এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ঈদুল আজহা সামনে রেখে মানুষ দলে দলে বাড়ির পথে ছুটছে। সেই ব্যস্ত ভিড়ের মাঝেই রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে ঘটে যায় এক ছোট্ট অথচ হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ঘটনা, যা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
বুধবার (৪ জুন) কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শনে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। নিজের গাড়ি থেকে নেমেই দেখতে পান, এক পথশিশু এগিয়ে এসে তাকে সালাম দিচ্ছে। শিশুটির নাম রামিন। বয়স ১২-১৩ বছর হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার দিকে এগিয়ে যান, আর তখনই রামিন তার পা ছুঁয়ে সালাম করার চেষ্টা করে।
এই অনন্য দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি হয়, ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। ভিডিওতে দেখা যায়, উপদেষ্টা তাকে আশীর্বাদ করার পাশাপাশি কিছু অর্থ দিতে চাইলে রামিন বিনয়ের সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করে। সে বারবার বলছিল, “স্যার, টাকা লাগবে না স্যার, না না, টাকা লাগবে না।” ছোট্ট পথশিশুর এই কথায় উপস্থিত সবাই স্তব্ধ।
পরে সাংবাদিকরা তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, “টাকা নিলে মানুষ মন্দ বলবে। এই টাকা দিয়ে দুদিন খাইলেই শেষ হয়ে যাবে। আমার টাকা লাগবে না। উনার দোয়া হলেই চলবে।”
শিশুটির এমন বক্তব্যে মানুষ যেমন বিস্মিত, তেমনি আবেগাপ্লুতও। সবাই তখন শুধু একটিই প্রশ্ন করে—এই শিশু আমাদের সবাইকে এত বড় শিক্ষা দিয়ে গেল কীভাবে!
এই যে একটি পথশিশু—সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত স্তরে অবস্থান যার—সে জানে আত্মসম্মান কী এবং সেটার মূল্য কতো। তার এক বাক্য আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আমরা যারা পদ-পদবী, প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে গর্ব করি, তারা অনেকেই এই নৈতিকতাকে ভুলে বসে আছি।
একটি শিশুর কাছে যদি সম্মান অর্থ-সম্পদের চেয়ে বড় হয়, তবে প্রভাবশালী অনেকের লজ্জিত হওয়া উচিত। যখন রামিন বলে, “মানুষ মন্দ বলবে”—তখন এটি কেবল একটি বাক্য নয়, বরং আমাদের ভোগবাদী মানসিকতার বিরুদ্ধে এক প্রবল প্রতিবাদ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী লেখেন, “গরীব একটা ছেলে। হয়তো সারাদিন কিছু খায়নি। হয়তো তার ঘর নেই। কিন্তু আত্মসম্মান তার আছে, আর সেটাই সবচেয়ে বড় পরিচয়।”
আজকের সমাজে যখন রাজনীতিবিদরা ঘুষ, দুর্নীতি, জবাবদিহিহীনতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেন, তখন এই পথশিশু আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আত্মসম্মানই মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি। সে চায়নি কাউকে দেখিয়ে বলতে, “উনি তো আমাকে টাকা দিয়েছেন।” বরং সে চেয়েছে দোয়া—চেয়েছে সম্মান।
আজ আমরা যাদের ‘টোকাই’, ‘ভিক্ষুক’, কিংবা ‘অপরাধপ্রবণ শিশু’ বলে ডাকি, সেই শ্রেণি থেকেই উঠে এল এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আর আমাদের শিক্ষিত সমাজ কি এই শিশুর কাছ থেকে কিছু শিখবে?
আমরা কি একবার ভাববো—এই শিশুটি, যার ঘর নেই, যার খাবার নেই, যার সুশিক্ষার সুযোগ নেই—সে যদি নৈতিকতা বুঝতে পারে, তবে আমরা কেন পারি না?
সমাজ বদলাবে সেদিন, যেদিন একজন নেতা টুকাইয়ের মতো বলতে পারবে, “মানুষ মন্দ বলবে—আমি এমন কিছু চাই না।”