এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কনটেইনারে করে মূলত পেঁয়াজ আমদানি হয় ভারতের বিকল্প দেশ পাকিস্তান, মিসর, মায়ানমার, চীন, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক ও থাইল্যান্ড থেকে। এখন আমদানিকারকরা আমদানি অনুমতি নিলেও এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছেন না। ফলে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পণ্যটির দাম কেজিতে বেড়েছে দু-তিন টাকা পর্যন্ত। খুচরা দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এখন দেশে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আর ভারত থেকে স্থলপথে পণ্যটি আমদানি হচ্ছে। তাই সমুদ্রপথে পেঁয়াজ আমদানি আপাতত বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে যেসব কৃষিপণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হয় সেসব পণ্যের ছাড়পত্র দিয়ে থাকে উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র। সংস্থাটির দেওয়া তথ্য মতে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতের বিকল্প দেশ পাকিস্তান, মিসর, মায়ানমার, চীন, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক ও থাইল্যান্ড থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১২ হাজার ৩৬৭.৬২ টন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে আগস্ট ও অক্টোবর মাসে।
এ দুই মাসে অর্ধেক পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। সংখ্যা হিসাবে ছয় হাজার ৭১৮.৫২ টন। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সমুদ্রপথ দিয়ে কনটেইনারে করে আমদানি হয়েছে ৬৭৭.২২ টন, আগস্টে তিন হাজার ৩৪৩.৭৫ টন, সেপ্টেম্বরে দুই হাজার ২৬৩.২২ টন, অক্টোবরে তিন হাজার ৩৭৪.৭৭ টন, নভেম্বরে দুই হাজার ৩০২.৩৬ টন আর ডিসেম্বরে আমদানি হয়েছে ৪০৬.৩০ টন। ২০২৫ সালের নতুন বছরের জানুয়ারিতে এখনো কোনো পেঁয়াজ সমুদ্রপথ দিয়ে আমদানি হয়নি।
এদিকে গত ৫ জানুয়ারি পেঁয়াজের রপ্তানি বাড়াতে ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য কমিয়েছে ভারত। আগে প্রতি টন পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য ছিল ৪০৫ মার্কিন ডলার, ১০০ ডলার কমিয়ে এখন তা ৩০৫ মার্কিন ডলারে নামিয়ে এনেছে দেশটি। এখন ব্যবসায়ীরা আবারও ভারত থেকে পণ্যটি আনতে শুরু করেছেন। এ ছাড়া দেশের মুড়িকাটা পেঁয়াজও বাজারে আসতে শুরু করেছে।
সরেজমিনে দেশে ভোগ্য পণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাইকারি বাজারে এখন দেশীয় ও ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজেরই বেশি সরবরাহ রয়েছে। পাকিস্তান, মিসর, মায়ানমার, চীন, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানি হওয়া পেঁয়াজ বাজারে অল্প রয়েছে। পাইকারি বাজারে দেশীয় মুড়িকাটা পেঁয়াজ মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকা। এটি তিন দিন আগেও ৩৭-৩৯ টাকা ছিল। আর ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। এটির দামও প্রতি কেজিতে বেড়েছে তিন টাকা পর্যন্ত। তিন দিন আগেও পণ্যটির কেজি ছিল ৫২-৫৭ টাকা।
অন্যদিকে যাদের আড়তে পাকিস্তান, মিসর, মায়ানমার, চীন, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক ও থাইল্যান্ড পেঁয়াজ রয়েছে তারা সর্বনিম্ন ৩৫- ৪৫ টাকায় বিক্রি করেছেন এসব পেঁয়াজ। চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকার নিচেই বিক্রি হচ্ছে, যা জানুয়ারির শুরু থেকেই স্থিতিশীল রয়েছে।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তদার বশির উদ্দিন বলেন, আমদানিকারকরা কম সময়ে আর কম খরচে পেঁয়াজ আনতে পারে ভারত আর মায়ানমার থেকে। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলে এর পরবর্তী টার্গেট থাকে মায়ানমার। মায়ানমার থেকেও আনতে না পারলে তখন সমুদ্রপথ দিয়ে পাকিস্তান, মিসর, চীন, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক ও থাইল্যান্ড এসব দেশ থেকে আমদানি করতে বাধ্য হন। এতে খরচও বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, মায়ানমার সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণেও স্থলপথ দিয়ে মায়ানমার থেকেও পণ্যটি আমদানি করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে ভারত পেঁয়াজের রপ্তানি বাড়াতে ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য কমিয়েছে। এ সুযোগটা এখন নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে সমুদ্রপথে পণ্যটি আমদানি শূন্যে নেমেছে। স্থলপথ দিয়ে আমদানি বেশি হচ্ছে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, ভারত যেহেতু রপ্তানির ন্যূনতম মূল্য কমিয়েছে, তাই ভারত থেকে স্থলপথেই আনছেন পণ্যটি। এর পরও বেশির ভাগ আমদানিকারক ভারতের বিকল্প দেশ থেকে আমদানি করার জন্য অনুমতি নিয়ে রেখেছেন। ভারত যদি আবারও রপ্তানি বন্ধ করে তখন বিকল্প দেশ থেকে পণ্যটি এনে বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখা হবে। এ ছাড়া এখন দেশীয় কৃষকের মুড়িকাটা পেঁয়াজও বাজারে আসছে। এখন পণ্যটির সংকট নেই।
চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক ড. শাহ আলম বলেন, গত ডিসেম্বর মাসে কিছু পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এসেছিল। ১৩ জানুয়ারির পর্যন্ত সমুদ্রবন্দর দিয়ে এক টন পেঁয়াজও আসেনি। তবে আমদানিকারকরা আমদানি অনুমতি নিয়ে রেখেছেন।