এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : পোলট্রি শিল্পে ব্রয়লারের বাচ্চার দামে ধস নেমেছে। পানির দরে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লারের বাচ্চা! এক মাস আগে যে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ২৭ টাকা, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ টাকা থেকে ৫ টাকায়! এতে করে বিপাকে পড়েছেন ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা উৎপাদনকারীরা।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে এক মাস আগে একদিন বয়সী একটি ব্রয়লার বাচ্চা ২৭ টাকায় বিক্রি হলেও এখন সেই দাম কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ থেকে ৫ টাকার মধ্যে। এই দরপতন অব্যাহত রয়েছে গত দুই সপ্তাহ ধরে।
করিমগঞ্জ থানার তরুণ খামারি সাদ্দাম হোসেন জানিয়েছেন, এক মাস আগে প্রতি পিস ২৭ টাকা দরে ১ হাজার ২০০টি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা তুলেছিলেন খামারের শেডে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বাজারে বাচ্চার দাম কমে এখন দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩-৫ টাকায়। বাচ্চার দামে এই ধসের প্রভাব পড়েছে পূর্ণবয়স্ক ব্রয়লার মুরগির বাজারেও। বর্তমানে খামারিদের বিক্রয়মূল্য উৎপাদন খরচের নিচে নেমে যাওয়ায় সাদ্দামসহ অনেক খামারি পড়েছেন শঙ্কার মুখে।
সরকার নির্ধারিত হিসেবে একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদনে খরচ পড়ে প্রায় ৫৭ টাকা। কিন্তু গত দুই মাস ধরে হ্যাচারি মালিকরা বাচ্চাগুলো ১০ টাকা পর্যন্ত লোকসানে বিক্রি করে আসছেন। বর্তমানে এই লোকসান আরও বেড়ে গেছে- বাচ্চা বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম দামে, ফলে হ্যাচারিগুলো বিপাকে পড়েছে।
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির বিবৃতি / ওষুধের কাচামাল আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট অব্যাহতি শিল্পের জন্য ইতিবাচক
মুরগির বাচ্চা উৎপাদনে জড়িত উদ্যোক্তাদের সংগঠন ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি) জানিয়েছে, বাজারে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত বাচ্চা উৎপাদন হওয়ায় এর দাম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। মানুষের আয় হ্রাস, ৫ আগস্টের পর বহু কারখানা বন্ধ হয়ে শ্রমিকদের চাকরি হারানো এবং চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের চাহিদা ধারাবাহিকভাবে কমে এসেছে। ফলে লোকসানের শঙ্কায় অনেক খামারিই সীমিত পরিসরে মুরগি পালন করছেন।
তারা বলছেন, অন্যদিকে বাচ্চার উৎপাদন থেমে না থাকায় বাজারে সরবরাহ বাড়ছে, অথচ চাহিদা নেই। এ অবস্থায় হ্যাচারিগুলো প্রচণ্ড লোকসানে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক হ্যাচারি কার্যক্রম বন্ধ করার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
বিএবি’র তথ্য অনুযায়ী, চলাতি বছরের এপ্রিল মাসে ব্রয়লার বাচ্চা গড়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও, মে মাসে এই দাম নেমে এসেছে ৮ থেকে ১০ টাকায়। অন্যদিকে, মে মাসে লেয়ার বাচ্চা গড়ে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৪৭ টাকায়। কালার জাতের বাচ্চার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে দামের বড় ধস। এপ্রিল মাসে প্রতি বাচ্চা গড়ে ২৫ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও মে মাসে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৫ থেকে ২০ টাকায়।
ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান জানান, মুরগির বাচ্চা উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে খামারি- সব পর্যায়েই এখন লোকসান চলছে। এই পরিস্থিতিকে তিনি ‘একটি বিপর্যয়’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, বাচ্চার চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত উৎপাদন এই সংকটের একটি বড় কারণ। তবে এর বাইরে মানুষের আয় কমে যাওয়া এবং গার্মেন্টস শিল্পে কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে নির্দিষ্ট অঞ্চল, বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলগুলোতে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা আরও কমে গেছে। এসব মিলিয়ে বাজারে একটি বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
প্রাতিষ্ঠানিক খামারিদের মধ্যে অন্যতম কাজী ফার্মস, যারা ডিম ও মুরগির বাচ্চা- উভয়ই উৎপাদন করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক কাজী জাহিন হাসান বলেন, এক দিনের মুরগির বাচ্চার দাম সরাসরি ব্রয়লার মুরগির বাজারদরের ওপর নির্ভর করে। ব্রয়লারের দাম কমে গেলে খামারিরা বাচ্চা কিনতে আগ্রহ হারান, ফলে বাচ্চার দামও পড়ে যায়। আবার যখন ব্রয়লারের বাজারদর বাড়ে, তখন খামারিরা বাচ্চা কিনতে আগ্রহী হন, ফলে চাহিদা বাড়ে এবং দামও বেড়ে যায়।
তিনি উল্লেখ করেন, এই ওঠানামা প্রাকৃতিক না হয়ে বরং বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যের ওপর নির্ভর করে তৈরি হয়।