এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বাংলাদেশের ভোক্তারা বরাবরের মতোই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে ওঠানামার প্রভাব অনুভব করছেন। এর মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে চলমান আলোচনা ও সিদ্ধান্তহীনতা সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। রমজানের মতো একটি সংবেদনশীল সময়ে এ ধরনের অনিশ্চয়তা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির ওপর। বাজারে প্রতিটি পণ্যের দামের হেরফেরের প্রভাব পড়ছে তাদের দৈনন্দিন জীবনে, আর সয়াবিন তেল এর মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি উপাদান।
সয়াবিন তেলের দাম: সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও সরকারি সিদ্ধান্ত
বর্তমানে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর কোনো সরকারি সিদ্ধান্ত হয়নি। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ১৩ টাকা করে বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হলেও, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা মেনে নেয়নি।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান, এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একজন উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি। আলোচনার মূল বিষয় ছিল বাজারে মূল্য স্থিতিশীল রাখা ও ব্যবসায়ীদের ন্যায্যতা নিশ্চিত করা। আগামীকাল (৯ এপ্রিল) আবারও এ বিষয়ে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে একটি সমাধান পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব এবং সরকারের অবস্থান
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেও ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানাগুলোর মালিকেরা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। তাঁদের যুক্তি, আমদানির ওপর শুল্ক-কর অব্যাহতি শেষ হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে এবং আগের দামে বিক্রি করে তারা লোকসানের মুখে পড়ছেন।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন দাবি করেছে, শুল্ক-কর অব্যাহতি ৩০ জুন পর্যন্ত না বাড়ালে দাম বাড়ানো ছাড়া তাদের আর কোনো পথ নেই। যদিও ট্যারিফ কমিশন এনবিআরকে রেয়াত বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে, এনবিআর থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।
অন্যদিকে, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, “ছয় মাস ধরে শুল্ক-কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের সুযোগ দীর্ঘ সময় ধরে বজায় রাখা সম্ভব নয়।” তার মতে, এই কর রেয়াতের ফলে এনবিআর প্রায় ২,৫৮৬ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে, যা একটি বড় অঙ্ক।
বর্তমান বাজারমূল্য ও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৫ থেকে ১৭৬ টাকা, ৫ লিটারের বোতল ৮৪৫ থেকে ৮৫০ টাকা, এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৫৭ থেকে ১৬৬ টাকা। পাম তেল ১৪৪ থেকে ১৫০ টাকা এবং সুপার পাম তেল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে গত রমজানে তারা লোকসান দিয়ে তেল বিক্রি করেছেন। এ অবস্থায় নতুন করে দাম না বাড়ালে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তবে সাধারণ ভোক্তারা মনে করছেন, সরকারের উচিত হবে এই মুহূর্তে দাম না বাড়িয়ে মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা।