সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ১০:৪১:০৫

দাম কমতে কমতে এবার পেঁয়াজের কেজি কত হলো জানেন?

দাম কমতে কমতে এবার পেঁয়াজের কেজি কত হলো জানেন?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : দেশে এখন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। চট্টগ্রামের আড়তগুলো পেঁয়াজে ভরপুর। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ফুটপাতে পেঁয়াজ রেখে বিক্রি করতে হচ্ছে আড়তদারদের। কেউ আবার গাড়ি থেকে না নামিয়েই বিক্রি করে দিচ্ছেন। চাহিদার চেয়ে বেশি সরবরাহ থাকায় পাইকারিতে দাম গত বছরের অর্ধেকেরও কম। বিক্রিতেও ভাটা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে ৩৭ লাখ ৯০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছর মন্ত্রণালয় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩৮ লাখ ২১ হাজার টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেয় অধিদপ্তর।

বাজারের প্রত্যেকটি আড়ত পেঁয়াজে ভর্তি। আড়তে জায়গা না থাকায় ফুটপাতেও পেঁয়াজ রেখেছেন আড়তদাররা। জায়গা না থাকায় অনেকে ট্রাক থেকেও পেঁয়াজ সরাসরি ক্রেতাদের সরবরাহ করছেন। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি থাকায় ভারতীয় পেঁয়াজের দামও কম।-ব্যবসায়ী আবু তৈয়ব

সরকারি হিসাবে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন অন্তত চার থেকে ছয় লাখ মেট্রিক টন বেশি। তারপরও বিদেশ থেকে সাত-আট লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটাতে হয়। প্রতিবেশী এবং স্থলবন্দরের সুবিধা থাকায় ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সঠিক পরিচর্যা ও সংরক্ষণের অভাবসহ নানান কারণে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের এক তৃতীয়াংশ নষ্ট হয়। ফলে বাড়তি উৎপাদনের পরও চাহিদায় ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে। এ ঘাটতি মেটাতেই প্রতি বছরই পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।

শনি ও রোববার (১৫-১৬ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই ও পাহাড়তলী সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজে ভরপুর আড়তগুলো। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজের পাশাপাশি দেশি পেঁয়াজ রয়েছে বাজারে। দামও অপেক্ষাকৃত কম। বাজারে বর্তমানে পাবনা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও মেহেরপুর থেকে পেঁয়াজ আসছে।

বাজারের প্রত্যেক আড়তে পেঁয়াজ পরিপূর্ণ। দামও গত বছরের চেয়ে অনেক কম। ছয় মাস আগেও পেঁয়াজের দাম ৮০-১০০ টাকা ছিল। এখন দাম কম থাকলেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু পেঁয়াজ নয়, রসুন, আলুর দামও কমেছে।- আড়তদার মো. আজিজ উল্লাহ

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তাদের ১৪ ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদনে বলছে, ঢাকা মহানগরীর খুচরা বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪০-৫০ এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ে দেশি ও আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ খুচরায় প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পাইকারিতে প্রতি কেজি দেশি জাতের পেঁয়াজ ৯১ এবং একই পেঁয়াজ খুচরায় ১০৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একইভাবে বিদেশি অর্থাৎ ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারিতে ৯৯ টাকা, যা খুচরায় ১০৮ থেকে ১১২ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল।

তবে বছরের ব্যবধানে এবার পেঁয়াজের দাম অনেক কম। চট্টগ্রামের খুচরা বাজারগুলোতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যয়, বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৫০ ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দেশে যত পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, তার ৩০-৩৫ শতাংশ নানান কারণে নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে সংরক্ষণের অভাবে পচে যায়। আবার হিমাগারে এক কেজি পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে ২০ টাকার বিদ্যুৎ খরচ হয়। তার চেয়ে কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ আরও বেশি ভালো থাকে।-বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার

রোববার সকালে কথা হয় মধ্য চাক্তাইয়ের আড়তদার ব্যবসায়ী মেসার্স বশর অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী হাজি আবুল বশরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আড়তে দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি ভারতীয় পেঁয়াজও রয়েছে। দেশি পেঁয়াজ বেশি রয়েছে বাজারে। এতে দাম অনেক কমেছে। দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ৩৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। রমজান সামনে রেখে পেঁয়াজের দাম আর বাড়ার আশঙ্কা নেই।’

শনিবার খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লা মিয়া বাজারের ব্যবসায়ী আবু তৈয়ব বলেন, ‘বাজারের প্রত্যেকটি আড়ত পেঁয়াজে ভর্তি। আড়তে জায়গা না থাকায় ফুটপাতেও পেঁয়াজ রেখেছেন আড়তদাররা। জায়গা না থাকায় অনেকে ট্রাক থেকেও পেঁয়াজ সরাসরি ক্রেতাদের সরবরাহ করছেন। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি থাকায় ভারতীয় পেঁয়াজের দামও কম।’

চাক্তাইয়ের এস এন ট্রেডার্সের আলী হোসেন খোকন বলেন, ‘বাজারে পেঁয়াজের জোগান বেশি থাকলেও চাহিদা কম। আড়তে যেমন বেশি, তেমনি চট্টগ্রাম শহর কিংবা গ্রামের মুদি দোকানগুলোতেও পেঁয়াজের ভালো মজুত রয়েছে। এতে পাইকারিতে বেচাকেনা কম। রমজান ঘনিয়ে এলে বিক্রি বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘বাজারে মেহেরপুরি জাতের পেঁয়াজ সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। মাঠ থেকে তুলেই বাজারে নিয়ে আসা হয়েছে এসব পেঁয়াজ। এসব পেঁয়াজ কিছুটা মাটি ও ময়লাযুক্ত। পাইকারিতে ২৫-৩০ টাকা কেজিতে মেহেরপুরি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ি থেকে আসা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৩৮ টাকা কেজিতে।’

পাহাড়তলী বাজারের আড়তদার ব্যবসায়ী মো. আজিজ উল্লাহ বলেন, ‘বাজারের প্রত্যেক আড়তে পেঁয়াজ পরিপূর্ণ। দামও গত বছরের চেয়ে অনেক কম। ছয় মাস আগেও পেঁয়াজের দাম ৮০-১০০ টাকা ছিল। এখন দাম কম থাকলেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু পেঁয়াজ নয়, রসুন, আলুর দামও কমেছে।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে