শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫, ০৮:০৮:১৯

কমতে কমতে অবশেষে আলুর কেজি কত হলো জানেন?

কমতে কমতে অবশেষে আলুর কেজি কত হলো জানেন?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ আলু চাষ হয়েছে রংপুরে। তবে চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না তারা। হিমাগারে যে সংরক্ষণ করে রাখবেন, সেখানেও বাগড়া। হিমাগারের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন মালিকরা।

রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর (২০২৪-২৫ মৌসুম) আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৩ হাজার ৯৫০ হেক্টর। অথচ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে জেলায় এবার আলু আবাদ হয়েছে ৬৬ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে। গত বছর ৫৩ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আলুর উৎপাদন হয়েছিল ১৫ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ লাখ মেট্রিক টন। তবে তা ২০ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

রংপুর ছাড়াও নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটে এবার আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল এক লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে এক লাখ ১৯ হাজার ৮৩৯ হেক্টর।

কৃষকরা বলছেন, গতবছর এসময় যে আলু ২৫-৩০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে, সেখানে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১২-১৩ টাকা কেজি দরে। বর্তমানে আলুর বাজার দ্রুত নেমে যাওয়ায় আলু চাষিরা লোকসানের আশঙ্কা করছেন।

রংপুর সিটি করপোরেশনের ময়নাকুঠি এলাকার কৃষক বদরুল আলম জাগো নিউজকে জানান, এবার দুই বিঘা (স্থানীয়ভাবে ২৭ শতকে এক বিঘা) জমিতে ক্যারেজ জাতের আলু আবাদ করেছেন। জমি লিজ ও বীজের দামসহ আবাদে মোট খরচ হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। বর্তমানে আলুর দাম খুবই কমতি। এজন্য সব আলু জমি থেকে উত্তোলন করেননি।

গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘন্টা এলাকার চাষি নজরুল ইসলাম জানান, জমি লিজ নিয়ে তিনি ২৭ শতক জমিতে আলু চাষ করেছেন। প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু আলু বিক্রি করে আশানুরূপ লাভ হয়নি। বাকি আলু উত্তোলন করলেও তেমন লাভ হবে না। হিমাগারে রাখবেন, তাতেও সমস্যা। কারণ এবার হিমাগারের ভাড়া বেড়েছে।

একইভাবে হতাশার কথা বললেন নগরীর চব্বিশ হাজারি এলাকার চাষি কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার ফলন ভালো হয়েছে। তবে বর্তমানে যে দাম তাতে বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে। হিমাগারে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিন্তু তাতেও বাগড়া। হিমাগারের ভাড়া বেড়েছে।’

পীরগাছা উপজেলার কান্দি এলাকার কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান, এক বিঘা জমিতে আলু উৎপাদনে খরচ ৩৫-৪০ হাজার টাকা। উৎপাদন হয়েছে ৭০-৮০ মণ। বর্তমানে প্রতিমণ আলুর দাম ৪৮০-৫২০ টাকা। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের।

নিজস্ব জমিতে আলু চাষ করেছেন বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের কৃষক রেফাজ উদ্দিন। এতে অন্যদের তুলনায় তার খরচ কিছুটা কম হয়েছে। তিনি বললেন, বাজারে এখন আলুর যে দাম তাতে আশানুরূপ লাভ হবে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আফজাল হোসেন জানান, রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আলু চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিবছর রংপুর অঞ্চলে আলু চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত থাকে। উৎপাদিত আলু দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বাদে বিদেশেও রপ্তানি হয়।

তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগ সবসময় চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছে। তবে চাষিরা হিমাগারের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে আলু সংরক্ষণ করলে, এখন যে বাজারমূল্য তার চেয়ে বেশি দাম পাবেন বলে আশা করি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে