বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ১০:১৭:২৮

৭১ ইউপিতে বিএনপির প্রার্থী নেই, হতাশ কর্মীরা

৭১ ইউপিতে বিএনপির প্রার্থী নেই, হতাশ কর্মীরা

নিউজ ডেস্ক : ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ৭১টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। বিএনপি অভিযোগ করেছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেননি। এই প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলের পরিচয় ও প্রতীকে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

কয়েক জায়গায় বিএনপির মনোনীত প্রার্থীকে মারধর ও অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলা ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে একাধিক জায়গায়। নির্বাচন কমিশন তাদের প্রার্থীদের নিরাপত্তার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তবে জানতে চাইলে গতকাল মঙ্গলবার কমিশন সচিবালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা না দিতে পারলে কমিশনের কী করার আছে? কমিশনে যেসব অভিযোগ এসেছে, বিএনপি যেসব অভিযোগ করেছে বা বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে গণমাধ্যমে যেসব প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, তাও সুনির্দিষ্ট নয়। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। কেবল সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলেই ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

বিএনপির অভিযোগ, প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন ও কমিশন সচিবালয় থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

নির্বাচন কমিশন ১১ ফেব্রুয়ারি ৭৩৮টি ইউপিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। এসব ইউপিতে চেয়ারম্যান ও সদস্য (মেম্বার) পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গত সোমবার। এসব ইউপিতে ভোট গ্রহণ করা হবে ২২ মার্চ। নতুন আইন অনুযায়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা রাজনৈতিক দলের পরিচয় ও প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে সদস্য পদের নির্বাচন আগের মতো নির্দলীয়ভাবে হবে।

পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে বাগেরহাট, বরগুনা, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর, পিরোজপুর, লক্ষ্মীপুর, মুন্সিগঞ্জসহ আরও কয়েক জেলায় বিএনপি প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেওয়া হয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে।

৭১ ইউপিতে প্রার্থী নেই বিএনপির: এই ৭১টির মধ্যে ৪৬টিতে একাধিক প্রার্থী থাকলেও বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। এগুলো হলো কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার বড়শালঘর; খুলনার পাইকগাছা উপজেলার লস্কর, দাকোপের কৈলাসগঞ্জ, কামারখোলা ও তিলডাংগা; তেরখাদা সদরের তেরখাদা, সাচিয়াদহ ও ছাগলাদহ; গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্নি, ডুমুরিয়া, গোপালপুর, কুশলি ও পাটগাতি; ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি; যশোরের মনিরামপুর উপজেলার হরিহরনগর; ঢাকার দোহারের নয়াবাড়ি; নেত্রকোনার খালিয়াজুরির উপজেলার গাজিপুর; নোয়াখালী হাতিয়া উপজেলার চর ঈশ্বর ও চরকিং; পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার তেলিখালী; বাগেরহাটের মংলা উপজেলার বুড়িরডাংগা, রামপালের গৌরন্বা ও রাজনগর; চিতলমারী উপজেলার চিতলমারী ও শিবপুর; ফকিরহাট উপজেলার নলধা-মৌভোগ; মোল্লাহাট উপজেলার চুনখোলা ও গাওলা; বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া; কচুয়া উপজেলার কচুয়া, ধোপাখালী, গজালিয়া ও রাড়ীপাড়া; বরগুনা সদর উপজেলার বদরখালী ও কেউড়াবুনিয়া; আমতলীর কুকুয়া; লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা; শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বাঘবেড়; সাতক্ষীরার সদর উপজেলার বৈকারী; দেবহাটার কুলিয়া; কালীগঞ্জের চাম্পাফুল, ধলবাড়িয়া ও কৃষ্ণনগর এবং কলারোয়ার দেয়াড়া, কেরালকাতা ও যুগীখালী ইউপি। আর ২৫টি ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া আর কেউ নেই।

বিএনপির অভিযোগ, ইউপি নির্বাচনকে আরেকটি দখলবাজির মডেল বানাতে চায়। সে জন্যই সরকার ও নির্বাচন কমিশন যমজ ভাইয়ের মতো একযোগে কাজ করছে। গতকাল সকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন।

রিজভী অভিযোগ করেন, শতাধিক ইউপিতে বিএনপির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সব ইউনিয়ন পরিষদ, সদর উপজেলার বারইপাড়া, কচুয়া উপজেলার সদর ও রাড়ীপাড়া ইউপিতে বিএনপি প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেওয়া হয়নি। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হামলা করেছেন। যাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পেরেছেন, তাঁদের প্রত্যাহার করতে বলা হচ্ছে। তা না হলে পরিণতি ভয়াবহ হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপি আরও বলেছে, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট, রানা পয়সা ও ফুলকাঠি ইউপিতে বিএনপির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। সেখানে প্রার্থী আবদুস সালাম, আবদুর রশীদ ও মুজিবুর রহমানকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। খুলনার তেরখাদা উপজেলার সদর ইউপির প্রার্থী মুহিবুল্লাহর মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নিয়ে গেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার যুগীখালী, সোনাবাড়ীয়া, কয়লা ও কেরালকাতা এবং মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার জৈনশার ইউপিতে বিএনপি প্রার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেন, ‘ওরা (আওয়ামী লীগ) যেভাবে শুরু করেছে, তাতে আমাদের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আমরা আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম। গতকাল (সোমবার) তা বাস্তবে প্রমাণিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা যেভাবে টেন্ডার বাক্স ঘিরে রেখে দরপত্র জমা দিতে দেয় না, ইউপি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমার দেওয়ার ক্ষেত্রেও তা হয়েছে।’

স্থানীয় প্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে বিএনপির প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে অভিযোগ সম্পর্কে খুলনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ বলেন, বিএনপি বিপুল ভোটে পরাজিত হবে। সেটা জেনে নিজেরাই মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি। নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে তাঁরা আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।

চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ৫৬৮: কমিশন সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী প্রথম ধাপের ৭৩৮টি ইউপির নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মোট ৩ হাজার ৫৬৮ জন। এর মধ্যে ১৬টি রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৯০০ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ১ হাজার ৬৬৮ জন। আওয়ামী লীগের ৭৪১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার যোগীপল, কুষ্টিয়ার মিরপুরের আমবাড়ীয়া ও কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউপিতে এই দলের দুজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

এ ছাড়া বিএনপি ৬৬৭টি, জাতীয় পার্টি ১৪৮টি, জাতীয় পার্টি-জেপি ২০টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২৪৫টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ৩০টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ২৪টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ৫টি, বিএনএফ ৭টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ৪টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ২টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ ২টি, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, কল্যাণ পার্টি ও জাকের পার্টির একজন করে প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এলডিপি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, এনপিপি, খেলাফত মজলিস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নির্বাচন কমিশনে প্রার্থী প্রত্যয়নের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত তারা কোথাও প্রার্থী দেয়নি।-প্রথম আলো
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে