এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে আজ রাত থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম টের পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
আজ সন্ধ্যার পর থেকে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ অন্য বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে যৌথবাহিনী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে টহল দেবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি বলবো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্যাটিসফ্যাক্টরি (সন্তোষজনক)। তবে এটার উন্নতি করার অবকাশ রয়ে গেছে। আগে কী হতো, যেমন বনশ্রীর ঘটনাটি জানতে জানতে দুদিন সময় লেগে যেতো, এখন সঙ্গে সঙ্গে ঘটনা জেনে যায়।
তিনি বলেন, ছোটখাটো ঘটনা সবসময় আগেও ঘটেছে, দু-একদিন আগেও ঘটেছে। তবে ভবিষ্যতে যেন আর না ঘটে এজন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। আমরা চাই না এ ধরনের একটি ঘটনাও ঘটুক।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কী নির্দেশনা দিয়েছেন- জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আজকে রাতেই আপনারা দেখবেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অ্যাকটিভিটিস (কার্যক্রম) অনেক বেড়ে গেছে।
মানুষের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে, মানুষকে কীভাবে আশ্বস্ত করতে চান- এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, উপদেষ্টা হিসেবে আশ্বস্ত করার জন্যই তো আজকে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিং করলাম। তাদের একটি দিকনির্দেশনা দিয়েছি, তারা যেন সন্ধ্যার পর থেকেই কাজ শুরু করে। আপনারা এটি সন্ধ্যার পর থেকেই টের পাবেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা পেয়েছি ৫৩ বছর, এই ৫৩ বছরে মনে হয় কোনো মিডিয়ায় এভাবে লিখে নাই যে, এ বছর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো। আমি এক সময় সাংবাদিকতা করেছি, আমরাও কোনোদিন করিনি। এখন যে পরিস্থিতি আগের মতোই অবস্থা।
‘পুলিশকে আমি যে অবস্থায় পেয়েছিলাম, ওই অবস্থা থেকে আরও ভালো হয়েছে না? আমাদের কর্মকাণ্ড আরও বাড়ানোর সুযোগ আছে। তারা চেষ্টা করছেন তাদের কমান্ডাররাও চেষ্টা করছেন। এটি আস্তে আস্তে আরও ভালোর দিকে যাবে।’
অপারেশন ডেভিল হান্টের মধ্যে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা ঘটছে, এতে অপারেশন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, অপারেশন ডেভিল হান্ট করা হচ্ছে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। রাজশাহীতে ঘটনা ঘটছে, সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যেসব ওসি মামলা নিতে বিলম্ব করেছে, তাদের আমরা আইনের আওতায় এনেছি, সাসপেন্ড করে দিয়েছি।
‘অন্য সময় হলে কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি হতো না। আপনাদের রিপোর্টের কারণে আমরা অনেক সিনিয়র অফিসারকেও ক্লোজ করে নিয়ে এসেছি। আপনারা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চালিয়ে যান, আমরা খুব খুশি হবো।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আগে কিছু (কারও বিপদ) হলে আমরা দৌড়ে যেতাম, এখন গিয়ে মানুষ ছবি উঠায়। আগের দিন হলে মানুষ দৌড়ে গিয়ে ওই লোকটাকে ধরে ফেলতো। মানুষের মন-মানসিকতাও একটু পরিবর্তন হয়েছে। একজন আরেকজনের বিপদে কিন্তু এগিয়ে আসতে হবে।
সশস্ত্র বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সেটা ঠিকমতো কাজ করছে কি না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, যাকে যে কাজ দেওয়া হয়েছে, তারা সেভাবেই তাদের কাজটি করে যাচ্ছেন।
এরপর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, সভায় প্রথম সিদ্ধান্ত হয়েছে- ঢাকা এবং যেসব জায়গায় আমরা দেখছি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হয়েছে, এসব জায়গায় টহল বাড়াবো। এই টহল আজকে সন্ধ্যা থেকে আপনারা দেখবেন। পুরো ঢাকা শহরেই দেখবেন।
তিনি বলেন, এজন্য যে জিনিসটি করা হচ্ছে, যৌথটহল হবে। পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ টহল হবে। জায়গায় জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটর করা হবে। তল্লাশির ব্যবস্থা করা হবে।
গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ইন্টেলিজেন্স উইং, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি- তারা তাদের মতো করে নজরদারি করবেন। সে অনুযায়ী আমরা অ্যাকশনে যাবো।
শফিকুল আলম বলেন, ঢাকা যানজটপ্রবণ এলাকা। কোথাও কিছু ঘটনা ঘটলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেখানে যেতে যেতে অনেক সময় দেরি হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে প্রচুর মোটরসাইকেল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দ্রুত মোটরসাইকেলগুলো কেনা হবে। যেন তারা খুব দ্রুত মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থলে যেতে পারেন।
প্রেস সচিব আরও বলেন, পুলিশের ক্ষেত্রে আপাতত ১০০ মোটরসাইকেল কেনা হচ্ছে, পরবর্তী সময়ে আরও ১০০ কেনা হবে। অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর যারা আইনশৃঙ্খলা কাজে নিয়োজিত, তাদের জন্য আরও ৫০টি করে মোটরসাইকেল নেওয়া হবে।
সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন কি না- এ বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সিরিয়াসলি নিচ্ছে বলেই আজকের মিটিংটা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে যে এজেন্সিগুলো কাজ করে তারা সবাই এখানে ছিলেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের অসহযোগিতা দেখছেন না বলে জানিয়েছেন শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যত দ্রুত সম্ভব উন্নতি করা। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের। আমরা এ কাজটি সুচারুভাবে করতে চাই।
‘আমরা আশা করছি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি খুব দ্রুত দেখবেন।’
কক্সবাজারে বিমান বাহিনীর নির্মাণাধীন ঘাঁটিতে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, কক্সবাজারের এসপি এবং যে নিরাপত্তা এজেন্সিগুলো রয়েছে তাদের কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে, তারা প্রতিবেদন দিলে আপনারা জানবেন।