বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৭:১৮:০১

মেডিকেলে চান্স পাওয়া হতদরিদ্র মেয়ের ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভ্যানচালক বাবা!

মেডিকেলে চান্স পাওয়া হতদরিদ্র মেয়ের ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভ্যানচালক বাবা!

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের মেধাবী মেয়ে আরিফা আক্তার। তিনি এবার বরিশাল মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তবে তার মেডিকেল কলেজে ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবার। জেলা প্রশাসনসহ সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতার আশায় রয়েছে পরিবারটি।

গত রোববার (১৯ জানুয়ারি) প্রকাশিত মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে আরিফা আক্তার মেধা তালিকায় ১৯৭১তম হয়েছেন। তার স্কোর ১৭৮। তিনি বরিশাল মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া আরিফা আক্তার বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামের শেখ আসাদুজ্জামান-হামিমা আক্তার হিমা দম্পতির বড় মেয়ে। তাদের আরেক মেয়ে শরিফা আক্তার ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

আরিফার বাবা পেশায় একজন ভ্যানচালক। মা হামিমা আক্তার হিমা গৃহিণী হলেও মেয়েদের লেখাপড়া ও সংসারে সচ্ছলতার জন্য নিজের কাজ সেরে যতটুকু সময় পান দর্জির কাজ করেন। মেয়েদের লেখাপড়ার সুবিধার্থে ৬ বছর আগে দুই মেয়েকে নিয়ে প্রতাপপুর গ্রাম ছেড়ে বাগেরহাট শহরের আমলাপাড়া এলাকায় একটি টিনশেড বাড়িতে ওঠেন। ছোট্ট দুটি কক্ষে অনেক কষ্ট করে বসবাস করেন তারা। মেয়ে মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় অনেক খুশি হলেও হামিমা আক্তার হিমার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়াশোনার ব্যয় নিয়ে।

আরিফার মা হামিমা আক্তার হিমা বলেন, ওর বাবা ভ্যান চালিয়ে আর কত টাকা পায়, খুবই কষ্টে দিন যায় আমাদের। দুই মেয়ের পড়াশোনার জন্য অনেক কষ্ট করে শহরে থাকি। এইচএসসি পরীক্ষার পরে মেয়েকে কোচিংয়ে দেওয়ার জন্য আমার সামান্য সোনার গহনা বন্ধক রেখে টাকা দিয়েছিলাম। পরে গ্রামীণ ব্যাংকসহ তিনটি এনজিও থেকে প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা ঋণ করেছি। আর কয়দিন পরেই মেয়ের ভর্তি, কীভাবে ভর্তির টাকা জোগাড় হয়, আর ভর্তির পর কীভাবে ওর লেখাপড়া চলবে এটা নিয়ে খুবই চিন্তায় রয়েছি।

আরিফার বাবা আছাদুজ্জামান শেখ বলেন, আমি লেখাপড়া জানি না, নিজের নামও লিখতে পারি না। জীবনে একটাই চাওয়া ছিল আমার সন্তানরা শিক্ষিত ও ভালো মানুষ হোক। ছোটবেলা থেকেই সে মেধাবী। মাত্র ৪ বছর বয়সে তাকে স্থানীয় একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে ভর্তি করি। পরে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে বাগেরহাট সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি করি। বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় ১৭-১৮ কিলোমিটার। প্রতিদিন সকালে মেয়েকে ভ্যানে করে নিয়ে আসতাম স্কুলে। আরিফা সারাদিন স্কুলে থাকত, আর আমি ভ্যান চালানো শেষ করে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি যেতাম। কোনো দিন সন্ধ্যা, আবার কোনো দিন রাত হয়ে যেত। এভাবে দুই বছর পার করেছি, পরে অষ্টম শ্রেণিতে উঠলে শহরে বাসা ভাড়া থাকা শুরু করি।

তিনি আরও বলেন, এসএসসি, এইচএসসি পাস ও মেডিকেলে ভর্তির জন্য কোচিং করানোর জন্য ধার-দেনা ও কয়েকটি এনজিও থেকে কয়েক লাখ টাকা ঋণ করেছি। এখন মেয়েকে মেডিকেলে ভর্তি করানোর কোনো সঙ্গতি আমার নেই। শুনেছি মেডিকেলে পড়তে অনেক টাকার প্রয়োজন। মেয়েকে ভর্তির জন্য জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করি।

বরিশাল মেডিকেলে চান্স পাওয়া মেধাবী আরিফা আক্তার বলেন, ভর্তি নিয়ে বাবা-মাসহ পরিবারের সবাই চিন্তিত। আমিও বেশ চিন্তায় আছি, কীভাবে ভর্তি হব, কীভাবে পড়াশোনা চলবে। এতদিনের সব কষ্ট কী বিফলে যাবে? ভর্তির জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন মেধাবী এই শিক্ষার্থী।

আরিফার এমন সাফল্যে খুশি কচুয়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামের মানুষ। তাদের প্রতিবেশী মহিদুল বলেন, আরিফার বাবা-মা দুজনেই কঠোর পরিশ্রম করেছেন তাদের লেখাপড়ার জন্য। তাদের মেয়ে আরিফা মেডিকেলে চান্স পেয়েছে, এজন্য আমরা খুবই খুশি। আরিফা আমাদের এলাকার মেডিকেলে চান্স পাওয়া দ্বিতীয় মেয়ে।

মেধাবী আরিফার ভর্তির বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ভর্তির নির্ধারিত সময়ের আগেই তার ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে। আরিফার মতো কোনো দরিদ্র পরিবারের মেধাবী সন্তান যদি মেডিকেল, বুয়েটসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলে, তাদেরকেও সহযোগিতা করা হবে বলে জানান।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে