শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১:১৪:৫০

হঠাৎ কী হলো ছোলার বাজারে?

হঠাৎ কী হলো ছোলার বাজারে?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রমজান আসতে আরো দেড় মাস বাকি। এর মধ্যে ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত ছোলা আমদানি শুরু করে দিয়েছেন। পর্যাপ্ত আমদানির পরও প্রতিবছরের মতো এবারও রোজার আগের ইফতারের অত্যাবশ্যকীয় পণ্যটির দাম বাড়াচ্ছেন তাঁরা। এখন পাইকারি বাজারে পণ্যটির কেজি ১০০ টাকার ওপরে।

অথচ গত বছর একই সময়ে পণ্যটির দাম ছিল ৭০-৭৫ টাকা কেজি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত আমদানির পরও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো দাম কমাচ্ছে না। ফলে দাম কমছে না।

চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি তথ্যে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ছোলা আমদানির জন্য ঋণপত্র নিয়েছেন এক লাখ ৮৯ হাজার টন।

একই সময়ে আমদানি হয়েছে ৭১ হাজার ৩৮০ টন। রমজান ঘিরে প্রাথমিকভাবে ছোলার চাহিদা প্রায় ৬৮ হাজার টন। এর মধ্যে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসেই চাহিদার তিন-চতুর্থাংশ ছোলা আমদানি হয়েছে। যার পরিমাণ ৫৬ হাজার ৬০৯ টন।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে পাঁচ হাজার ১৮৮ টন, আগস্টে দুই হাজার ২৩০ টন, সেপ্টেম্বরে দুই হাজার ১৯৭ টন, অক্টোবরে এক হাজার ২৭১ টন ও নভেম্বরে তিন হাজার ৮৮৫ টন ছোলা আমদানি হয়েছে। তবে রমজান ঘিরে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি ছোলা আমদানি হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে ১৫ হাজার ৫৮৭ টন এবং জানুয়ারির ১৯ তারিখ পর্যন্ত ৪১ হাজার ২২ টন ছোলা আমদানি হয়েছে। রমজান ঘিরে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি দুই মাসে ছোলা আমদানি হয়েছে ৫৬ হাজার ৬০৯ টন।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক ড. মো. শাহ আলম বলেন, প্রতি মাসে ছোলার আমদানি হয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টন।

কিন্তু রোজা ঘিরে ফেব্রুয়ারি ও জানুয়ারি দুই মাসে অর্ধেকেরও বেশি ছোলা আমদানি হয়েছে। দুই মাসেই ৪১ হাজার টন ছোলা বন্দর থেকে খালাস হয়েছে। আরো ২২ হাজার টন ছোলা পাইপলাইনে রয়েছে। সেসব ছোলা এক মাসের মধ্যে বন্দরে আসবে।

দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাইকারি বাজারে সব ধরনের ডালের দাম কমলেও ছোলার দাম কমেনি। এক সপ্তাহ ধরে ছোলা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৯৫ থেকে ১১০ টাকায়। চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে একই ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৩০-১৩৫ টাকা। অথচ রোজা শুরুর দেড় মাস আগে গত বছর পাইকারি বাজারে ছোলার কেজি ছিল ৭০-৭৫ টাকা। ২০২৩ সালে ৭৭-৮৫ টাকা, ২০২২ সালে ৭৩-৭৫ টাকা, ২০২১ সালে ৬০-৬৫ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছিল। এবারই সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি।

খাতুনগঞ্জের মেসার্স রবিউল ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী রবিউল হাসান বলেন, খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা তো ছোলা আমদানি করেন না। আমদানিকারকরা বিশ্ববাজার থেকে কম দামে আমদানি করলেও দেশে কম দামে সরবরাহ করছেন না। এ ছাড়া ছোলা আমদানি করেন মুষ্টিমেয় কয়েকজন আমদানিকারক। তাঁদের হাতে মূলত ছোলার বাজার জিম্মি। তাই আমদানি বাড়লেও কমছে না দাম। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, রমজান ঘিরে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ব্যবসায়ীরা বেশি ভোগ্যপণ্য আমদানি শুরু করেছেন। সেই তুলনায় এখনো বিক্রি জমে উঠেনি। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে সব ধরনের ডালের দাম কমতির দিকে। দেশে পর্যাপ্ত ছোলা আমদানি হচ্ছে। রমজান শুরু হওয়ার আগে ছোলার দামও কমে আসবে। কারণ বাজারে সরবরাহ বাড়লে পণ্যের দাম কমবে এটাই স্বাভাবিক। এখন ছোলা আমদানি হলেও আড়তগুলোতে সরবরাহ তুলনামূলক কম। তাই এখনো দাম বাড়তি আছে।

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, প্রতিবছর রমজান আসার আগেই পণ্যের বাড়তি দামের জন্য আড়তদাররা দোষ দেন আমদানিকারকদের। আর আমদানিকারক দোষ চাপান ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে। এর মধ্যে ভোক্তার পকেট থেকে অতিরিক্ত অর্থ চলে যায় ব্যবসায়ীদের পকেটে। ছোলার বাজার নিয়ন্ত্রণে এখনই বাজার তদারকি শুরু করা উচিত। কারণ প্রতিবছর ব্যবসায়ীরা রমজানের আগে দাম বাড়ান, পরে প্রশাসনের চাপে বাড়তি দাম কমিয়ে বলেন দাম কমিয়েছেন। এর মধ্যে অনেক টাকা তাঁরা লাভ করে সাধারণ মানুষকে কষ্টে রাখেন। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিলে ব্যবসায়ীরা এ সুযোগ নিতে পারবেন না।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে