এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী আজ। ১৯৮১ সালের এই দিন রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে একদল বিপথগামী সৈনিকের হাতে নিহত হন তিনি। তখন ক্ষণজন্মা এই রাষ্ট্রনায়কের বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৫ বছর। এ উপলক্ষ্যে বিএনপি ৮ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
গত ১৬ বছর স্বাধীনতার ঘোষকের শাহাদতবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিল বিএনপি। তবে দলটির দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের আন্দোলনের পথ ধরে গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটে এবং শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার দীর্ঘ সময় পর যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বিএনপি।
জিয়াউর রহমান তার ঘটনাবহুল কর্মময় জীবন দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসন অলঙ্কৃত করে আছেন। নানা কারণে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে স্থান করে নিয়েছেন। তার সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম, পরিশ্রমপ্রিয়তা, নেতৃত্বের দৃঢ়তা ইত্যাদি গুণাবলি এ দেশের গণমানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। মাত্র ৬ বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। এ সময়ে সাধারণ মানুষ তার ওপর ছিল প্রচণ্ড আস্থাশীল। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তার ওপর মানুষের এ আস্থায় চিড় ধরেনি।
জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাকুলে অফিসার ক্যাডেট হিসাবে ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসাবে কমিশন লাভ করেন। সামরিক জীবনে কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যেও তিনি একের পর এক কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র জনতার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, জিয়াউর রহমান তখন চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বিশ্ব সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের মানুষের এ ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামে সমর্থনের আবেদন জানান।
৯ মাসের মুক্তি সংগ্রামে তিনি একটি সেক্টরের অধিনায়ক হিসাবে সমর নায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি লাভ করেন ‘বীর উত্তম’ খেতাব। ১৯৭৫ সালের ২৫ আগস্ট সেনাপ্রধান হন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লব তাকে রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে যায়। ছয় বছরের শাসনামলে জিয়াউর রহমান বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন এবং তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ থেকে এ জাতিকে মুক্ত করেন।
বাণী : শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক বাণীতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জীবদ্দশায় জাতির চরম দুঃসময়ে জিয়াউর রহমান দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। ৭১ সালের প্রারম্ভে সারা জাতি যখন স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত, অথচ রাজনৈতিক নেতৃত্বের দ্বিধা ও সিদ্ধান্তহীনতায় দেশের মানুষ দিশেহারা, ঠিক সেই মুহূর্তে ২৬ মার্চ মেজর জিয়ার কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে স্বাধীনতার ঘোষণা সারা জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের অভয়মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। ফলশ্র“তিতে দেশের তরুণ, ছাত্র, শ্রমিক, যুবকসহ নানা স্তরের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। হানাদার বাহিনীর ধ্বংসের শক্তিকে প্রতিহত করে দেশবাসী বিজয়ের দিকে ধাবিত হয়।
তিনি বলেন, বিজয় লাভের পর দেশীয় শাসকগোষ্ঠীর অগণতান্ত্রিক দমনমূলক শাসন-শোষণের জাঁতাকলে মানুষের প্রাণ হয় ওষ্ঠাগত, দেশের মানুষের নাগরিক অধিকারগুলো হরণ করা হয়, গণতন্ত্রকে দেওয়া হয় মাটিচাপা। চালু করা হয় নির্মম একদলীয় দুঃশাসন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ মানুষের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতাকে উচ্ছেদ করা হয় স্বেচ্ছাতন্ত্রের আক্রমণে। একদলীয় প্রভুত্ববাদের অধীনতার নাগপাশে বন্দি করা হয় সারা জাতিকে।
চলমান অরাজকতার সেই সময়ে সিপাহি-জনতার মিলিত শক্তির মিছিলে জিয়াউর রহমান জাতীয় রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হন। রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেই ফিরিয়ে দেন বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং সংবাদপত্রসহ নাগরিক স্বাধীনতা। গণতন্ত্রের ঐতিহাসিক সার্থকতা নিশ্চিত করেন। শুরু করেন উৎপাদনের রাজনীতির মাধ্যমে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী করা। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির আখ্যা থেকে খাদ্য রপ্তানিকারক দেশে পরিণত করেন। ব্যক্তিজীবনেও দুর্নীতি, মিথ্যা প্রতিশ্র“তি ও সুবিধাবাদের কাছে আÍসমর্পণকে তিনি ঘৃণা করতেন।
তিনি আরও বলেন, এই মহান জাতীয়তাবাদী নেতার জনপ্রিয়তা দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারী শক্তি কখনোই মেনে নিতে পারেনি। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই দেশবিরোধী চক্র তার বিরুদ্ধে শুরু করে গভীর ষড়যন্ত্র। চক্রান্তকারীরা ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে একজন মহান দেশপ্রেমিককে দেশবাসী হারায়।
কর্মসূচি : জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৮ দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিএনপি। এর মধ্যে রয়েছে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা, দোয়া, দুস্থদের মাঝে চাল-ডালসহ বস্ত্র বিতরণ ইত্যাদি। এর অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার বিকালে রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা হবে।
এছাড়া আজ ভোরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় শেরেবাংলা নগরে শহীদ জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি আলোচনা সভা, মসজিদে মসজিদে গণদোয়া এবং দুস্থদের মধ্যে চাল-ডালসহ বস্ত্র বিতরণ করা হবে। বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনগুলো জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বিশেষ পোস্টার প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশ করা হয়েছে বিশেষ ক্রোড়পত্র।
এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে দুস্থদের মাঝে চাল-ডালসহ বস্ত্র বিতরণ করা হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছাড়াও সারা দেশের জেলা ও উপজেলা, থানা ও পৌর ইউনিটগুলোও জিয়াউর রহমানের স্মরণে আলোচনা সভা, দুস্থদের মাঝে খাবার, বস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।