শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫, ১২:১২:৩৬

চীনা কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে কারখানা স্থানান্তরের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

চীনা কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে কারখানা স্থানান্তরের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : শীর্ষস্থানীয় চীনা কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এবং পশ্চিম ও এশিয়ায় তাদের পণ্য রপ্তানির জন্য একটি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শুক্রবার (২৮ মার্চ) চীনের ১০০টিরও বেশি শীর্ষ উদ্যোক্তা ও সিইওদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বাংলাদেশকে উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ তুলে ধরেন।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে কারখানা স্থানান্তর করা হলে চীনা বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের সুবিধা পাবেন। কারণ বাংলাদেশে কোনো বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা নেই এবং এটি বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা প্রদান করছে। এটাই বাংলাদেশে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়।

বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে, যা নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস অধিবেশনগুলোতে নতুন বাংলাদেশ সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি, বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ এবং বাংলাদেশি তরুণদের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।

বৈঠকের আগে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিআইডিএ) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বিইজেডএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ‘বাংলাদেশ ২.০ : গেটওয়ে টু গ্রোথ’ শিরোনামে একটি উপস্থাপনা দেন। তিনি বাংলাদেশের বিনিয়োগ খাতের বর্তমান অবস্থা, চাহিদার পরিপ্রেক্ষিত এবং প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাগুলো তুলে ধরেন।

আশিক চৌধুরী জানান, চীনা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) গঠনের অগ্রগতি দ্রুত এগিয়ে চলছে এবং বিআইডিএ ও বিইজেডএর কার্যক্রম সমন্বয় করে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এটাই সঠিক সময়, যা চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশের দরজা উন্মুক্ত করার বার্তা বহন করে।

তিনি তথ্য এবং ভাগ করা সেক্টরাল হিটম্যাপ, চাহিদার দৃশ্যপট এবং উৎপাদন প্রতিযোগিতার কারণগুলোর ওপর আলোকপাত করেন। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গৃহীত কিছু বিনিয়োগ জলবায়ু সংস্কার, সংস্থাগুলির সমন্বয়, সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা মডেল ইত্যাদির কথাও তুলে ধরেন।

চীনের চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিপিআইটি) ভাইস চেয়ারপারসন লি কিংশুয়াং বলেন, চীনা বিনিয়োগকারীরা বিশ্বব্যাপী যাচ্ছেন এবং তাদের অনেকেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।

তিনি বাংলাদেশ সরকারকে চীনে আরও বিনিয়োগ প্রচারমূলক ইভেন্ট আয়োজনের পরামর্শ দেন, যাতে আরও বেশি চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ সম্পর্কে জানতে পারে। এসময় সিসিপিআইটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য একটি বিশেষ প্ল্যাটফর্ম গঠনের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

বিনিয়োগ সংলাপের পর বিভিন্ন খাতের নেতাদের সঙ্গে তিনটি রাউন্ড টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অংশ নেয় বিশ্বের বৃহত্তম সৌর প্যানেল নির্মাতা লঙ্গি, মোবাইলফোন নির্মাতা অপ্পো, চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি হিসেনসি ইন্টারন্যাশনাল, চায়না বায়োটেক অ্যান্ড ফার্মাসিটিক্যালস ভ্যালি, চায়না ইন্টারনেট, চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন ও চায়না রেলওয়ে ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ ইত্যাদি।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে চীনা ব্যবসায়ীদের ইতিবাচক সাড়া প্রসঙ্গে আশিক চৌধুরী বলেন, ঢাকায় আসন্ন বিনিয়োগ সম্মেলনে চীনা প্রতিনিধি দল সবচেয়ে বড় হতে যাচ্ছে এবং এটি আরও বড় হবে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস সামাজিক ব্যবসা ও তিন শূন্যের (থ্রি জিরো) বিশ্ব নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের রাউন্ড টেবিলে বক্তব্য দেন। তিনি ‘এক নতুন সভ্যতা গড়ার’ আহ্বান জানান, যেখানে থাকবে শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ, শূন্য কার্বন নিঃসরণ, শূন্য দারিদ্র্য ও শূন্য বেকারত্ব, শিক্ষা ও নীতিনির্ধারণে সহযোগিতা

চীনের শীর্ষস্থানীয় তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়, রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয় ও চিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ অধ্যাপক, ডিন ও চীনের শীর্ষস্থানীয় যুব নেতারা বৈঠকে অংশ নেন।

চিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন লি দাওকুই অধ্যাপক ইউনূসের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ তার নেতৃত্বে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। তিনি বাংলাদেশি আমলাদের জন্য চীনের উন্নয়ন অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে ‘ডে-লং ডিপ ডাইভ’ আয়োজনের প্রস্তাব দেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে