মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৯:৩০:২৩

‘আমার আব্বাও নাই, ভাইও নাই, মায়ের অবস্থায়ও ভালো না, কাকাও মারা গেছেন, আমি এখন কী করব?’

‘আমার আব্বাও নাই, ভাইও নাই, মায়ের অবস্থায়ও ভালো না, কাকাও মারা গেছেন, আমি এখন কী করব?’

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ‘আমার আব্বাও নাই, ভাইও নাই, মায়ের অবস্থায়ও ভালো না। কাকাও মারা গেছেন। আমি হাসপাতালে আছি, আমি এখন কি করব?’

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে এভাবে মোবাইল ফোনে হাসপাতালের সিঁড়িতে বসে কেঁদে কেঁদে কোনো এক স্বজনকে (চাচা সম্বোধন) এমন কথা বলছিলেন মো. সাহেদ সরদার। বাবা, ভাইকে হারিয়ে ও মা মৃত্যুপথযাত্রী থাকায় শোকে পাগলপ্রায় তিনি।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার বাখুণ্ডা এলাকায় ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কে বাস দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন সাহেদ সরদারের বাবা জোয়ার সরদার (৬৫) ও ছোট ভাই ইমান সরদার (৩৫)। এ ঘটনায় তার বৃদ্ধ মা পারুলী বেগম গুরুতর আহত হয়েছেন। তারা জেলার নগরকান্দা উপজেলার শেয়ারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা।

এ ছাড়া এ ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন সাতজন এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৩০ জন। আহতদের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কাজনক রয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

জানা যায়, নিহতদের মধ্যে সাহেদ সরদারের বাবা, মা ও ছোট ভাই ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসছিলেন অসুস্থ এক স্বজনকে দেখতে। খাবার রান্না করেও নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সেই মেডিকেলেই এসেছেন কিন্তু লাশ হয়ে।

খবর শুনে হাসপাতালে এসেছেন বড় ছেলে সাহেদ সরদার। এসেই তিনি বাবা ও ভাইয়ের মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় তিনি স্বজনদের মোবাইল ফোনে জানাচ্ছিলেন এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা। বলতে বলতে লুটিয়ে পড়তে দেখা যায় তাকে।

সাংবাদিকদের দেখতেই লোকাল বাস নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘মোকছেদপুর থেকে ফরিদপুরের রাস্তায় চালকদের কারণে অনেককেই জীবন দিতে হচ্ছে। কিছু চালক লাইসেন্স ছাড়া, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গাড়ি চালায়। এদের দেখভালের কেউ নেই। সেই কারণে আমাদের মা-বোনের প্রাণ যাচ্ছে। তারা তো পরিবহনে ওঠে কোনো পাপ করে নাই।’

তিনি বলেন, ‘এই চালকদের ভুলের কারণে আমার অলরেডি দুজন মারা গেছে, আমার মাও মৃত্যুর মুখে। আজ যদি চালকরা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে গাড়ি চালাতো, তাহলে আমার বাবা ও ভাই মারা যেত না। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, গোপালগঞ্জের মোকছেদপুর থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে আসা ফারাবি এন্টারপ্রাইজ নামে লোকাল বাসটি বাখুণ্ডা এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারায়। এরপর সেটি সড়কের পাশে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে খাদে উল্টে পড়ে যায়। তাতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজনের মৃত্যু হয়। আহতদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়।

খবর পেয়ে হাসপাতালে যান ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লাসহ প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তাবৃন্দ। এ সময় জেলা প্রশাসক জানান, এ দুর্ঘটনার কারণ জানতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ্বাসকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন ও সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরও জানান, এ ছাড়া নিহত প্রতিটি পরিবারকে প্রাথমিকভাবে দাফনের জন্য ২৫ হাজার করে টাকা দেয়া হবে এবং পরবর্তীতে বিআরটিএর মাধ্যমে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে