সোমবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৩:৩৭:০৬

জুলাই আন্দোলনে ছোড়া বুলেটে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা নিয়েই এখন কোঁকড়াচ্ছেন নাঈম

জুলাই আন্দোলনে ছোড়া বুলেটে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা নিয়েই এখন কোঁকড়াচ্ছেন নাঈম

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : একটি বুলেট ধূসর করে তুলেছে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নকে। ইচ্ছে ছিল দিনমজুর বাবার দুঃখ ঘোচাতে এবং বড় ভাইয়ের পাশে দাঁড়াতে কিছু একটা করবেন। শিখেছিলেন কোরিয়ান ভাষা। স্বপ্নের পথে অনেকটা এগিয়েও গিয়েছিলেন নাঈম ইসলাম। তবে, বেশি দূর আগাতে পারেননি। পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে তাকে। জুলাই আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছোড়া বুলেটে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা নিয়েই এখন কোঁকড়াচ্ছেন নাঈম। -

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর মোল্লা বাড়িতে থাকেন নাঈম। দিনমজুর আলমগীর হোসেনের ছেলে তিনি। পড়েন নারায়ণগঞ্জ তুলারাম সরকারি ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে।

গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে ঢাকার বনশ্রীতে বুলেট লাগে তার পায়ে। এতে বা-পায়ের হাঁড় ভেঙে যায় নাঈমের।

জানা যায়, নিজের পায়ে দাঁড়াতে গ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জে খালার বাসায় উঠেন নাঈম। ভর্তি হন তুলারাম সরকারি ডিগ্রি কলেজে। দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী থাকাবস্থায় নিজের খরচ মেটাতে স্থানীয় একটি ফার্মেসীতে চাকরি নেন। ভবিষ্যতে স্টুডেন্ট ভিসায় কোরিয়া যাওয়ার মনোবাসনা নিয়ে কোরিয়ান ভাষার কোর্সে ভর্তি হন। সেটি শেষও করেন। এরই মধ্যে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

শিক্ষার্থী নাঈম ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থী হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রায়ই যোগ দিতাম। গত ১৯ জুলাই আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে ঢাকার বনশ্রীতে আন্দোলনরত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হই। তখন সেখানে আমার বন্ধুরা ছিল। তারা আমাকে পাশের হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর পঙ্গু হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।

পড়ালেখার পাশাপাশি কোরিয়ান ভাষা শিখছিলাম। যাতে স্টুডেন্ট ভিসায় বা অন্য কোনো ভিসায় কোরিয়া যাওয়া যায়। এখন তো আর সম্ভব হচ্ছে না। কারণ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আর সম্ভব হবে না যাওয়ার জন্য। আমার সুস্থ হতে অনেক দিন সময় লাগবে। আর পরিপূর্ণ সুস্থ হই কিনা, তা সময়ই ভালো বলবে।

নাঈম জানান, ৫ আগস্টের আগে ১৯ জুলাই থেকে তাকে বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা বাবদ দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা ঋণ করতে হয়। বর্তমানে সিএমএইচের অধীন চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আহত নাঈমের ভাই মোশারফ হোসেন জানান, নাঈম বর্তমানে সিএমএইচে চিকিৎসাধীন থাকলেও ৫ আগস্টের আগে ১৯ জুলাই থেকে আমরা তাকে প্রাইভেটে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। সেখানে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। সরকার ঘোষণা দেয়ার পরে এখন সরকারিভাবে তার চিকিৎসা খরচ চলছে। কিন্তু তার আসা-যাওয়া, তার খাওয়া খরচ এগুলো সম্পূর্ণ নিজেদেরই বহন করতে হয়। এগুলো ঋণ করে অনেকটা আমাদেরই চালাতে হয়। আমাদের একটাই আবেদন আমার ভাই যাতে স্বাবলম্বী হয়ে একটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে, এই সহায়তা যাতে জুলাই ফাউন্ডেশন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করে।

স্থানীয় রাকিব হাসান জানান, নাঈমের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ নাঈম যে পরিমাণ অসুস্থ আরও দুটি অস্ত্রোপচার করতে হবে। অস্ত্রোপচার করার পর আরও এক বছরেও তিনি হাঁটতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। এই মুহূর্তে নাঈমের পাশে দেশবাসীর থাকা উচিত।-চ্যানেল 24 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে