এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : মাগুরা সদর উপজেলার মঘী ইউনিয়নের বড়খড়ি গ্রামের তরুণ মহাইমিন আলম। ২০১৮ সালে নিজ বাড়িতে ছোট্ট একটি ঘরে মাত্র ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে মাশরুম চাষ শুরু করেন। পরিবারের সহযোগিতা ও অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রথম বছরেই তিনি লাভ করেন এক লাখ টাকা।
এখন মহাইমিনের প্রতি মাসে আয় এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা। এতে শুধু তিনিই স্বাবলম্বী হননি ফিরেছে পরিবারের স্বচ্ছলতা। সেই সঙ্গে স্থানীয় অনেকের কাজের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। মহাইমিন এখন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা। তিনি ২০২১ সালে মাগুরার সদর উপজেলার মঘী ইউনিয়নের সত্যপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন।
তিনি বলেন, পরিবারের অভাব অনটনের কারণে বেশি পড়াশোনা করতে পারিনি। পারিবারিকভাবে বাবা কৃষি কাজ করতেন। ২০১৮ সালে বাড়ির পাশে মাশরুম উদ্যোক্তা বাবুল আক্তারের কাছ থেকে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের সঞ্চয়ের টাকা ও ধারদেনা করে ছোট্ট একটি ঘরে মাশরুম চাষ শুরু করি। ১০০০ মাশরুম বীজ দিয়ে শুরু করেছিলাম। দুই মাসের ব্যবধানে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করে শুরু হয় আমার স্বপ্ন যাত্রা।
৬ বছরের ব্যবধানে আমার এই ব্যবসা বড় হয়েছে। এখন আমার খামারে ২৫ হাজার স্পন বা মাশরুম বীজ থেকে উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি মাসে গড়ে ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা আয় হয়। সাংসারের সব ব্যয় মিটিয়েও এখন আমার মাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা থাকে। আমার সাফল্য দেখে এখন অনেকেই আমার কাছ থেকে মাশরুম চাষের কৌশল শিখতে আসছেন। ইতিমধ্যে আমার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ৮ থেকে ১০ জন মাশরুম চাষ শুরু করেছেন। আমার আশা আছে আগামীতে আমি একটি মাশরুম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করে এলাকার বিশেষ করে পুরুষ ও নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলব। আমার প্রথম উৎপাদিত মাশরুম এলাকায় অল্প পরিমাণ বিক্রি হত। এখন অনলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম-ঢাকা-খুলনা-সিলেটসহ সারাদেশেই বিক্রি করছি।
মাশরুম চাষে লাভের উপার্জন দিয়ে ৬ বছরের ব্যবধানে মহাইমিন ২৫ শতাংশ জমি কিনেছেন। ২১ লাখ টাকায় ৬টি গরু কিনেছেন, ৫ লাখ টাকায় মাশরুম চাষের ঘর করেছেন, ল্যাবরেটরিসব অন্যান্য সামগ্রীতে ১৮ লাখ টাকা ব্যয় করছেন।
মহাইমিন বলেন, প্রতিদিন ৪শ কেজি থেকে ৫শ কেজি মাশরুম উৎপাদন হয়। যা সমগ্র বাংলাদেশে বিক্রি করি। বর্তমানে আমার অধীনে চাকরি করেন ১৫ জন নারীকর্মী।
মহাইমিনের বাবা মো. দিদারুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিকে মাশরুম নিয়ে আমার খুব একটা আগ্রহ ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন দেখলাম মাশরুম বেশ লাভজনক, তখন থেকে ব্যবসার ফাঁকে ফাঁকে ছেলেকে সময় দিতে শুরু করলাম। এখন দুজনের আয়ে ভালোভাবে সংসার চালিয়ে সঞ্চয় করছি। আমাদের এলাকায় মাশরুমের খুব একটা চাহিদা না থাকলেও অনলাইনের মাধ্যমে আমাদের সব মাশরুমই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
মাগুরা সদর উপজেলার মঘী ইউনিয়নের তন্ময় নামের নতুন উদ্যোক্তা বলেন, মহাইমিন আলম ভাইয়ের মাশরুম চাষে লাভবান হওয়া দেখে তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ নিয়ে গত বছর আমি ছোট্ট একটি ঘরে মাশরুম চাষ শুরু করেছি। এখন আমি দুইশ স্পন বা মাশরুমের বীজ দিয়ে চাষ করছি। মাসে আমার ৪-৫ হাজার টাকা ইনকাম হচ্ছে। আশা করছি আগামী বছর এক হাজার স্পন দিয়ে মাশরুম চাষ করব।
মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, মহাইমিনকে আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে আসছি। তার এ সাফল্য দেখে এখন এলাকার অনেক নারীই মাশরুম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিশেষ করে নারীদের প্রাধান্য দিয়ে মহাইমিন আলম নিয়মিত মাশরুম চাষের কলা-কৌশল প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আশা করছি তার সফলতার হাত ধরে ও পরামর্শ নিয়ে অনেক নারী-পুরুষও স্বাবলম্বী হয়ে কৃষি অর্থনীতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।