বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:৪৩:৫৮

আজ হঠাৎ পেঁয়াজের কেজি কত হলো জানেন?

আজ হঠাৎ পেঁয়াজের কেজি কত হলো জানেন?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। গত শুক্রবারে যেখানে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়, বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

পুরো রমজানে স্বস্তি দেয়া পেঁয়াজের বাজারে যেন হঠাৎ আগুন লেগেছে। কারণ পেঁয়াজের ভরা মৌসুম হলেও রাজধানীর বাজারে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। দাম বাড়ার এই প্রবণতা শুরু হয় মূলত পহেলা বৈশাখ থেকে। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, দাম কেন বাড়ছে, তার সুনির্দিষ্ট কারণ তাদের জানা নেই। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আলমগীর বলেন, ‘খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি হালি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে দাম। কেন বেড়েছে বুঝতেছি না।’

আরেক বিক্রেতা নয়ন বলেন, ‘দাম বাড়ার পেছনে খুচরা বিক্রেতাদের কোনো হাত নেই। পাইকারি বাজার থেকে যে দামে কিনি, সেই অনুযায়ী বিক্রি করি। আমরা নিজেরাও জানি না কেন এমন বাড়ল। দাম বাড়ায় কমেছে বেচাকেনাও।’

একই অভিযোগ পাইকারদেরও। তারা বলছেন, ‘আড়ত থেকেই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা জুবায়ের জানান, পাইকারিতে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। আড়তে ও মোকামে দাম বাড়ায় পাইকারিতেও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।

তবে আড়তদাররা জানাচ্ছেন ভিন্ন কথা। তাদের ভাষ্য, এবার মুড়িকাটা পেঁয়াজে কৃষকরা দাম না পেয়ে লোকসান গুনেছেন। ফলে তারা হালি পেঁয়াজ সব বাজারে না ছেড়ে মজুতের দিকে ঝুঁকছেন। এতে সরবরাহ কমে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে আড়ত, পাইকারি ও খুচরা—সব পর্যায়েই।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিনহাজ বাণিজ্যালয়ের খলিল বলেন, আড়তে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৪৮ টাকায়। মূলত কৃষকরা পেঁয়াজ মজুত করায় সরবরাহ কমছে। এতে দামে প্রভাব পড়েছে।

আরেক আড়তদার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজে এবার কৃষকরা ন্যায্য দাম পাননি। ফলে লোকসানের আশঙ্কায় অনেকেই এখনই পেঁয়াজ বিক্রি না করে মজুত করে রাখছেন। আর সেই সুযোগেই বাজারে সরবরাহ কমে গিয়ে তৈরি হয়েছে কৃত্রিম সংকট।

পেঁয়াজের দামের হঠাৎ এই ঊর্ধ্বমুখীতায় বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। তাদের দাবি, বাজারে নতুন করে সিন্ডিকেট শুরু হয়েছে। পাইকারি, মোকাম ও আড়তে এখন থেকেই নজরদারি বাড়াতে হবে, তা না হলে সামনে পেঁয়াজের দাম আরও বেড়ে যাবে।

মাইদুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, পুরো রমজানে যেখানে পেঁয়াজের দাম বাড়েনি, সেখানে এখন দাম বাড়াটা অস্বাভাবিক। এখন হালি পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। সরকারের উচিত অবিলম্বে বাজারে মনিটরিং জোরদার করা। না হলে কোরবানির ঈদের আগে বাজার চরম অস্থির হয়ে উঠতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ কমেছে ঠিকই, তবে যে হারে দাম বাড়ছে, তা অস্বাভাবিক। আবারও বাজার সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়েছে, যারা কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে মুনাফা লুটছে।

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, পেঁয়াজের আকস্মিক দাম বৃদ্ধির বিষয়টি ব্যবসায়ীদের নেতিবাচক ব্যবসা চর্চার ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার এবং এ খাতে মধ্যসত্ত্বভোগীদের কারসাজির অংশ। আগে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসতে বিলম্ব হলেই এখানে দাম বেড়ে যেতো। এখন পেঁয়াজের আড়তদার, কমিশন এজেন্টস, দাদন ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ কিনে মজুত করে রাখছেন। সে কারণে দাম বেড়েছে। অন্যদিকে পেঁয়াজের বাজারে কোনো তদারকি হয় না। ভোক্তা অধিদফতর বা জেলা প্রশাসন এখানে কোনো তদারকি করে না।

তিনি আরও বলেন, আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত, সে কারণে কৃষক বিক্রি করতে পারলো কি পারলো না, এটা তাদের মাথাব্যথা না। আর আমাদের এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর এখন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে সব সময় কোনো না কোনো পণ্য নিয়ে খেলা, অতি মুনাফা করা। সয়াবিন তেল, চাল গেল, এবার পেঁয়াজের পালা। পালাক্রমে তারা সবগুলো পণ্য নিয়ে কারসাজি করবে, আর এটা নিয়ে বেশি হৈ চৈ হলেই তখন সরকারের টনক নড়বে।

বাজার তদারকি জোরদারের পাশাপাশি কৃষকরা যেন সরাসরি ভোক্তার কাছে বিক্রি করতে পারেন সেজন্য কৃষকের হাট করার পরামর্শ জানিয়ে তিনি বলেন, আর আড়তদার ও কমিশন এজেন্টরা যেন দাদন নিয়ে অগ্রিম কিনে কৃষকদেরকে জিম্মি করতে না পারেন সেজন্য প্রকৃত কৃষক পর্যায়ে ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে ঋণ প্রদানে নিয়োজিত এনজিওদেরকে এ কাজে যুক্ত করতে হবে।

আড়তদার ও কমিশন এজেন্টদের তৎপরতা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে এই মধ্যসত্ত্বভোগীদের তৎপরতা বন্ধে প্রয়োজনে গোয়েন্দা ও স্থানীয় সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে। এই মধ্যসত্ত্বভোগীদের কারণে কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পান না আর ভোক্তাদেরকে বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হতে হচ্ছে।

এদিকে, নিয়মিত বাজার মনিটরিং এবং ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে, ঈদের আগে এই সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার শঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।  

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে