এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রাজনৈতিক ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে যেসব সংস্কার জরুরি তা শেষ করেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনে যেতে চায় বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত নির্বাচন চায়, সেটা বলার অধিকার তাদের আছে। কিন্তু আমাদের বক্তব্য এরইমধ্যে পরিষ্কার করা হয়েছে। সরকারে থেকে অযথা সময়ক্ষেপণ করতে চাইছি না। রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেসব সংস্কার জরুরি তা শেষ করেই নির্বাচনে যেতে চাই।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘৬টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন অনলাইনে আপলোড করা হয়েছে। কমিশনগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে সংস্কারের কথা বলেছে। যা আগামী নির্বাচনের আগে করা যেতে পারে। আশু করণীয় কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐক্যমত্যের প্রয়োজন হবে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়া হবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘বিএনপি একটি ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করেছে। আমাদের ছাত্র নেতারা যথেষ্ট সংযমের পরিচয় দিচ্ছে। আশা করি সবাই প্রক্রিয়াটিকে বেগবান করার চেষ্টা করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে প্রস্তাবগুলো নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন করা সম্ভব সেগুলো আমরাই বিবেচনা করব। তবে এগুলো নিয়েও যদি রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনা করতে চায়, সরকার আলোচনা করবে।’
মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘সরকারের সহনশীলতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের উপর শ্রদ্ধাবোধের কারণে আওয়ামী লীগ এখনো কর্মসূচি দিতে পারছে।’
আশু করণীয়ের মধ্যে যা যা আছে:
স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে
সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন আচরণবিধি প্রণয়ন
গণশুনানি এবং নাগরিকদের অভিযোগ শুনতে হবে
নাগরিক কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। জেলা উপজেলা পর্যায়ে স্থায়ী নাগরিক কমিটি গঠন
মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা হ্রাস করা
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ আর রাজস্ব বোর্ড একসঙ্গে এক প্রতিষ্ঠানে করতে হবে
নতুন দুটো বিভাগ- কুমিল্লা ও ফরিদপুর
জেলা প্রশাসককে জেলা কমিশনার হিসেবে অভিহিত করা
উপজেলা পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট স্থাপন
সাব রেজিস্ট্রি অফিস সম্পূর্ণ ডিজিটাল করা
পাবলিক সার্ভিস কমিশন পুনর্গঠন
জুডিশিয়াল সার্ভিস সদস্যদের জন্য আচরণবিধি নির্ধারণ
ফৌজদারি মামলা তদন্তে আলাদা ফৌজদারি সার্ভিস
বাণিজ্যিক আদালত গঠন
আদালতে সহায়ক কর্মচারী নিয়োগ হবে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে
প্রতিটি আদালতে যেন ইনফরমেশন ডেস্ক থাকে
অনলাইনে যেন পুলিশের সাক্ষ্য গ্রহণের ব্যবস্থা থাকে
আদালত প্রাঙ্গনে রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহারের নিয়ম প্রণয়ন
বিদ্যমান মামলা জট হ্রাস কল্পে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ
আইনজীবীদের ফি নির্ধারণ, লিখিত চুক্তি ও রশিদ প্রদান বাধ্যতামূলক করা
যারা তদন্ত করবে তাদের আলাদা ইউনিট থাকবে
পুলিশদের মানবাধিকার ট্রেনিং, আচরণবিধি প্রণয়ন
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে হিউম্যান রাইটস কমিশন তদন্ত করবে
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন
গণমাধ্যম নীতিমালা সংশোধন
অনলাইন ভোটিং এর পরীক্ষা নীরিক্ষা শুরু করা
দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশল বাস্তবায়নে ন্যায়পাল নিয়োগ
কালো টাকা কোনোদিনও সাদা করা যাবে না সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন
রাজনৈতিক ও নির্বাচনী আইনে স্বচ্ছতায় শুদ্ধাচার চর্চা
বেসরকারি পর্যায়ের ঘুষ লেনদেনকে শাস্তির আওতায় আনা
দুদককে আরও শক্তিশালী করতে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ
সংবিধান সংস্কার কমিশন আশু করণীয় দেয়নি। তাদের প্রতিটা প্রস্তাব রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে করতে হবে বলে জানান আসিফ নজরুল।
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।