এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে চড়া হয়েছে, যা সাধারণ ভোক্তাদের কাঁধে বাড়তি চাপ ফেলছে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে, যা প্রায় ৩০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি। মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৬৫ টাকা হয়েছে।
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি: হঠাৎ কেন এমন পরিস্থিতি
বাজারে হঠাৎ এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ী, চাষি ও আড়তদাররা জানিয়েছেন যে বর্তমানে মাঠে আর কোনো পেঁয়াজ নেই। সমস্ত পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠে গেছে এবং সেসব সংরক্ষণ করা হচ্ছে ভবিষ্যতের উচ্চ মূল্যের আশায়। এর ফলে বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।
টিসিবির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ থেকে ৫০ টাকা। এই সপ্তাহে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ থেকে ৬৫ টাকা। অন্যদিকে, বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি অত্যন্ত সীমিত, ফলে দেশি পেঁয়াজের ওপর চাহিদা বেড়েছে।
উৎপাদনস্থলে পেঁয়াজের বাজারদর
পেঁয়াজ উৎপাদনের প্রধান অঞ্চল পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম এখন ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা, যা আগের তুলনায় ৭০০-৮০০ টাকা বেশি। ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার বাজারে মণপ্রতি দাম এখন ১৮৫০-১৯০০ টাকা। মানিকগঞ্জেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এই পাইকারি মূল্য ঢাকায় এসে খুচরা বাজারে পৌঁছাতে পৌঁছাতে কেজিতে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় পৌঁছেছে। ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ চেইনের প্রতিটি স্তরেই বাড়তি চাপ পড়েছে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের পকেটেই চাপ সৃষ্টি করছে।
চাষিদের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রতিবন্ধকতা
কৃষকেরা বলছেন, এবার পেঁয়াজ চাষে তাদের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হয়েছে। রমজানে অনাবৃষ্টির কারণে তিন বার সেচ দিতে হয়েছে, ফলে খরচ বেড়েছে। অনেকেই বলেন, এই দাম না বাড়লে তারা উৎপাদন খরচও তুলতে পারতেন না।
ফরিদপুরের এক কৃষক জানান, “মুড়িকাটা পেঁয়াজে ভালো দাম পাইনি, তাই এখন সংরক্ষণযোগ্য পেঁয়াজ বিক্রি করছি না। দাম বাড়লে পরে বিক্রি করব।” এতে বোঝা যায়, সংরক্ষণ ব্যবস্থা ভালো হলে কৃষকরা আরও সুফল পেতে পারেন।
বাজারে আমদানি পেঁয়াজের ঘাটতি
এ বছর ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অনেক কম হয়েছে। ফলে দেশি উৎপাদনের ওপর চাপ পড়েছে। আমদানি ঘাটতি পূরণ না হলে সামনের দিনে আরও দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আমদানি নির্ভরতার পরিবর্তে দেশীয় উৎপাদন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে হবে।
সরকারি পর্যবেক্ষণ ও উদ্যোগের অভাব
বর্তমানে বাজার মনিটরিংয়ের অভাব এবং মজুতদারদের অতি লোভের কারণে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে। টিসিবি বাজার পর্যবেক্ষণ করলেও সরাসরি হস্তক্ষেপ বা অভিযান দেখা যাচ্ছে না। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত না হলে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
ভোক্তারা কী বলছেন?
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা শাহনেওয়াজ বলেন, “সয়াবিন তেল, চাল, সবজির দাম এমনিতেই চড়া। এখন আবার পেঁয়াজের দাম বাড়ল। মাস শেষে খরচ মেলাতে কষ্ট হচ্ছে।”
খুচরা বিক্রেতারা বলেন, “কেনার সময় আমাদেরই বেশি দাম দিতে হচ্ছে, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।” তবে ক্রেতাদের মতে, সরকারের নজরদারি না থাকলে এই দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
সমাধানের দিকনির্দেশনা
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষকের উৎপাদন খরচ এবং ন্যায্য মুনাফা নিশ্চিত করেও একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য সরকারি উদ্যোগে আধুনিক কোল্ড স্টোরেজ গড়ে তোলা, আমদানি নির্ভরতা কমানো এবং সরবরাহ ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ করা দরকার।
পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ কী?
পেঁয়াজ সংরক্ষণ, বাজারে কম সরবরাহ, আমদানি কম এবং ভবিষ্যতের দাম বৃদ্ধির আশায় বাজারে পেঁয়াজ কম আসাই মূল কারণ।
এই দাম বৃদ্ধিতে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন?
আংশিকভাবে হ্যাঁ, তবে দাম আরও না বাড়লে কৃষকের উৎপাদন খরচ উঠছে না। অনেকেই এখনও মজুত করে রেখেছেন।
সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি কী বলছে?
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম বেড়েছে গত সপ্তাহে।
পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ার প্রভাব কতটা?
ভারতীয় পেঁয়াজ না আসায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বেড়েছে এবং দাম দ্রুত বেড়েছে।
ভবিষ্যতে দাম আরও বাড়তে পারে কি?
হ্যাঁ, যদি বাজারে সরবরাহ না বাড়ে ও আমদানি শুরু না হয়, তাহলে আরও মূল্যবৃদ্ধি হতে পারে।