শনিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১:০৩:২৬

গৃহপরিচায়িকা হয়ে ভালোবাসার অনন্য নজির স্থাপন করলেন ভোলার মেয়ে ফাতেমা

গৃহপরিচায়িকা হয়ে ভালোবাসার অনন্য নজির স্থাপন করলেন ভোলার মেয়ে ফাতেমা

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : স্বামীর মৃত্যুর পর দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের চিন্তায় কাজের খোঁজে ঢাকায় গিয়ে এক নিকট আত্মীয়র মাধ্যমে গৃহ পরিচারিকার কাজ মেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে। এরপর থেকে বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত কাজে সাহায্য করতে করতে তার একজন বিশ্বস্ত কর্মী হয়ে ওঠেন ফাতেমা বেগম (৪০)।

২০১৮ সালে স্বেচ্ছায় বেগম জিয়ার সঙ্গে কারাগারেও ছিলেন তিনি। একজন কারাবন্দীর সঙ্গে গৃহপরিচারিকা কারাগারে থাকা নিয়ে সেসময়ে রাজনৈতিকভাবে নানান বিতর্ক হলেও তিনিও থেকেছেন কারাগারে। বেগম জিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকলে তিনিও থাকেন হাসপাতালে।

এর আগে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদে আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়াকে গুলশাল কার্যালয়ের সামনে আটকে দেওয়া হয়েছিল। তখনো পতাকা হাতে বেগম জিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে ফাতেমাকে। সম্প্রতি বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান, সেখানেও তার সফরসঙ্গী হয়ে লন্ডনে গিয়েছেন তিনি।
 
একজন গৃহপরিচায়িকা হয়ে ভালোবাসার অনন্য নজির স্থাপন করেছেন ভোলার মেয়ে ফাতেমা বেগম (৪০)। ফাতেমাকে নিয়ে গর্ববোধ করেন তার দুই সন্তানসহ স্থানীয়রা।

ফাতেমা বেগম ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন শাহ-মাদার গ্রামের রফিজল হক ও মালেকা বেগম দম্পতির ৫ সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে। ফাতেমা বেগমের জাকিয়া ইসলাম রিয়া (১৯) ও মো.রিফাত (১৬) নামে দুই সন্তান রয়েছে। তারা নানাবাড়িতে থেকে পড়াশোনা করছেন।

ফাতেমার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের শেষের দিকে পারিবারিকভাবে ফাতেমার বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের গুড়া মিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. হারুন লাহাড়ির সঙ্গে। হারুন পেশায় একজন কৃষক ছিলেন। 

মেঘনা নদীর কোলে জেগে ওঠা চরে চাষাবাদ করে সংসার চলতো তাদের। এর মধ্যে তাদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় দুই ছেলে-মেয়ে। ভালোই চলছিল তাদের সংসার। হঠাৎ নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ফাতেমার স্বামী হারুন লাহাড়ি। অভাবের সংসারে স্বামীকে যথাযথ চিকিৎসা করাতে পারেননি। 

পরে ২০০৮ সালের শুরুতে ছেলে রিফাতকে ২ বছর বয়সী রেখে মৃত্যুবরণ করেন ফাতেমার স্বামী। স্বামীর মৃত্যুর পর ছোট ছোটো দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দুঃখের সাগরে পড়েন ফাতেমা। একদিকে তাদের ভরণপোষণ অন্যদিকে তাদের ভবিষ্যতের চিন্তা। দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ২০০৯ সালে কাজের খোঁজে ঢাকায় যান ফাতেমা। 

একই বছর এক আত্মীর মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বাসভবনে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করছেন ফাতেমা। তিনি বেগম জিয়ার সার্বক্ষণিক দেখাশোনাসহ সময়মতো ওষুধ খাওয়ানো ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বেগম জিয়াকে স্মরণ করিয়ে দেন। 

জানা গেছে, কয়েক বছর আগে সংসারে অভাবের তাড়নায় ঢাকা গিয়ে খিলগাঁওয়ের ভূইয়াপাড়া এলাকায় চায়ের দোকান দেন ফাতেমার বাবা রফিজল হক। রফিজল হকের মেয়ে বেগম খালেদা জিয়ার গৃহপরিচারিকা থাকার কারণে দুই দফায় হামলা চালিয়ে তার চায়ের দোকান গুড়িয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে জীবন বাচাঁতে ভোলায় ফিরে আসেন  রফিজল হক। 

ফাতেমার বাবা রফিজল হক বলেন, আমার মেয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে আছেন। আমি অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। মেয়ে খালেদা জিয়ার কাছে আছে এই কারণে সন্ত্রাসীরা আমার দোকানপাট ভেঙে দিয়েছে। যার কারণে বর্তমানে আমি বেকার। 

ফাতেমার মেয়ে রিয়া ও ছেলে রিফাত ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংসারে অভাবের কারণে ওইভাবে মায়ের আদর পাইনি। আম্মু আমাদের ভালো রাখতে কাজের সন্ধানে বের হন। বর্তমানে আমাদের আম্মু বেগম খালেদা জিয়ার পাশে আছেন, তার সেবা যত্ন করেন। তিনি যখন জেলে ছিলেন আম্মু তখন স্বেচ্ছায় জেল খাটেন। তিনি অসুস্থ, উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছেন। আমাদের আম্মুও তার সঙ্গে আছেন। এতে আমরা অনেক খুশি,আমরা আমাদের আম্মুকে নিয়ে খুব গর্ব করি, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সেবা করতে পারছেন। আমরা দোয়া করি আল্লাহ যেন বেগম খালেদা জিয়াকে সুস্থতা ও নেক হায়াত দান করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. রহিম, মহিবউল্লাহ,  ইউনুস ফরাজি ও মো. মাকসুদ ঢাকা পোস্টকে জানান, জিয়া পরিবারে প্রতি ভালোবাসার জায়গা থেকেই ফাতেমা বেগম তার সবটুকু দিয়ে সেবাযত্ন করে যাচ্ছেন। তার এই উদারতায় এলাকাবাসী গর্বিত। ফাতেমা ভাগ্যবান নারী, যার কারণে তিনি বেগম জিয়ার সেবাযত্ন করতে পারছেন। সূত্র: ঢাকা পোস্ট

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে