নিউজ ডেস্ক : শোকাবহ ২৫ ফেব্রুয়ারি আজ। এদিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞ। বেদনাবিধূর সেই ভয়াল দিনর কথা মনে পড়লে আজো গায়ের লোম দাড়িয়ে যায়। বিডিআর বিদ্রোহের নামে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ওই সময়ের বিডিআর সদরদপ্তর পিলখানায় সেনাবাহিনীর ৫৭ জন মেধাবী ও চৌকস অফিসারসহ ৭৪ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে বিডিআরের (বর্তমান বিজিবি) তৎকালীন ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদও ছিলেন।
ইতোমধ্যে সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। বিদ্রোহের বিচারও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু সেদিনের ক্ষত শুকায়নি এখনো। সেই তাণ্ডবের কথা মনে উঠতে আজো আঁতকে ওঠেন মানুষ। উচ্ছৃঙ্খল জওয়ানদের সেই আস্ফালন এখনো ঘৃণাভরে স্মরণ করে সবাই।
নিম্ন আদালতে বিডিআর বিদ্রোহের বিচার হয়েছে। সেখানে বিচার হয়েছে ওই দিনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের। কিন্তু মানুষ সেই দিনের নির্মমতা ভুলতে পারছেন না। সেই বীভৎসদৃশ্য, মাটিচাপা লাশ, দেশপ্রেমিক সেনাকর্মকর্তাদের ক্ষতবিক্ষত দেহ চোখে ভেসে উঠতেই আঁতকে ওঠে মানুষ।
হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। অফিসারদের স্ত্রী-সন্তান এবং বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজনকে আটকে রেখে নির্মম নির্যাতন চালায় তারা। তাদের বাড়ি-গাড়ি, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য সম্পদ আগুনে পুড়ে ফেলা হয়।
সেনাকর্মকর্তাদের শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকেরা। আলামত নষ্ট করতে প্রথমে তাদের লাশগুলো পুড়ে ফেলার চেষ্টা করে তারা। ব্যর্থ হয়ে লাশগুলো মাটিচাপা এবং ম্যানহোলের মধ্যে ফেলে দেয় তারা। অস্ত্রাগার লুট করে উচ্ছৃঙ্খল জওয়ানরা সেই অস্ত্র দিয়ে সেনা অফিসারদের হত্যা করে।
নির্মম ওই হত্যাকাণ্ডের পর সাত বছর হচ্ছে আজ। নৃশংস এই ঘটনার পর বিডিআর আইনে মোট ৫৭টি মামলা দায়ের হয়। মামলায় অভিযুক্ত অনেকেই ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করে বেরিয়ে গেছে। নিম্ন আদালতে হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হয়েছে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। সাজাপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন।
আসামীপক্ষ হাইকোর্টে আপিল করায় এর ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। এটর্নি জেনারেল বলেছেন, দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই হাইকোর্টে মামলাটির নিস্পত্তি হবে।
ঘটনার পর বিডিআরের ডিএডি তৌহিদকে প্রধান আসামী করে সহস্রাধিক বিডিআর সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারী আইনে দুটি মামলা হয়।
২০১১ সালের ৫ জানুয়ারি ৮২৪ আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়ার মাধ্যমে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে শুরু হয় বিচারকাজ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে আদালতে সাক্ষ্য দেন ৬৫৪ জন।
ঘটনার প্রায় চার বছর আট মাস পর হত্যা মামলার রায় দেন আদালত। এতে ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৬২ জনের যাবজ্জীবন আর আড়াইশো আসামীকে খালাস দেন বিচারক। বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড হয়।
সাজার বিরুদ্ধে আসামীরা হাইকোর্টে আপিল করলে একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হয় মামলার শুনানির জন্য। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া বেশির ভাগ আসামীর আপিল শুনানি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন এটর্নি জেনারেল।
এটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলম বলেন, আসামীদের পক্ষে ১১৯ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের পক্ষে বক্তব্য রাখা হয়েছে। বাকি কয়েক জনের বক্তব্য নেওয়া এ মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।
হত্যা মামলায় আড়াইশোর বেশি আসামী খালাস পেলেও নিম্ন আদালতে বিস্ফোরক মামলাটির নিস্পত্তি না হওয়ায় তারা মুক্তি পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছে আসামীপক্ষ।
আসামীপক্ষের আইনজীবী শামীম সরদার বলেন, এই যে খালাস পাওয়া আসামীরা বিস্ফোরক মামলার কারণে এখনো জেল হাজতেই আছে। যদি এই বিস্ফোরক মামলারটির নিস্পত্তি হতো তাহলে আসামিরা বাইরে আসতে পারতো।
হাইকোর্টে মামলাটি নিস্পত্তির পর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল হলে মামলার চূড়ান্ত নিস্পত্তি হতে লেগে যেতে পারে আরো অনেক সময়।
এর বাইরে বিদ্রোহের ঘটনায় তৎকালীন বিডিআর আইনেও আলাদাভাবে আসামীদের বিচার হয়েছে।
রক্তাক্ত বিদ্রোহের পর সীমান্ত রাবাহিনীর নাম বদলে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বদল করা হয় তাদের পোশাক। প্রতি বছরই নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় এই হত্যা দিবস। বিডিআর বিদ্রোহে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আজো সরকারি-বেসরকারিভাবে এ ব্যাপারে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস