এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে অংশ নিয়ে বেশ রেগে যান। নাগরিক টিভির ইউটিউব চ্যানেলের এডিটর ইন চিফ নাজমুস সাকিবের সঙ্গে টেলিফোনে এই সাক্ষাৎকারে তিনি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গণআন্দোলন, ভারতীয় গণমাধ্যমে দেয়া তার পুরনো বক্তব্যসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারের শুরুতে ভারতের একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া তার বক্তব্য ঘিরেই প্রশ্ন তোলা হয়। সাকিব জানতে চান—৫ আগস্ট আন্দোলনের সময় কাদের বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন কিনা। উত্তরে কাদের বলেন, এছাড়া কি উপায় ছিল?
সাংবাদিক যখন জানতে চান, ছাত্রদের সহায়তায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন কিনা—তখন কাদের বলেন, হ্যাঁ এটাও তো ঠিক।
তবে এরপরই প্রশ্ন-উত্তরে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
নাজমুস সাকিব বলেন, অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয় যে ছাত্ররাই তাকে রক্ষা করেছে। জবাবে কাদের বলেন, ওরা (ছাত্ররা) বলছিল, আপনার প্রতি রাগ ছিল, কিন্তু সামনে এসে আমাদের রাগ পানি হয়ে গেছে।
পরবর্তীতে জানতে চাওয়া হয়, তিনি আন্দোলনের সময় তিন মাস দেশে ছিলেন, এরপর কীভাবে বিদেশ গেলেন? কাদের বলেন, এটা কি বলা যায়? তখন তল্লাশি হচ্ছিল, শরীর খারাপ হচ্ছিল, অনেক ওষুধ লাগে। আমি ভাবলাম ধরা পড়লে ওষুধ খাওয়ানোর লোক থাকবে না। তাই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
এরপর সরাসরি প্রশ্ন আসে—আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের যে ক্ষোভ জন্মেছে, তা কি যুক্তিযুক্ত ছিল না? উত্তরে কাদের সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্প, যেমন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কথা তুলে ধরেন। তবে ভোট নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। আমাদেরও দৃষ্টিভঙ্গি আছে। আমাদের দেশে গণতন্ত্রের কাঠামোটা ভিন্ন। আমরা একটা লিগ্যাল ইলেকশন করেছি।
সাংবাদিক যখন বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন, এটি কি লজ্জাজনক নয়? কাদের বলেন, না, আমি মনে করি না। তাকে হত্যা করার প্ল্যান ছিল। তাই বাঁচার জন্যই দেশ ছাড়তে হয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ তুলে বলা হয়, তিনি অসুস্থ হয়েও দেশ ছাড়েননি। উত্তরে কাদের বলেন, শেখ হাসিনা কোনো কম্প্রোমাইজ করেননি, বরং বেঁচে থাকার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সাক্ষাৎকারে বারবার কাদের ‘পাবলিক অপিনিয়ন’ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, মানুষ চায় শেখ হাসিনা আবার আসুক।
তবে যখন সাংবাদিক বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবাই পলাতক, তখন কাদের বলেন, দি সান রাইজেস... বাট ডিনাই... বিফোর। এরপর বলেন, আমরা এই অবস্থার মধ্য থেকেও ঘুরে দাঁড়াতে পারি।
তখন সাংবাদিক প্রশ্ন তোলেন—আওয়ামী লীগ এই অবস্থায় পড়ল কেন? উত্তরে কাদের বলেন, যারা আন্দোলনে ছিল তারাও এখন মনে করছে তারা ভুল করেছে।
সাংবাদিক জানতে চান, মানুষ যদি আপনাদের সমর্থন করে, তাহলে কেন দেশে ফেরেন না? জবাবে কাদের বলেন, সময় হলে দেখবেন।
এরপর প্রশ্নোত্তর রূপ নেয় বাগবিতণ্ডায়। কাদের বলেন, সাংবাদিক বায়াসড, পক্ষপাতদুষ্ট। আপনি পক্ষ হয়ে কথা বলছেন। ইউনূসপন্থী বা ফান্ডামেন্টালিস্টদের মতো কথা বলছেন। তিনি আরও বলেন, আমার ইন্টারভিউর দরকার কী? আপনি তো সেটা প্রচারই করতে পারবেন না।
সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল—আপনারা জনগণের কাছে ক্ষমা চাইবেন কিনা? উত্তরে কাদের বলেন, দেশে ফিরে আলোচনা করে যদি ভুল হয়ে থাকে, তখন বলবো। বিদেশে বসে নয়।
সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে কাদের বলেন, আপনার মুখ, আপনার বক্তব্য... যদি আমরা ফিরি, তখন তো আপনাকে খুঁজেও পাওয়া যাবে না। এতে সাংবাদিক পাল্টা বলেন, তাহলে কি আপনারা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে যাবেন?
কাদের বলেন, না, আমরা করবো না। কিন্তু আপনি পালাবেন। আপনি নিজেই জানেন, আপনি কী করতেছেন।
সাংবাদিক বলেন, তাহলে আপনাদের সময় আবার ফিরে আসলে, কঠিন প্রশ্ন করলেই আমাদের দেশ ছাড়তে হবে? উত্তরে কাদের বলেন—এটা কঠিন প্রশ্ন না, শত্রুতামূলক প্রশ্ন।
শেষে সাংবাদিক আবারও বলেন, আমি শুধু সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করছি। এরপর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।