এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রাজধানীর বাজারে নিত্যপণ্যের দামে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। সবজিগুলো এখন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ছে ব্রয়লার মুরগির দামও। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেশিরভাগ সবজির দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বেগুন, করলা, ঢেঁড়স, শসা, কাঁচা মরিচ, পটোল—সব কিছুর দামই ঊর্ধ্বমুখী। আগে যেসব সবজি ৫০-৬০ টাকায় মিলত, এখন সেগুলোর দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে পৌঁছেছে।
শুক্রবার (৯ মে) রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে দেখা গেছে, করলা বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা, বেগুন ৮০-১০০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০-৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০-৯০ টাকা, কাঁকরোল ১০০-১৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০-৭০ টাকা, ঝিঙে ৭০-৮০ টাকা, টমেটো ৩০-৪০ টাকা দরে। এছাড়া পেঁপে ৭০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, শসা ৭০-৮০ টাকা, পটোল ৭০-৮০ টাকা, সজনে ডাটা ১২০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চালকুমড়া ও লাউয়ের দাম তুলনামূলক কিছুটা সহনশীল। প্রতি চালকুমড়া ৪০ টাকা এবং লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। তবে সবজির মান ও বাজারভেদে কিছুটা দাম ওঠানামা করছে।
শুধু সবজি নয়, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দামও চড়া। দুই সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। আদা ও রসুনেও রয়েছে একই প্রবণতা।
মুরগির বাজারেও দেখা দিয়েছে নতুন চাপ। ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে এখন ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালী মুরগি ৩২০ টাকা, কক ৩৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফিডের দাম বৃদ্ধি, খামারে উৎপাদন কমে যাওয়া এবং পরিবহন ব্যয় বাড়ায় এই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অনেকে মনে করছেন, এই সুযোগে এক শ্রেণির মজুতদার ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বাড়িয়ে চলছে।
তবে গরু ও খাসির মাংসের দাম এখনো আগের মতোই রয়েছে। গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছাগলের মাংস ১১০০ টাকা কেজি।
মাছের বাজার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। রুই ৩৫০-৪২০ টাকা, কাতল ৩৮০-৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, মাগুর ৫০০ টাকা, কৈ ২০০-২৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, পাঙাশ ১৮০-২৩৫ টাকা এবং তেলাপিয়া ১৫০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সামুদ্রিক মাছের মধ্যে সুরমা, রুপচাঁদা, লাল কোরাল ও বাটা মাছ ২০০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারভেদে এসব মাছের দাম ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমবেশি হচ্ছে।
বাজার করতে আসা অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যাত্রাবাড়ীর গৃহিণী জেনি খাতুন বলেন, ‘সবজির দাম শুনলেই ভয় লাগে। মুরগি কিনতে গেলেও একই অবস্থা। এখন ডাল-ভাত খেয়েই দিন চলাতে হবে।’
একই কথা বলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. আব্দুল্লাহ। তার ভাষায়— ‘মাসের শুরুতেই বাজারে গিয়ে পুরো বেতন ফুরিয়ে যায়। সরকার এখনই কিছু না করলে সামনে মানুষ আর বাজারে যেতে পারবে না।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার ব্যবস্থাপনায় নজরদারির ঘাটতি এবং সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতাই এই পরিস্থিতির মূল কারণ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন—টিসিবির মাধ্যমে কম দামে পণ্য সরবরাহ বাড়ানো, বাজার মনিটরিং জোরদার করা, কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য সংগ্রহ করা এবং মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।
তাদের মতে, কৃষি উৎপাদন এবং পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন।