এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকেই বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন বড় ধরনের প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্কেও। বিশেষ করে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অবনমনের পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি দারুণভাবে লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে।
সম্প্রতি দুই দেশের সেনাবাহিনীর উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছরের মধ্যে ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্কের এতটা উষ্ণতা আগে দেখা যায়নি কখনও। খবর আল জাজিরার।
গত মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে সেনা সদর দপ্তরে দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এসএম কামরুল হাসানের। পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) আইএসপিআরের বিবৃতি অনুসারে, পাকিস্তানের রাজধানীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের এ সফরটি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উচ্চতার স্বাক্ষর বহন করে। বৈঠকে দুদেশের কর্মকর্তা এই মর্মে একমত হয়েছেন যে, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান ভাতৃপ্রতিম দেশ এবং বহিঃশক্তির প্রভাব থাকা সত্ত্বেও দুই দেশের সম্পর্ক অবশ্যই দৃঢ় থাকবে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হচ্ছে; কারণ রাজনীতির মাঠে দুই দেশের মধ্যেই ভারত বিরোধিতা রয়েছে। মুনির ও কামরুল হাসানের বৈঠকটি ছিল দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক উচ্চপর্যায়ের একাধিক বৈঠকের অংশ।
আইএসপিআরের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বৈঠকে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের সেনাবাহিনীর পারস্পরিক আদান-প্রদান, সহযোগিতা ও অংশীদারত্বের মাত্রা বাড়ানোর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান এবং বাংলাদেশের পিএসওর মধ্যে।
সেখানে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান বলেছেন, দুই দেশের প্রতিরক্ষাবাহিনীর মধ্যকার সহযোগিতাপূর্ণ বিভিন্ন উদ্যোগ ও পদক্ষেপের মাধ্যমেই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নিরাপত্তা ও সীমান্ত সুরক্ষা সম্ভব এবং পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব ও অংশীদারত্বপূর্ণ সম্পর্ক উপমহাদেশের সীমান্ত সুরক্ষিত রাখার জন্য খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
তখন বাংলাদেশের পিএসও লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামর-উল-হাসান পাকিস্তানের সেনাবাহনীর পেশাদারিত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ দমনের লড়াইয়ে ব্যাপক আত্মদানের মাধ্যমে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী নিজেকে সাহস এবং দৃঢ় সংকল্পের বাতিঘরে পরিণত করেছে।
পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চপর্যায়ের এ বৈঠক ছাড়াও গত ৫ আগস্টের পর আরও একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় দুদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। গত মাসে মিশরের রাজধানী কায়রোত অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া এই দুই নেতার মধ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরেও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে সাক্ষাৎ হয়।
এছাড়া পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার আগামী মাসে বাংলাদেশ সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১২ সালের পর এটিই হবে পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর। এই বিষয়গুলো দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।