এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : অবৈধ সম্পদ রক্ষায় বিশ্বের কোনও আদালতেই জিততে পারবে না কুখ্যাত ব্যাংক ডাকাত সাইফুল আলম মাসুদ ওরফে এস আলম। পাচার করা অর্থ ফেরত আনার পাশাপাশি তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে বদ্ধ পরিকর অন্তর্বর্তী সরকার।
রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশি এই ব্যাংক লুটেরা নিজেকে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে দাবি করলেও রেহাই পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বরং কৃত অপরাধের কারণে সিঙ্গাপুরের আইনেই তার মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাত থেকে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা লুট করে পাচার করা দেশি ডাকাত এস আলম এখন নিজেকে সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারী দাবি করছেন। বাংলাদেশে থাকা তার অবশিষ্ট সম্পদ রক্ষায় আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করারও হুমকি ধামকি দিচ্ছেন তিনি। এস আলমের এমন ঔদ্ধত্যে উৎসাহ যোগাচ্ছে তার প্রতি হাসিনা সরকারের নজিরবিহীন আনুকূল্য।
জানা যায়, দেশের ব্যাংকিং খাতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশী পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেন এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির।
একই দিন বিদেশি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সিয়াল বা পিআর পায় এস আলম পরিবার। শেখ হাসিনার নির্দেশে এসব সুবিধা দিয়েছিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তারা বলছেন, সিঙ্গাপুরের নাগরিক দাবি করে এস আলম তার অবৈধ সম্পদ রক্ষায় আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার যে হুমকি দিচ্ছেন, তা ডুবন্ত অবস্থায় খড়কুটো ধরে বাঁচার চেষ্টা মাত্র।
এস এম মোক্তার খান বলেন, একটা স্পেসিফিক কজ অব অ্যাকশন থাকতে হবে। ডেট থাকতে হবে সময় থাকতে হবে। সিআরপিসি তে বলা আছে এই তিনটা থাকলে সে অফিসে তার বিচারের সম্মুখীন হবে। সিঙ্গাপুরের আইনে দুর্নীতির শাস্তি হচ্ছে ফাঁসি। আমরা মনে করি, গভমেন্ট যদি শক্তভাবে ধরে সিঙ্গাপুরের তার নাগরিকত্ব ক্যানসেল হবে এবং তাকে এই দেশে এনে বিচার করা যাবে।
তবে এস আলমের মতো মাফিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকা জরুরি, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।সিনিয়র রিচার্স ফেলো, সিপিডি তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, যাদের বিরুদ্ধে এখানে লড়াইটা হচ্ছে, তারা কিন্তু একটা বড় ক্ষমতাশালী এবং একটা বিরাট অঙ্কের অর্থের মালিক। ফলে তার রাজনৈতিক, সামাজিক এবং আর্থিক যে ক্ষমতা আছে সেইটাকে মোকাবেলা করার জন্য রাষ্ট্রকেও একই রকমভাবে পেশাদারি ভিত্তিতে প্রস্তুত হতে হবে।
সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সাইপ্রাস, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ ও ইউরোপে এস আলমের বিপুল সম্পদ রয়েছে। সিঙ্গাপুরের শপিং মল, তিনটি হোটেল ও রিটেইল স্পেস, বিলাসবহুল বাড়ি আছে তার।
ব্যাংক আর্থিক খাত বিশ্লেষক দয়াল দত্ত বলেন, উনি তো বাংলাদেশের নাগরিক। আবার সিঙ্গাপুরের নাগরিক। এখন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ওনি উইথড্র করেছেন। এখন আইনের জটিলতার মাধ্যমে। উনাকে তো আমাদের আগেই প্রমাণ করতে হবে যে উনি আমাদের বাংলাদেশের নাগরিক। তারপরে আমাদের আদালত ব্যবস্থা নিতে পারবে। পাচারের বিষয়ে শুধুমাত্র একজন ব্যবসায়ীর হাত সেটা না। এখানে শুরু থেকে শেষ পর্যায় পর্যন্ত সকলেরই হাত আছে।
ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে আঠারোটি গোপন কোম্পানি খুলেছেন ব্যাংক মাফিয়া এস আলম। ব্যাংক লুটের অর্থ পাচার করে ২০১১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এসব কোম্পানি খুলেছেন এই ব্যাংক লুটেরা।