মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল, ২০২৫, ০২:৩৭:০৭

এমন ফাঁকা রাজধানী দেখে যা বলছেন ঢাকাবাসী

এমন ফাঁকা রাজধানী দেখে যা বলছেন ঢাকাবাসী

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ব্যস্ত সড়ক- মহাসড়কগুলোতে নেই গাড়ির শব্দ, যানজট, পথচারীদের হুড়োহুড়ি এবং কর্মব্যস্ততা। যান্ত্রিক কোলাহলে ভরা শহরটি এখন একেবারেই শান্ত ও নীরব। এই ফাঁকা ঢাকায় ঈদের প্রশান্তি যেন এক চেনা-অচেনা আবেশ। ঈদের ছুটিতে এমনই ফাঁকা এক রাজধানী দেখছেন ঢাকায় রয়ে যাওয়া মানুষজন। তারা বলছেন, সবসময় এমন ঢাকা হলে পুরো পরিবেশটাই পাল্টে যেতো। ঢাকা হয়ে উঠতো সত্যিকারের বাসযোগ্য শহর।

সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদুল ফিতরের প্রথম দিন রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে ছিল না স্বাভাবিক দিনের যানজট, হর্নের কর্কশ শব্দও অনুপস্থিত। অলস দুপুরে ফাঁকা রাস্তায় হালকা বাতাসের সঙ্গে খেলা করছিল রোদের ছায়া। সকালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আয়োজনে ঈদ আনন্দ মিছিল হয়, যা নগরবাসীর মনে উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে।

এই ঈদে যারা ঢাকায় থেকে গেছেন, তাদের অনেকেই পরিবার- পরিজন নিয়ে বেরিয়েছেন নগরীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে। কেউ কেউ রিকশায় চড়ে, কিংবা খোলা সড়কে হেটে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটাছেন।

বিশেষ করে ফাঁকা ঢাকায় পরিবার নিয়ে ঈদ উদযাপনে জাতীয় জাদুঘর, মিরপুর চিড়িয়াখানা, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, জিয়া উদ্যান, শ্যামলী ওয়ান্ডারল্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থানীয় পার্ক মাঠ ও বিনোদন কেন্দ্রে মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকে ঘুরতে এসেছেন কাছের রেস্টুরেন্টে। কেউ কেউ বের হয়েছেন সিনেমা দেখতে।

এছাড়া এবছর এলাকায় এলাকায় মাঠগুলোতে বসেছে অস্থায়ী ঈদ মেলা। চীন মৈত্রী সম্মেলনে উত্তর সিটি করপোরেশনও দুদিনব্যাপি ঈদ মেলার আয়োজন করেছে।

রুবিনা আক্তার নামে একজন বলেন, চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকতে হয়। সড়কে অন্যান্য সময় এত যানজট থাকে যে তখন মনে হয় অন্য কোথাও সুযোগ থাকলে চলে যাই। কিন্তু ঈদের ছুটিতে একটু শান্তি মেলে। এমন ঢাকা থাকলে আমাদের মতো কর্মজীবী মানুষের জীবন অনেক সহজ হতো।

তানভীর হোসেন নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, ঈদের সময় ঢাকার ফাঁকা রাস্তাগুলোতে ঘুরে বেড়ানোর এক দারুণ সুযোগ পাওয়া যায়। গতকালও ঈদের নামাজের পর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বাইকে করে পুরো শহরটা উপভোগ করেছি। খুব ভালো লেগেছে।

তবে মানুষের সংখ্যা কম থাকায় আয়ে টান পড়েছে বলে জানান রিকশাচালক মোহাম্মদ আরিফ। তিনি বলেন, যাত্রী কম, তাই আয়-রোজগারও কমে গেছে। তবে ভালো দিক হলো, কোনো জ্যাম নেই, রাস্তায় রিকশা চালানো সহজ লাগছে।

শাহজাদপুর বাঁশতলা থেকে এয়ারপোর্ট রেলওয়ে স্টেশনে যাবেন আনাস রহমান। অনেক সময় অপেক্ষা করেও বাস পাননি তিনি। অবশেষে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনে ওঠেন তিনি। বাসে বসে তিনি বলেন, আজকে রাস্তায় গাড়ি নেই। বাস একটা-দুটা এলেও গাদাগাদি অবস্থা। ওঠার জায়গা নেই।

নতুনবাজার থেকে সাভার রুটে চলাচল করা বৈশাখী পরিবহনের চালক হামিম বলেন, শহরের মধ্যে যাত্রীর তেমন চাপ নেই। কাছাকাছি স্টপেজে মানুষ ওঠানামা করছে। অধিকাংশই ১০-২০ টাকা ভাড়ার যাত্রী। আর রাস্তাও ফাঁকা।

তিনি বলেন, গাড়ি এখন ঢাকার মধ্যে কম। সবাই এখন আরিচা ঘাট পর্যন্ত যাত্রী টানছে। কেউ কেউ পদ্মার ওপার পর্যন্তও যাত্রী আনা-নেওয়া করছে।

সায়েন্সল্যাবে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকা সাভার পরিবহনের চালক লোকমান বলেন, সদরঘাট যাওয়ার সময় গুলিস্তান এবং বাবুবাজার এলাকায় কিছুটা যানজট পেয়েছি। এছাড়া বাকি রাস্তা ফাঁকাই ছিল। আসার সময়ও গুলিস্তানে কিছুটা যানজট ছিল। এছাড়া পুরো রাস্তা এখন ফাঁকা।

ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্ট পরিবহনের চালকের সহকারী রবিউল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বিকেল থেকে রাত অবধি প্রচুর যাত্রী হচ্ছে। এই সপ্তাহ পুরোটাই এমন কম যাত্রী পাওয়া যাবে। এরপর সবকিছু খোলা হলে হয়তো আগের মতো যাত্রীর ভিড় থাকবে।

ঢাকার পরিচ্ছন্নতার কাছে নিয়োজিত মানুষের ছুটি নেই। ঝকঝকে তকতকে রাখার কাজ নেই বন্ধ। তাদের একজন মোমেনা খাতুন। তার ভাষায়, ‘রাস্তায় এখন বাইর হইলে দম নিয়া শান্তি পাই। ধুলাবালি নাই। পেট্রল পোড়া গন্ধ নাই। বুক ভইরা বাতাস নিতে পারি।’

সাইদুল ইসলামও কাজ করছেন নগর কর্তৃপক্ষের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে। সড়কদ্বীপ আর বিভাজনের গাছগুলো দেখভাল করেন। পানি দেন। ছেঁটে সুন্দর রাখেন। বললেন, ‘এখন গাছগুলারে দেখলে মন ভইরা যায়। কী সুন্দর সবুজ হইয়া উঠছে। এমনে সময় সবুজ দেখা যায় না। ধুলার পরত পইরা থাকে।’

এই শহর যে বায়ুদূষণের তালিকায় মাস কয়েক আগে শীর্ষে উঠে এসেছিল, এখন দেখে হয়তো কারো বিশ্বাস হবে না। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের নিরিখে এই কদিনেই ঢাকার সার্বিক পরিবেশের বেশ উন্নতি হয়েছে।

শুক্রাবাদের বাসিন্দা তানভীর আহমেদ বললেন, ‘ঢাকায় এমন দৃশ্য! ভাবাই যায় না। কী সুন্দর সবুজ হয়ে আছে নতুনপাতা। ফুল। প্রজাপতিও উড়ছে দেখি। এবার তাহলে ভাবুন, ঢাকায় কী দূষণ হয়? শুধু যে মানুষের জীবন ঝুঁকিতে তা নয়, এই প্রকৃতিও শ্বাস নিতে পারে না প্রাণ খুলে।’

অন্যদিকে, সড়ক ফাঁকা থাকায় ট্রাফিক পুলিশদেরও দায়িত্ব পালনেও চাপ কম পোহাতে হচ্ছে। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন পয়েন্টে টহল দিতে দেখা গেছে।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ঈদ ঘিরে অনেক মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। এতে বাসাবাড়ি, ফ্ল্যাট ও অফিস ফাঁকা হয়ে যাবে। ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে নগরবাসী। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি- এই ভয়ের অন্যতম কারণ। এসব বিষয় মাথায় রেখে ঈদের আগে ও পরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে ডিএমপি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক জানান, সাইবার মনিটরিংসহ গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে ঈদকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের নাশকতার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ঈদ আয়োজনকে নির্বিঘ্নে করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, এবার সবমিলিয়ে টানা ৯ দিনের লম্বা ছুটি ভোগ করছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সে অনুযায়ী, ছুটি শেষে আগামী ৬ এপ্রিল খুলবে অফিস-আদালত। তার আগ পর্যন্ত ঢাকা কিছুটা ফাঁকা থাকার সম্ভাবনাই রয়েছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে