বুধবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৮:৩৪:৫২

‘ওরা আমার মেয়েকে ডাক্তার হতে দিল না’, বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা

‘ওরা আমার মেয়েকে ডাক্তার হতে দিল না’, বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ‘ওরা আমার মেয়েকে ডাক্তার হতে দিল না। মধুপুরে বেড়াতে নিয়ে গিয়ে সহপাঠীরা পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করেছে। আমি তাদের বিচার চাই।’ এভাবেই বিলাপ করে কান্না করছিলেন কুমুদিনী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী অথৈ মনির মা আলেয়া বেগম। তিনি মেয়ের কথা বলে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে অথৈ মনির গ্রামের বাড়ি মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। অথৈ মনির মা অভিযোগ করেন, পানির সঙ্গে মেয়েকে নেশার ওষুধ খাইয়ে খুন করা হয়েছে। কলেজ ছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর শুনে আশপাশের বাড়ির লোকজন তাদের বাড়িতে ভিড় করছে।

অথৈ মনির সহপাঠী ঐশী ও তন্নী জানায়, অথৈ মনি সুমাইয়া মোস্তফা অপির ভাই আবিরের মোবাইলে কথা বলে বাসে করে মধুপুর যায়। মধুপুরে গিয়ে আবিরের সহযোগিতায় একটি ঘরে তারা ফ্রেশ হয়। ঘোরাঘুরি শেষে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় মধুপুর বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশে যাত্রা করে। পথিমধ্যে অথৈ মনি নেমে জাকারিয়ার মোটরসাইকেলে উঠে চলে আসে।

পরে তারা দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মধুপুর হাসপাতালে যায়। সেখান থেকে তাকে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। জাকারিয়া নামের ওই কলেজছাত্র তাদের সঙ্গে মধুপুরে বেড়াতে যান বলে তারা জানায়।

এদিকে পরিবারের লোকজন অথৈকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে আইসিইউয়ের ব্যবস্থা না পেয়ে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল) হাসপাতালে ভর্তি করেন।

সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে সে মারা যায়। কলেজছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর শুনে আশপাশের লোকজন তাদের বাড়িতে ভিড় করছে।

অথৈ মনির খালা রুমি আক্তার বলেন, ‘দুর্ঘটনার রাতে অথৈ মনির মুঠোফোন ঐশীর কাছে ছিল। সারা রাত অথৈ মনির ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ সচল ছিল। দুই দিন পর তারা মুঠোফোন ফেরত দিয়েছে। এ ছাড়া পিজি হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার উজ্জ্বল মল্লিক এবং ডাক্তার কনক কান্তি তাদের জানিয়েছেন, অথৈ মনিকে নেশার ট্যাবলেট খাইয়ে খুন করা হয়েছে।’

সুমাইয়া মোস্তফা অপির বাবা গোলাম মোস্তফা জানান, অথৈ মনি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিল বলে জেনেছেন।

অথৈ মনির মা আলেয়া বেগম বলেন, ‘মেয়েকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। ওরা আমার মেয়েকে ডাক্তার হতে দিল না। সহপাঠী ঐশী ও তন্নী একেক সময় একেক কথা বলছে। আমি দোষীদের বিচার চাই।’

মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এমরানুল কবীর জানান, অথৈ মনির মৃত্যুর বিষয়টি আজকেই জেনেছেন। কয়েকজন কলেজছাত্রী তিনটি মোটরসাইকেলে বেড়াতে আসে। ওই সময় দুর্ঘটনা ঘটে। পরে মেয়েটিকে ফেলে অজ্ঞাতপরিচয় ছেলেটি মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল-এমন খবর পেয়েছেন। তবে সঠিক তথ্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছেন বলে তিনি জানান।

এদিকে প্রাইভেট পড়ার কথা বলে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ায় ওই আটজন ছাত্রীকে কুমুদিনী সরকারি কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

কুমুদিনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘আগের অধ্যক্ষ মেয়েদের বাইরে প্রাইভেট পড়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। সেই সুযোগে আটজন মেয়ে গত ৮ জানুয়ারি ক্যাম্পাস থেকে বের হয়। তারা প্রাইভেট পড়ার কথা বলে মধুপুরে বেড়াতে গেছে-এমন খবর জানতে পেরে তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ বাইরে প্রাইভেট পড়ার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে