শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৯:৪৩:৩৬

পুলিশ সদস্যদের মানসিক চাপ কমাতে বছরে ১ বার ভাতাসহ ছুটিভোগ বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ

পুলিশ সদস্যদের মানসিক চাপ কমাতে বছরে ১ বার ভাতাসহ ছুটিভোগ বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : পুলিশ ব্যারাকে অতিরিক্ত কাজের চাপে থাকা পুলিশ সদস্যদের মানসিক চাপ হ্রাসে বছরে অন্তত একবার ভাতাসহ নির্দিষ্ট মেয়াদের ছুটিভোগ বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ সংস্কার কমিশন।

পাশাপাশি পুলিশের কনস্টেবল এবং সমমানের পুলিশ সদস্যদের কাজের ব্যাপকতা, পরিধি ও সময়কাল বিবেচনায় তাদের জন্য একটি পৃথক ছুটি গ্রহণ ও ভোগের নীতিমালা তৈরির জন্য সরকারের বিবেচনায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন।
কমিশনের প্রতিবেদনের ৬.২ অনুচ্ছেদে পুলিশ সদস্যদের জন্য শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, ছুটি, পেনশন সরলীকরণ, ঝুঁকি ভাতা/আর্থিক প্রণোদনার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

এসব নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তাতে বলা হয়েছে, পুলিশ সদস্যরা সমাজের নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন, যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য চ্যালেঞ্জিং এবং প্রতি পদে পদে আছে ঝুঁকি। তাদের এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সঠিকভাবে পালনের জন্য শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য, আবাসন, পর্যাপ্ত ছুটি, পেনশন সহজিকরণ এবং আর্থিক প্রণোদনা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

পুলিশ সদস্যদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা প্রতিদিন বিভিন্ন সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। তাদের স্বাস্থ্যহীনতা তাদের কর্মক্ষমতা এবং জনগণের সুরক্ষায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

উপযুক্ত আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে তারা স্বাস্থ্যসম্মত, নিরাপদ এবং আরামদায়ক পরিবেশে বসবাস করতে পারেন। এটি তাদের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

উপযুক্ত ছুটি ও বিশ্রামের সুযোগ পুলিশ সদস্যদের পুনরুজ্জীবিত হতে সাহায্য করে, যা তাদের কাজের প্রতি মনোযোগ এবং নিষ্ঠা বাড়ায়।

ঝুঁকিভাতা, আর্থিক প্রণোদনা পুলিশ সদস্যদের কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা প্রদান করে, যা তাদের আইনানুগ দায়িত্ব পালনের একটি সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করে। সুতরাং এসব বিষয় নিশ্চিত করা হলে পুলিশ বাহিনী আরও কার্যকর ও সক্ষম হয়ে উঠবে, যা সমগ্র সমাজের নিরাপত্তা উন্নয়নের সহায়তা করবে।

সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনায় সুপারিশ
১. পুলিশ সদস্যদের স্বাস্থ্য : নিয়মিত ব্যবধানে পুলিশ সদস্যদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। পরীক্ষার ভিত্তিতে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

২. পুলিশের সব বড় বড় ইউনিটে প্রশিক্ষিত মনোবিজ্ঞানীদের দ্বারা কাউন্সেলিং সেবা প্রদানের জন্য কাউন্সেলিং সেন্টার স্থাপন করতে হবে।

৩. প্রস্তাবিত পুলিশ মেডিকেল সার্ভিসের আওতায় সব পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিনামূল্যে যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

ডোপ-সাইকোলজিক্যাল টেস্ট নিশ্চিতকরণ
পুলিশ সদস্যদের নিয়মিত ডোপ টেস্ট এবং সাইকোলজিকাল টেস্টের আওতায় আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করা তাদের পেশাগত দক্ষতা এবং দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য শর্ত। মাদকাসক্তি একজন পুলিশ সদস্যের বিচার-বিবেচনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে, যা জনগণের নিরাপত্তা ও আইনের সুশাসনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। একইভাবে মানসিক চাপ বা অস্থিরতা তাদের পেশাগত পারফরম্যান্সে বিঘ্ন ঘটাতে পারে এবং কখনো কখনো এটি হিংসাত্মক বা অনৈতিক আচরণের দিকে নিয়ে যেতে পারে। ডোপ টেস্টের মাধ্যমে মাদকাসক্তি শনাক্ত করা গেলে প্রয়োজনীয় পুনর্বাসন এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।

সাইকোলজিকাল টেস্ট একজন সদস্যের মানসিক স্বাস্থ্য মূল্যায়ন করে কর্মক্ষেত্রে চাপ মোকাবিলা এবং দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত কি না তা নিশ্চিত করবে। এ ধরনের নিয়মিত পরীক্ষা শুধু সদস্যদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবন উন্নত করবে না, বরং পুলিশ বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে।

এক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের নিয়মিত ডোপ টেস্টের ও সাইকোলজিকাল টেস্টের আওতায় আনার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।

কর্মপরিবেশের উন্নতি
১. পুলিশ লাইনস, থানা পুলিশ ক্যাম্প, ব্যারাকে সর্বত্র স্বাস্থ্যসম্মত ও মানবিক কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

২. অতিরিক্ত কাজের চাপ কমানোর জন্য তাদের কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট রাখতে হবে।

৩. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে পুলিশ সদস্যদের তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ও মেলামেশার সুযোগ দিতে হবে।

৪. মাঝেমধ্যে বিনোদনমূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে তাদের মধ্যে কর্মস্পৃহা ও সতেজতা তৈরি করতে হবে। প্রতিটি থানায় আগত মহিলা (ভিকটিম/আটক) এবং কর্মরত মহিলা পুলিশ সদস্যদের জন্য চেঞ্জিং/ড্রেসিং/ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৫. কনস্টেবল থেকে সাব-ইন্সপেক্টর পর্যন্ত সব পুলিশ সদস্যের জন্য সর্বজনীনভাবে ফ্রেশমানির ব্যবস্থা করা।

৬. কনস্টেবল থেকে সাব-ইন্সপেক্টর পর্যন্ত সব পুলিশ সদস্যের জন্য সর্বজনীনভাবে ফ্রেশমানির ব্যবস্থা করা।

অবকাঠামো উন্নয়ন
১. পুলিশ লাইনস, থানা, ক্যাম্প ইত্যাদি অবস্থানে কনস্টেবল পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের জন্য শতভাগ/পর্যাপ্ত সংখ্যক ডরমিটরি/কোয়ার্টারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

২. ডরমিটরিতে নারী, পুরুষের স্বাস্থ্যসম্মত আবাসন সুবিধা (নারী, পুরুষের আলাদা বিশ্রামাগার, শৌচাগার, পৃথক ডাইনিং রুমের ব্যবস্থা) নিশ্চিত করতে হবে।

৩. আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে ট্রাফিক পুলিশের জন্য বিশেষত মহিলা পুলিশ সদস্যদের জন্য মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রশিক্ষণ
১. পুলিশ সদস্যদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের মানবাধিকার বিষয়াদির ওপরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতিমালার সঙ্গে পরিচয় করাতে হবে।

২. তাদের মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত করার জন্য এবং ধর্মীয় নৈতিকতা শিক্ষা দিতে পৃথক প্রশিক্ষণ মডিউল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৩. বলপ্রয়োগে অনুমোদিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) অনুসরণের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

৪. বৈধ এবং অবৈধ আদেশ প্রতিপালনের বিষয়ে প্রশিক্ষণে সম্যক ধারণা দিতে হবে।

৫. প্রতিটি পুলিশ সদস্য জনগণের সেবক এবং বন্ধু এ মনোভাব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে।

ছুটি
১. কনস্টেবল এবং সমমানের পুলিশ সদস্যদের কাজের ব্যাপকতা, পরিধি ও সময়কাল বিবেচনা করে তাদের জন্য একটি পৃথক ছুটি গ্রহণ এবং ভোগের অনুশাসন/নীতিমালা সরকার বিবেচনা করতে পারেন।

২. পুলিশ ব্যারাকে অতিরিক্ত কাজের চাপে থাকা পুলিশ সদস্যদের মানসিক চাপ হ্রাস করার জন্য তাদের বছরে একবার ভাতাসহ নির্দিষ্ট মেয়াদের ছুটিভোগ বাধ্যতামূলক করা উচিত।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে