এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : গত বছরের জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানের সময় গণভবনে যা ঘটেছিল, তা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সেই সময়কার ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
ট্রাইব্যুনালে শুনানিতে তিনি জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সকালে সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়ার পরামর্শ দিলে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘তাহলে তোমরা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলো, গণভবনে কবর দিয়ে দাও।’
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত রোববার ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর। তিনি শুনানিতে ৪ ও ৫ আগস্টের কিছু ঘটনাবলি তুলে ধরেন, যার বর্ণনা আনুষ্ঠানিক অভিযোগেও উল্লেখ রয়েছে।
উত্তপ্ত রাতের বৈঠক
৪ আগস্ট রাতের একটি বৈঠককে ‘উত্তেজনাপূর্ণ ও ভয়ংকর’ আখ্যা দেন চিফ প্রসিকিউটর। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা।
সেই রাতেই প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের পরামর্শ দিলে তিনি রাজি হননি। বরং সেনাপ্রধানকে বিক্ষোভ দমনে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন। তখন তারিক সিদ্দিক হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর পরামর্শ দিলে বিমানবাহিনীপ্রধান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তিনি (তারিক) আপনাকে ডুবিয়েছেন এবং আরও ডুবাবেন।’
‘গ্যাং অব ফোর’-এর পরামর্শ
শেখ হাসিনাকে ‘কঠোর’ অবস্থানে থাকার পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগের চার শীর্ষ নেতা—ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান, আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমান। চিফ প্রসিকিউটর তাদের ‘গ্যাং অব ফোর’ বলে উল্লেখ করেন।
শেখ রেহানার আকুতি
৫ আগস্ট সকালে অনুষ্ঠিত আরেকটি বৈঠকে তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন জানান, বাহিনী ক্লান্ত, অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফুরিয়ে আসছে। সামরিক কর্মকর্তারা আবারও শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন।
চিফ প্রসিকিউটর জানান, পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝিয়ে শেখ হাসিনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা। এমনকি তিনি শেখ হাসিনার পা জড়িয়ে ধরেন। এরপর সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে কথা বলেন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, জয়কে সামরিক কর্মকর্তারা বলেন, প্রাণে বাঁচাতে হলে তার মায়ের পদত্যাগ করা ছাড়া উপায় নেই। সময় গুরুত্বপূর্ণ। আর এখনই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন জয় এবং তাঁর কথায় ক্ষমতা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা।
ভাষণ প্রচারে নিষেধাজ্ঞা
শেখ হাসিনা বিদায়ের আগে জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ রেকর্ড করতে চাইলেও সেনা কর্মকর্তারা তাতে অনুমতি দেননি। সময় স্বল্পতায় তাকে ৪৫ মিনিট সময় দেওয়া হয় প্রস্তুতির জন্য।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ৫ আগস্ট দুপুর ২টায় সেনাপ্রধানের বক্তব্য প্রচারের কথা জানানো হলেও তা প্রচার হয় বিকেল ৪টায়। এর আগেই শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। সূত্র : প্রথম আলো।