এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর এই প্রথম ঢাকাসহ দেশব্যাপী রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। দলটি এই কর্মসূচিতে চারটি লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও মূলত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিকেই ‘মূল ফোকাস’ হিসেবে তুলে ধরতে চায়।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে নির্বাচন নিয়ে যে লক্ষ্যের কথা জানানো হয়েছে, সেটি এখনো সুনির্দিষ্ট নয়। ফলে নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শঙ্কা এখনো কাটেনি। বরং নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার নানান লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে।
একই সঙ্গে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এমন অবস্থায় একটি গ্রহণযোগ্য অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনই হতে পারে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ। দলটির দাবি, কেবল নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারই দেশের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে।
দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামীকাল ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপী ৯ দিনের সভা-সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবিলা—এই চার মূল দাবিসহ বিভিন্ন জনদাবিতে দলের ৬৭টি সাংগঠনিক জেলায় পর্যায়ক্রমে এ কর্মসূচি পালিত হবে।
ঢাকাসহ দেশজুড়ে অনুষ্ঠেয় এসব সভা-সমাবেশে দলটির স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিবরা অংশ নেবেন। এরই মধ্যে অংশগ্রহণকারী নেতাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে এবং কেন্দ্র থেকে প্রতিটি কর্মসূচি ব্যাপক জনসমাগমের মধ্য দিয়ে সর্বাত্মকভাবে সফল করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। রমজান শুরু হওয়ার আগে এ কর্মসূচি সমাপ্ত হবে।
জানা গেছে, আসন্ন রমজানে রাজপথে কোনো কর্মসূচি থাকবে না বিএনপির। তবে ওই মাসে ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়েও একই দাবি-দাওয়া তুলে ধরা হবে। আর এ সময়ের মধ্যে সংস্কার এবং জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট না হলে রমজানের পরে রাজপথে কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, নির্বাচন বন্ধ রেখে সংস্কার নয়, বরং সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে চলবে। কারণ, একটি দেশ অনন্তকাল নির্বাচনবিহীন থাকতে পারে না।
বিএনপি গত কয়েক মাস ধরে দলের পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল গত রোববার নির্বাচন ভবনে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)সহ অন্য কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে। সেখানে নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সার্বিক বিষয় নিয়ে তারা ইসির সঙ্গে মতবিনিময় করেছে।
বিএনপির তরফ থেকেও নির্বাচনী প্রস্তুতিতে ইসিকে সার্বিক সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়েও ইসির কাছে জানতে চায় দলটি। তখন নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে আগামী মে-জুন মাসের মধ্যেই ইসি পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত হবে।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর অব্যাহত দাবির মুখে বিজয় দিবসে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে কিংবা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে সম্প্রতি একটি বিদেশি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, এ বছরের শেষদিকে বাংলাদেশে নির্বাচন হতে পারে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা কে কোন জেলায় সমাবেশে যাবেন আগামীকাল বুধবার খুলনা জেলায় অনুষ্ঠেয় সমাবেশে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, লালমনিরহাটে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিরাজগঞ্জে নজরুল ইসলাম খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বরকত উল্লাহ বুলু, সুনামগঞ্জে আরিফুল হক চৌধুরী এবং পটুয়াখালীর সমাবেশে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রধান অতিথি থাকবেন। এ ছাড়া ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেনীতে অনুষ্ঠেয় সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।
১৭ ফেব্রুয়ারি যশোর জেলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, টাঙ্গাইলে ড. আব্দুল মঈন খান, কক্সবাজারে সালাহউদ্দিন আহমেদ, মাদারীপুরে সেলিমা রহমান, ঠাকুরগাঁওয়ে শামসুজ্জামান দুদু, চাঁদপুরে আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বগুড়ায় আবদুস সালাম, শরীয়তপুরে অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ভোলায় জহির উদ্দিন স্বপন, মৌলভীবাজারে আরিফুল হক চৌধুরী এবং নেত্রকোনার সমাবেশে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স অংশগ্রহণ করবেন।
১৮ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জে মির্জা আব্বাস, পাবনায় ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, পঞ্চগড়ে শামসুজ্জামান দুদু, ঝিনাইদহে আবুল খায়ের ভূঁইয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলায় জয়নুল আবদিন ফারুক, হবিগঞ্জে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি এবং সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলায় অনুষ্ঠেয় সমাবেশে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
১৯ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর সমাবেশে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রাজবাড়ীতে ড. আসাদুজ্জামান রিপন, কুষ্টিয়ায় মিজানুর রহমান মিনু, কিশোরগঞ্জে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, পিরোজপুরে মজিবুর রহমান সরোয়ার, সিলেটে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জামালপুরে জহুরুল হক শাহাজাদা মিয়া অংশগ্রহণ করবেন।
২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা জেলার সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, লক্ষ্মীপুরে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বরিশাল দক্ষিণে সেলিমা রহমান, ফরিদপুরে ড. আসাদুজ্জামান রিপন, চুয়াডাঙ্গায় আমান উল্লাহ আমান, কুড়িগ্রামে আবদুস সালাম, নওগাঁয় মিজানুর রহমান মিনু এবং ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলায় অনুষ্ঠেয় সমাবেশে আব্দুল আউয়াল মিন্টু প্রধান অতিথি থাকবেন।
২২ ফেব্রুয়ারি ঝালকাঠি জেলায় অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, চট্টগ্রাম দক্ষিণে আহমেদ আযম খান, গোপালগঞ্জে ড. আসাদুজ্জামান রিপন, রংপুরে আবুল খায়ের ভূঁইয়া, ময়মনসিংহ উত্তরে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, জয়পুরহাটে হারুনুর রশিদ, কুমিল্লা উত্তরে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, বান্দরবানে হাবিব উন-নবী খান সোহেল এবং নরসিংদীর সমাবেশে অ্যাডভোকেট আব্দুল সালাম আজাদ অংশগ্রহণ করবেন।
২৪ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জ জেলার সমাবেশে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বরিশাল উত্তরে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, নাটোরে আহমেদ আযম খান, নড়াইলে নিতাই রায় চৌধুরী, গাইবান্ধায় হারুনুর রশিদ, রাজশাহীতে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, রাঙামাটিতে হাবিব উন-নবী খান সোহেল এবং মাগুরার সমাবেশে অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ অংশগ্রহণ করবেন।
২৫ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলার সমাবেশে মির্জা আব্বাস, গাজীপুরে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চট্টগ্রাম উত্তরে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সাতক্ষীরায় নিতাই রায় চৌধুরী, বাগেরহাটে বরকত উল্লাহ বুলু, খাগড়াছড়িতে মনিরুল হক চৌধুরী, মেহেরপুরে আমান উল্লাহ আমান, নীলফামারীতে জয়নুল আবদিন ফারুক, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আবদুস সালাম এবং দিনাজপুর জেলার সমাবেশে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।