন আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। আমরা একটি সুন্দর দেশ গড়তে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে বার বার বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করে আসছি।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামের আমির শাহজাহান চৌধুরী চৌধুরী বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম হুমকির সম্মুখীন। ভারত ৫৩ বছর নয় ৮৩ বছর পর্যন্ত ধ্বংসের চক্রান্ত করছে। ভারতের সঙ্গে ১৭ চুক্তি করেছে আওয়ামী লীগ। এই ১৭ চুক্তি কী আমরা বাংলাদেশের মানুষ তা জানি না। আরো অন্যান্য উপ চুক্তি করেছে। আওয়ামী লীগ আধিপত্যবাদীদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওয়াদা দিয়ে তা বাস্তবায়ন করে না। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে এ আধিপাত্যবাদ থেকে উদ্ধার হতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম নগর সভাপতি মুহাম্মদ জান্নাতুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় বৈঠকে আরো বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, মাহবুবুর রহমান, হেফাজতে ইসলামের নগর সভাপতি তাজুল ইসলাম, নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফ উদ্দিন মাহদী, বিএনপির নগর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সম্পাদক এস এম সরোয়ার আলম, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিমুদ্দিন চৌধুরী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ, খান তালাত মোহাম্মদ রাফি, খেলাফত মজলিসের নগর সভাপতি খুরশিদ আলম, গণ অধিকার পরিষদ নগর সভাপতি শাহ আলম ও নেজামে ইসলাম পার্টির নগর সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।