শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৩:৫৬:২৬

চাপা কষ্ট রূপ নিল কান্নায়

চাপা কষ্ট রূপ নিল কান্নায়

নিউজ ডেস্ক : বাবার কবরে এক গুচ্ছ ফুল দিয়ে কেঁদে উঠলো ফারজিন রহমান সামি (১০)। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দাদী কোহিনুর বেগম তাকে বুকে আগলে ধরলেন। চিত্কার করে কাঁদতে থাকলো সামি।

বড় ছেলে লে. কর্নেল ফেরদৌসের কাঁধে ভর করে ছোট ছেলে নিহত মেজর মিজানুর রহমানের কবর জিয়ারত করতে এসেছেন মা কহিনূর বেগম। কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নাতি সামিকে বুকে জড়িয়ে বারবার ছেলেকে ‘মিজান, মিজান’ বলে ডাকছিলেন আর বলছিলেন, ‘দেখো তোমার সামি কত বড় হয়েছে। সে এখন স্কুলে যায়। তুমি থাকলে কত খুশি হতে। তুমি কিছুই দেখতে পারলে না। আমি এই যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছি না।’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন কোহিনুর বেগম।
 
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই রাজধানীর বনানী কবরস্থানে পিলখানা হত্যাকান্ডে শহীদদের কবর জিয়ারত করতে আসেন প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা। কেউবা লাঠি ভর দিয়ে, কেউবা শহীদদের প্রিয় আমানত ছেলে-মেয়েদের নিয়ে। স্বজনহারাদের কান্নায় ভিজে উঠে কবরের মাটি।

এসময় বিডিআর বিদ্রোহে নিহত শহীদদের পরিবারের সদস্যরা বলেন, কলঙ্কময় এই হত্যাকান্ডের পর নিহতদের নিজস্ব বাহিনী ও সরকারের পক্ষ থেকে যেসব ক্ষতিপূরণ বা সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা ছিল তা দেয়া হয়েছে। কিন্তু গত সাত বছরেও উন্মোচন হয়নি এ ঘটনায় পর্দার আড়ালে থাকা কুশীলবদের চেহারা।

ঘাতকরাও মৃত্যুদন্ডেও দন্ডিত হয়নি। বরং নানা কারণে বিচারিক কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হচ্ছে। সবার একটাই দাবি: বিচার দ্রুত কার্যকর ও নেপথ্যের শক্তিকে খুঁজে বের করতে হবে।    
 
শহীদ মিজানুর রহমানের মায়ের মতই পিলখানা বিদ্রোহে নিহত তত্কালীন বিডিআর মহাপরিচালক শহীদ মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের কবরের পাশে বসে কাঁদছিলেন তার ছোট বোন রুবিনা নেসা নিনি।

নিনির বক্তব্য, এভাবে আর কতটি বছর কেটে গেলে সুষ্ঠু বিচারের মুখ দেখতে পাব। আর শহীদ কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমেদের বড় বোন দিলরুবা খাতুন বলেন, বিচারের রায় হয়েছে। তা দ্রুত এখন কার্যকর করা দরকার। আমরা বিচারকাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।
 
একইভাবে নিহত মেজর মোস্তফা আসাদুজ্জামানের সমাধিস্থল ধরে অঝোরে কাঁদছিলেন তার মা রাজিয়া জামান।  ভারি হয়ে উঠছিল কবরস্থানের পরিবেশ। খানিক পর রাজিয়াকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করেন তার কন্যা হোসনে আরা পারভীন। কিন্তু মাকে সান্ত্বনা দিতে দিতে পারভীন নিজেও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
 
পিলখানা ট্রাজেডির ৭ বছরে গতকাল সকালে এভাবেই প্রতিটি শহীদ পরিবারের স্বজনেরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তবে প্রত্যেকটি পরিবারের একই দাবি, স্বজন হারিয়েছি। এখন ঘাতক ও তাদের পেছনে ইন্ধনদাতাদের দেখতে চাই।
 
মেজর মোস্তফা আসাদুজ্জামানের বড় বোন পারভীন বলেন, ‘ভাইকে তো আর ফেরত পাবনা। তবে মা অন্তত তার মৃত্যুর আগে ছেলে হত্যার বিচার কার্যকর দেখে যেতে চান। দেখতে চাই কারা কারা সরাসরি হত্যাকান্ডে না থেকেও পেছনে থেকে ষড়যন্ত্র করেছে।’
 
শহীদ মেজর মমিনুল ইসলাম সরকারের কবর জিয়ারত করতে আসেন বাবা মফিজুল ইসলাম সরকার ও তার বোন। অন্য পরিবারগুলোর মত বাবা-মেয়েও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। মফিজুল ইসলাম সরকার বলেন, ছাত্রাবস্থায় আমার মমিনুল অক্সফোর্ড ডিকশনারি মুখস্থ করে ফেলে। এজন্য ও ‘ডিকশনারি মমিনুল’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। ওর মেধা, বুদ্ধি ও চাকরির সফলতায় আমি সবসময় গর্ববোধ করতাম। ভাবতাম আমার ছেলে আরও বড় অফিসার হবে। কিন্তু ওরা (হত্যাকারীরা) সব স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘ভাবি মৃত্যুর আগে অন্তত ছেলে হত্যাকারীদের গলায় ফাঁসির রশি দেখে যাব। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের পাশাপাশি আড়ালের শক্তি, উস্কানিদাতাদের মুখ দেখে যাব। এর চেয়ে বেশি কিছু চাইনা।’
 
বনানী কবরস্থানে বিডিআর বিদ্রোহে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, বিজিবির নিজস্ব তদন্ত ছাড়াও জাতীয় কমিটি ও বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার দফায় দফায় তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে তাদেরই গ্রেফতারের আওতায় আনা হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারী বা পরিকল্পনাকারী যারাই ছিল তারা সবাই আইনের আওতায়। কিন্তু বাইরে থেকে অনেক কিছু শোনা যায়। যা সত্য নয়। -ইত্তেফাক
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে