মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৩:৫০:৫৪

আত্মজীবনীতে নেই বিদিশা রওশন নটিগার্ল

আত্মজীবনীতে নেই বিদিশা রওশন নটিগার্ল

বেলায়েত হোসাইন : হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বাংলাদেশের রাজনীতির বহুল আলোচিত এক চরিত্র। এবার আত্মজীবনী নিয়ে আসছেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। তার আত্মজীবনীর মোড়ক উন্মোচন হবে আজ। নাম-‘আমার কর্ম, আমার জীবন।’

তবে এই বইতে নানা স্পর্শকাতর বিষয় এড়িয়ে গেছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার জীবনের বহুল আলোচিত নানা অধ্যায় নিয়ে থেকেছেন নীরব। বিদিশা-জিনাত অধ্যায় নিয়ে কিছু লিখেননি তিনি। প্রায় সাড়ে ৭শ’ পৃষ্ঠা’র বইটিতে এমন আরও অনেক তথ্য এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

বইতে জিয়াউর রহমান হত্যার জন্য জেনারেল মঞ্জুরকে দায়ী করেন এরশাদ। এছাড়া, তার ক্ষমতা গ্রহণ ও পদত্যাগ নিয়েও লিখেছেন। রওশনের সঙ্গে বিয়ে, তাকে লেখা চিঠি ও প্রথম প্রেম নিয়ে লিখেছে তিনি। বইটিতে বেশিরভাগ পৃষ্ঠাজুড়ে স্থান পেয়েছে তার আমলে নানা উন্নতি ও উদ্যোগ গ্রহণের কথা।

‘জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ড’ শীর্ষক অধ্যায়ে এরশাদ লিখেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা ও ৪ নেতা হত্যার পর ১৯৮১ সালের ৩০শে মে জাতির কপালে আরেকটি কলঙ্কের চিহ্ন এঁকে দেয়া হয়। চট্টগ্রামের সেনানিবাসে জিওসি মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর বীর উত্তমের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একদল বিপদগামী অফিসারের হাতে শাহাদত বরণ করেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।

প্রথম দুটি হত্যাকাণ্ডের (বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা) সময় আমি দিল্লিতে ছিলাম। কিন্তু জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সময় আমি ঢাকাতেই ছিলাম। তখন সেনাবাহিনীর চিফ অব আর্মি স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। এরশাদ আরও উল্লেখ করেন জিয়ার আগ্রহেই আমার পদোন্নতি হয়। তিনি আমাকে বিশ্বাস করতেন।

৩ বছর ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ হিসেবে বিশ্বাস ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় ১৯৭৮ সালের ১লা ডিসেম্বর তিনি আমাকে চিফ অব আর্মি স্টাফ হিসেবে পদোন্নতি দেন। ৩০শে মে ভোর চারটায় আমি জিয়াউর রহমান হত্যার দুঃসংবাদটি জানতে পারি।

আরেকটি অধ্যায়ে এরশাদ লিখেন, প্রেসিডেন্ট জিয়ার হত্যাকারী ছিলেন জেনারেল মঞ্জুর। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের করলেন না। আমাকে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় করে দেয়ার উদ্দেশ্যে দীর্ঘ ১৪ বছর পর ওই হত্যাকারীকে হত্যার দায় আমার ওপর চাপিয়ে দিলেন।

ক্ষমতা দখলের ঘটনা প্রসঙ্গে এরশাদ লিখেন, আমি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের আহ্বানে সংবিধান রক্ষায় ক্ষমতা গ্রহণ করি। এরশাদ তার পতনকে পদত্যাগ উল্লেখ করে লিখেন, প্রধান বিচারপতির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে কতিপয় বিরোধী দল অনমনীয় ভাব পোষণ করা অব্যাহত রাখলেন। আমি গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।

বইতে ‘প্রথম ভালো লাগার অনুভূতি’ নামক অধ্যায়ে এরশাদ তার প্রথম প্রেমের কথা উল্লেখ করেন। তিনি লিখেন, আমি তখন কারমাইকেল কলেজে বি.এ শেষ বর্ষে পড়ি। আমার নিচের ক্লাসের একটি মেয়ে একদিন আমাকে চিঠি লিখেছিল। জীবনে প্রথম কোনো মেয়ের হাতের চিঠি। তাও আমাকে লেখা। একজন সুন্দরী তরুণীর হাতের কোমল স্নিগ্ধ স্পর্শ লেগে আছে যে চিঠির পাতায়।

একি কম কথা? অদ্ভুত ভালো লাগার একটা অনুভূতি আমার সমস্ত শরীর জুড়িয়ে দিয়ে চলে গেল। এরশাদ আরও লিখেন, মেয়েটিকে বিয়ে করা হয়নি। বিয়ে করলে হয়তো আমার জীবনের মোড় অন্যদিকে ঘুরে যেতো। আজ এই পরিচয়গুলো হতো না।

আমার বিয়ে নামক অধ্যায়ে রওশন প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন এরশাদ। তিনি বলেন, বিয়ের পর সংসার করার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল আরও এক বছর। রওশন ওদের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করছিল। আমি আজ এখানে কাল ওখানে।

এরশাদ বইতে আরও লিখেন, সেসময় স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের কাছে চিঠি পাঠাতো। আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। চিঠির প্রথমে রওশনকে অনেক কিছু সম্বোধন করতাম। তারমধ্যে যেগুলো মনে আছে, হৃদয়ের রানী, হৃদয়ের ধন, ওগো মোর জীবন সাথী, খুশি বউ, খুশি পাগলী, সোনা বউ, খুকু বউ, ওগো দুষ্টু মেয়ে, নটি গার্ল, বিরহিনী।

তার ডাকনাম ডেইজীকে ডেজু, ডেজুমনি, ডেজুরানী বলে সম্বোধন করতাম। আর চিঠির শেষে আমার নামের জায়গা লিখতাম, পেয়ারা পাগল সাথী, বড্ড একাকী একজন, প্রেম-পূজারি, বিরহী। -এমজমিন
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে