এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : আইনের চোখে জমির প্রকৃত মালিক হচ্ছেন তিনি, যার নামে দলিল রয়েছে। দলিল মানে হচ্ছে বিক্রয় চুক্তিপত্র বা দলিল রেজিস্ট্রেশন, যার মাধ্যমে মালিকানা হস্তান্তর হয়। দলিল ছাড়া কেবল কথাবার্তার ভিত্তিতে মালিকানা দাবি করলে সেটি আইনের চোখে গ্রহণযোগ্য নয়। জমির দলিল, খতিয়ান, নামজারি, ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ—সব মিলেই জমির বৈধ মালিকানা প্রমাণিত হয়। কেবল দখলে থাকলে বা বসবাস করলেই জমির মালিক হওয়া যায় না।
অনেক সময় দেখা যায়, দলিল অন্যের নামে থাকলেও দখলে রয়েছে ভিন্ন কারো। অর্থাৎ কেউ হয়তো জোরপূর্বক, আত্মীয়তার সুযোগে বা স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে জমি দখল করে রেখেছেন। গ্রামবাংলায় এ চিত্র খুবই পরিচিত। এই পরিস্থিতিকে বলা হয় “দখল ভিত্তিক মালিকানা দাবি”, যা কার্যত বেশ জটিল ও বিবাদপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে কেউ যদি দখলে থাকেন, এবং প্রকৃত মালিক কোনো পদক্ষেপ না নেন, তাহলে ওই ব্যক্তি অধিকার দাবি করতে পারেন ‘স্বত্বসুরক্ষা’ (adverse possession) আইনের অধীনে—যদিও তা প্রমাণ করা কঠিন।
আইন যা বলে: নির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ (ধারা ৮)
এই ধারায় বলা হয়েছে:
"যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে জমি থেকে উৎখাত হয়েছে, সে ব্যক্তি তার দখল পুনরুদ্ধারের জন্য আদালতের শরনাপন্ন হতে পারবেন।" অর্থাৎ, মালিকানা থাকা সত্ত্বেও যদি কাউকে বেআইনিভাবে জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয় বা দখল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তবে তিনি আদালতে মামলা করতে পারবেন এবং জমি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
জমি পুনরুদ্ধারের ৪টি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত
কিন্তু এই ধারা অনুসারে মামলা করতে হলে চারটি মূল শর্ত পূরণ করতে হবে:
জমির মালিকানা প্রমাণ করার জন্য প্রয়োজন হবে বৈধ দলিল, খতিয়ান, নামজারি কাগজ ও ট্যাক্স পরিশোধের প্রমাণপত্র।
আপনি সত্যিকার অর্থে জমির দখলে ছিলেন কিনা:
অর্থাৎ, আপনি জমিটি ব্যবহার করতেন, চাষ করতেন বা বসবাস করতেন কি না—এই প্রমাণ দিতে হবে।
আপনার সম্মতি ছাড়া অন্য কেউ দখল করেছে কিনা:
যদি জোরপূর্বক, প্রতারণা করে বা মালিকের অজ্ঞাতসারে কেউ জমি দখল করে নেয়, তবে সেটি ‘বেআইনি দখল’ হিসেবে গণ্য হয়।
১২ বছরের মধ্যে মামলা করা হয়েছে কিনা:
জমি বেদখলের ১২ বছরের মধ্যে মামলা না করলে আপনার মালিকানা দাবি ‘প্রেসক্রিপটিভ রাইট’-এর মাধ্যমে হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাই সময়ের মধ্যেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
১৯০৮ সালের তামাদি আইন ও ২৮ ধারা:
বাংলাদেশের ভূমি আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি টানা ১২ বছর কারো জমি বিনা বাধায়, শান্তিপূর্ণভাবে ও মালিক সেজে ভোগদখলে রাখেন, তাহলে তিনি সেই জমির মালিকানা দাবি করতে পারেন। এ বিষয়টি ১৯০৮ সালের তামাদি আইন (Limitation Act), ধারা ২৮-এ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তামাদি আইন, ১৯০৮ - ধারা ২৮ কী বলে?
“যে ব্যক্তি অপরের সম্পত্তি নিরবিচারে, টানা ১২ বছর ধরে, মালিকানা দাবিতে ভোগদখল করেন এবং প্রকৃত মালিক কোনো আপত্তি করেন না, তাহলে সেই ব্যক্তি মালিকানা দাবি করতে পারবেন। আর প্রকৃত মালিকের মালিকানা আইনি দৃষ্টিতে তামাদির মধ্যে পড়ে যাবে।”
অর্থাৎ, ১২ বছর পার হলে প্রকৃত মালিক আর জমি ফেরত চেয়ে মামলা করতে পারবেন না। এতে জমির মালিকানা দখলদার ব্যক্তির হাতে চলে যেতে পারে।