এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ঠাকুরগাঁওয়ের বাসিন্দা মনসুর আলী সাবেক বিডিআরের একজন সদস্য ছিলেন। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর তাকে যেতে হয়েছে জেলে। তিনি যখন জেলখানায় যান তখন তার মেয়ে মালিহার বয়স ছিল মাত্র তিন মাস। আজ দীর্ঘ ১৬ বছর পর জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়েছেন মনসুর। সেই ছোট্ট তিন মাসের মালিহার বয়স আজ ১৭ বছর। এই প্রথম নিজের মেয়েকে ছুঁয়ে দেখলেন বাবা। বাবা-মেয়ের এই ভালোবাসার আবেগঘন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকের সামনে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুর থেকে ১৬ বছর জেল খাটার পর মনসুরের মতো আরও ১৭৭ জন সাবেক বিডিআরের সদস্য কারামুক্ত হয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘ ১৬ বছর পর কারাগার থেকে বের হয়ে স্বজনদের দেখে কারামুক্তরা খুশিতে আত্মহারা। তাদের এই খুশি চোখের জল হয়ে বের হতে থাকে। বিডিআর সদস্যদের চোখের জল দেখে তাদের পরিবারের সদস্যরাও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ১৬ বছর ধরে যারা কারাগারের লোহার গ্রিল দিয়ে একে অপরকে দেখতেন তাদের আজ একে অপরকে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ হয়েছে।
বাবার মুক্তি উপলক্ষ্যে ১৭ বছরের মালিহা ঠাকুরগাঁও থেকে মায়ের সঙ্গে এসেছেন কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। বাবার মুক্তির পর তিনি বলেন, বাবা যখন জেলে যায় তখন আমার বয়স ছিল তিন মাস। এখন আমার বয়স ১৭। আজ বাবা বের হয়েছেন এর চেয়ে আনন্দের কিছু হয় না।
মুক্ত খোলা আকাশে আসার পর মনসুর আলী বলেন, জেলে যাওয়ার আগে স্ত্রীকে বলে গেলাম আমার দুটি সন্তানকে আমানত হিসেবে তোমার কাছে দিয়ে গেলাম। যদি ফিরে না আসতে পারি তাহলে আমাকে মাফ করে দিও।
কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে এক বিডিআর সদস্য বলেন, পিলখানার ঘটনা যখন ঘটে আমার তখন চাকরির বয়স মাত্র এক বছর। আমি কোনো কিছু জানতামও না বুঝতামও না, কীভাবে কী হয়েছে। আমি নির্দোষ ছিলাম, আমাকে বিনা কারণে ১৬টি বছর জেলখানায় থাকতে হয়েছে। আমার মতো অনেকের অনেক বড় সাজা হয়েছে কিন্তু তারাও আমার মতো এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল না।
আরেক বিডিআর সদস্য বলেন, বিনা কারণে ১৬টি বছর কারাবাস করলাম। আমার পরিবারের এখন আর কেউ নেই সবাই মারা গেছেন। সবাইকে হারিয়েছি আমি। বাবা-মাসহ আর কেউ বেঁচে নেই।
এ বিষয়ে কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স-ঢাকা বিভাগ) মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুর থেকে সাবেক বিডিআরের সদস্যদের কারামুক্তি হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৪৩ জন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে ২৭ জন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে ৯৫ জন ও কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৩ জনসহ মোট ১৭৮ জন সাবেক বিডিআর সদস্য আজ কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন।
এর আগে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা বিস্ফোরক মামলায় জামিনপ্রাপ্ত বিডিআরের ১৭৮ সদস্যের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালত জামিনপ্রাপ্ত এসব আসামিদের নাম প্রকাশ করেছেন। বুধবার তাদের জামিননামা দাখিল করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে আছে।