এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্তি বাতিল ঘোষণার পর অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে রাজধানীর সরকারি সাতটি কলেজ। এ কলেজগুলোর জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আশ্বাসে ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করা হয়। তবে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা দীর্ঘ প্রক্রিয়া হওয়ায় আপাতত অন্তর্বর্তী প্রশাসনের অধীনে এ কলেজগুলো পরিচালিত হবে। সাত কলেজের সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত এ প্রশাসন সাত কলেজ নিয়ে কাজ করবে। শিগগির সরকারের পক্ষ থেকে এ প্রশাসন ঘোষণা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) সাত কলেজের জন্য অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের কাজ করছে। কমিশনের পক্ষ থেকে তৈরি করা অন্তর্বর্তী প্রশাসনের একটি রূপরেখা আজ রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতে পারে। মন্ত্রণালয় এ কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন অন্তর্বর্তী প্রশাসনে আসা কর্মকর্তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের সমন্বয়ে এ প্রশাসন গঠিত হবে।
এর আগে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ২৭ জানুয়ারি সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে একটি সভা করে অধিভুক্তি বাতিলের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের সম্মানজনক পৃথকীকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ঢাবি অধিভুক্তি বাতিলের পর অভিভাবকহীন সাত কলেজে ছুটি থাকায় শ্রেণি পাঠদান বন্ধ রয়েছে। তবে চলমান রয়েছে পরীক্ষা কার্যক্রম। বর্তমানে ২০১৭ সালের ডিগ্রির চূড়ান্ত পরীক্ষা (নম্বর পদ্ধতি), ডিগ্রি সমন্বিত গ্রেড পদ্ধতি ২০২০, মাস্টার্স পুরাতন সিলেবাস ২০২২ (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়), মাস্টার্স নিয়মিত, অনিয়মিত ও মানোন্নয়ন ২০২৩ (ঢাবির সিলেবাস), অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ ২০২৩, অনার্স তৃতীয় বর্ষ ২০২৩ ও অনার্স প্রথম বর্ষ ২০২৩ এর পরীক্ষা চলমান রয়েছে। এ ছাড়া অনার্স চতুর্থ বর্ষ ২০২৩ পুরাতন সিলেবাসের (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়) ফরম পূরণের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে।
অধিভুক্তি বাতিল ঘোষণার পর সাত কলেজের সেশনজট প্রতিরোধের লক্ষ্যে নিয়মিত পরীক্ষাগুলো চলমান রাখার কথা জানান ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, সাত কলেজের যে পরীক্ষাগুলো চলমান আছে, সেগুলো চলবে। তিনি বলেন, পরীক্ষাগুলো যদি সচল থাকে, ক্লাসগুলো যদি চালু রাখতে পারি আর সরকার যে পরিকল্পনায় আগাচ্ছে সেটা যদি সঠিকভাবে চলে তাহলে এদের মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন হবে। সেটা যদি ঠিকভাবে হয়, আশা করি সমস্যা হবে না।
সাতটি সরকারি কলেজ হলো: ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
এদিকে, অধিভুক্তি বাতিলের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে সাত কলেজের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপলেখা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান বলেন, সাত কলেজের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই অধিভুক্তি বাতিল করা হয়েছে। সেজন্য আমরা বলবো, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দিতে হবে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় কবে হবে, সেই ঘোষণার আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী প্রশাসন দিয়ে এই সাত কলেজকে চালাতে হবে।
জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য ও সাত কলেজের স্বতন্ত্র পরিচয় প্রতিষ্ঠায় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, সাত কলেজের জন্য একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন করা হবে। নতুন পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সাত কলেজ এ প্রশাসনের অধীনে চলবে। অন্তর্বর্তী প্রশাসনের রূপরেখা প্রায় চূড়ান্ত। রবিবার আমরা এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। এ প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয় থেকে পাশ করার মাধ্যমে একটা আইনগত ভিত্তি তৈরি করা হবে।
অন্তর্বর্তী প্রশাসনের কাঠামো কেমন হবে জানতে চাইলে অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, সাত কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে একটা বডি তৈরি করবো। এখানে সাত কলেজের যেকোনো একটি কলেজের অধ্যক্ষকে প্রধান করা হবে। এ প্রশাসনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস ও ভর্তি পরীক্ষার অফিস যুক্ত থাকবে। আর ইউজিসি এ প্রশাসনে ‘অ্যাডভাইজরি অথরিটি’ হিসেবে কাজ করবে।