বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৯:০২:০৭

বিবাহ বিচ্ছেদ সবচেয়ে বেশি কোন ইউনিয়নে?

বিবাহ বিচ্ছেদ সবচেয়ে বেশি কোন ইউনিয়নে?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে বিবাহ বিচ্ছেদ। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ১০০টি বিয়ের মধ্যে ৩৭টি বিয়ে গড়াচ্ছে বিচ্ছেদে, যা সামাজিক ও পারিবারিক কাঠামোর ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। 

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌর সভার কাজি অফিসের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে ৮৩৭টি বিয়ে সংগঠিত হয়। ওই বছর বিচ্ছেদ ঘটে ৩১৯টি। পরের বছর ২০২৪ সালে বিয়ে বেড়ে দাঁড়ায় ৯২৯টিতে। বাড়ে বিচ্ছেদের সংখ্যাও। বছরটিতে বিচ্ছেদ হয় ৩৩৭টি। অর্থাৎ উপজেলাটিতে বিয়ের তুলনায় বিচ্ছেদের শতকরা হার ৩৬.২৮ ভাগ। 

এ চিত্র শুধু ভূঞাপুরে নয়, টাঙ্গাইলের প্রায় সবকটি উপজেলায়। বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে বাল্যবিবাহ, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর উদাসীনতা, প'রকীয়া, নারীর প্রতিবাদী রূপ, নারী শিক্ষা, স্বামীর মা'দ'কা'স'ক্তি, দীর্ঘদিন স্বামী প্রবাসে থাকা, শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন, যৌ'তু'কের জন্য ক্রমাগত চাপ, স্বামীর নির্যাতন এসব বিষয় বেরিয়ে এসেছে।

তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নে বিবাহ বিচ্ছেদের হার সবচেয়ে বেশি। ইউনিয়নটিতে গত বছর ১১৩টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও গোবিন্দাসী ইউনিয়নে ৩৯টি, গাবসারা ইউনিয়নে ৪৮টি, অজুনা ইউনিয়নে ৫৭টি, অলোয়া ইউনিয়নে ৩২টি, ফলদা ইউনিয়নে ৪২টি এবং পৌর সভায় ৪১টি বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। 

স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ও সমাজকর্মীরা জানিয়েছেন, বিয়ের এই প্রবণতা নির্দিষ্ট সামাজিক কাঠামো এবং সংস্কৃতির ওপর নির্ভরশীল, যেখানে প্রথাগতভাবেই তরুণ-তরুণীদের বিয়ে দেওয়া হয়। তবে, বেশিরভাগ তরুণ-তরুণীরা বর্তমানে স্বতন্ত্রভাবে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন, যদিও সামাজিক চাপের কারণে তা সম্ভব হয়ে ।

প্রিয়াঙ্কা (ছদ্মনাম) নামে এক তরুণী জানান, আমরা চাচ্ছি শিক্ষার মাধ্যমে জীবনকে আরও ভালোভাবে গড়ে তুলতে। তবে পরিবারের আগ্রহ এবং সামাজিক চাহিদার কারণে আমাদের অনেক সময় নিজের সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়। অসময়ে বিয়ের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়। 

রহিমা, সখিনা, লাইলীসহ একাধিক নারী জানান, সামান্য কারণে একজন নারী কখনো বিবাহবিচ্ছেদ চান না। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন যখন সীমা অতিক্রম করে, ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় কেবল তখনই বাধ্য হয়ে এ কাজ করতে হয়। 

আসমা (ছদ্মনাম) নামে বিচ্ছেদকৃত নারী বলেন, পারিবারিক অশান্তি এবং আর্থিক সংকট আমাদের সম্পর্কের মধ্যে ভাঙন তৈরি করেছে। এখন আমি স্বাধীনভাবে জীবন শুরু করতে চাই।

অপরদিকে মাটিকাটা গ্রামের মনির বলেন, আমরা পারিবারিক ভাবে বিয়ে করি। ভালোই যাচ্ছিলো আমরাদের সময়। একটা বাচ্চা আছে। কিন্তু আমার স্ত্রী পরকীয়া করতো। এখন সে আমার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনে মামলা দিয়েছে জেলে নিয়ে যায়। তারপর সে আমাকে তালাক দেয়। 

ভূঞাপুর উপজেলার কাজী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বলেন, বিচ্ছেদ বা পরিবার ভাঙার ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে একটি নেতিবাচক মনোভাব থাকে। তবে পরিবারগুলোর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং একটি সহানুভূতিশীল মনোভাব গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। 

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আমিনা বেগম বলেন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আমরা নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। অভিভাবকদেরও এ বিষয়ে দায়িত্বশীল হতে হবে। 

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে