বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:৩৫:০১

ফিরোজা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মেয়েকে ওরা শেষ করে দিয়েছে

ফিরোজা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মেয়েকে ওরা শেষ করে দিয়েছে

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তৈরি করা আপ'ত্তিকর ভিডিওর জেরে লালমনিরহাটের আদিতমারীতে সুলতানা পারভীন সোহা (২০) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় আ'ত্মহ'ত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে সুলতানার পরিবার বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বিকেলে আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।

মৃত সুলতানা পারভীন সোহা আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের সিদ্দিক আলীর মেয়ে। প্রায় ১০ মাস আগে একই এলাকার জাপানপ্রবাসী আশরাফুল ইসলাম অনিকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিয়ের পর স্বামী অনিক জাপানে অবস্থান করলেও সুলতানা পারভীন দেশেই ছিলেন। অনিক তার স্ত্রীকে জাপানে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভিসার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করেছিলেন। কিন্তু এর মধ্যেই এআই ব্যবহার করে তৈরি করা একটি আপ'ত্তিকর ভুয়া ভিডিও সুলতানার জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে। গত ৬ এপ্রিল নিজ বাড়িতে আ'ত্মহ'ত্যা করেন তিনি।

অভিযোগ উঠেছে, সুলতানার ননদের স্বামী (অনিকের বোন জামাই) পর্তুগাল প্রবাসী মোহাম্মদ নাহিন শেখ ওরফে মৃদুল এ বিয়ে মেনে নিতে পারেননি। তিনিই পরিকল্পিতভাবে এআই ব্যবহার করে সুলতানার ছবি দিয়ে আপ'ত্তিকর ভিডিওটি তৈরি করেন এবং একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে সেটি ছড়িয়ে দেন। ভিডিওটি প্রথমে সুলতানাকে এবং পরে তার স্বামী অনিককেও পাঠানো হয়। 

এই ভুয়া ভিডিওর কারণে নবদম্পতির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয় এবং সুলতানা মানসিক চাপের শিকার হন বলে অভিযোগ পরিবারের। পরবর্তীতে ভিডিওটি ভুয়া এবং এর পেছনে নাহিন শেখের সম্পৃক্ততার বিষয়টি জানা গেলেও ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। আত্মহত্যার আগে সুলতানা তিন পৃষ্ঠার একটি সুইসাইড নোট রেখে গেছেন, যেখানে তিনি নাহিন শেখকে দায়ী করে ন্যায়বিচারের আর্জি জানিয়েছেন। 

সুলতানার মা ফিরোজা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মেয়েকে ওরা শেষ করে দিয়েছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। 

সুলতানার ভাই আলিমুল ইসলাম বলেন, ভিডিওটি পাওয়ার পর আমার বোন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। আমরা ওকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। সকলের অগোচরে সে এমন সিদ্ধান্ত নিলো। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

জাপান থেকে ভিডিও কলে স্বামী আশরাফুল ইসলাম অনিক সাংবাদিকদের বলেন, আমি সোহাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। তাকে জাপানে আনার সব ব্যবস্থাও প্রায় চূড়ান্ত ছিল। কিন্তু আমার বোন জামাই নাহিন এই বিয়ে মেনে না নেওয়ায় পরিকল্পনা করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি এর আইনি প্রতিকার চাই, বিচার চাই। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত পর্তুগাল প্রবাসী মোহাম্মদ নাহিন শেখ ওরফে মৃদুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আদিতমারী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী আকবর জানান, এ ঘটনায় প্রথমে একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার মৃতের পরিবার আত্মহ'ত্যার প্ররোচনার একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে