সোমবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৬:০৪:০৫

শঙ্কায় বিএনপির প্রার্থীরা

শঙ্কায় বিএনপির প্রার্থীরা

কাফি কামাল : সরকার দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিলে তার বিরোধিতা করে বিএনপি। কিন্তু ধানের শীষ  প্রতীকে নির্বাচনের স্বপ্ন নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তৃণমূল নেতৃত্ব।

এক পর্যায়ে ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে উন্মুখ তৃণমূল নেতাদের সে স্বপ্ন দ্রুতই পরিণত হয় দুঃস্বপ্নে। উৎসাহের নির্বাচন পরিণত হয় রীতিমতো আতঙ্কে। প্রথম ধাপে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে নানামুখী প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা।

হুমকি-ধামকি, হামলা-মামলা, পুলিশি হয়রানির কারণে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে শুরু করে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। প্রথম ধাপের নির্বাচনে অন্তত ২০টি ইউপিতে প্রার্থীই পায়নি দলটি। ৫১টি ইউপিতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি দলীয় প্রার্থীরা।

প্রার্থীর সমর্থক ও প্রস্তাবকারীকে জোর করে সমর্থন প্রত্যাহার এবং ফাইল থেকে কাগজপত্র সরিয়ে বাতিল করা হয় অনেকের প্রার্থিতা। কিছু জায়গায় সব নিয়ম-কানুন মেনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও সেটার প্রাপ্তি স্বীকার করছে না স্থানীয় রিটার্নিং কর্মকর্তা। যার কারণে ১১৪টি ইউপিতে প্রার্থীই থাকছে না দলটির। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের প্রক্রিয়া।

প্রথম ধাপের চিত্র দেখে দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহই হারিয়ে ফেলেছেন অনেকেই। কিন্তু দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ায় সম্ভাব্য পরিণতি জেনেও দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে তারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন। অনেক এলাকায় দলের তৃণমূলের সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীকে জোর করে ডেকে এনে হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে মনোনয়নপত্র।

দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ এখন তাদের কাছে জেনে শুনে বিষপানের মতো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তৃণমূলের যে নেতারা প্রথমে দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতিবাচক মনোভাবের সমালোচনা করেছিলেন এখন তারাই উল্টো প্রশ্ন করছেন- নির্বাচন করব না সরকার দলীয় প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডের মোকাবিলা করবো? গতকাল দলটির মনোনয়ন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এমন তথ্য জানিয়েছেন।

বিএনপির বেশ কয়েকজন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা এবং একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জানিয়েছেন, প্রথম দফায় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও দলের প্রত্যয়নসহ সেটা জমা দিতে পারেননি অনেকেই। জমা দিতে পারেননি জামানতের টাকা। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে অনেক জায়গায় ধানের শীষ প্রতীক প্রত্যাশীরা মনোনয়নপত্রই সংগ্রহ করতে পারছেন না।

এদিকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার যুক্ত হওয়ার পর থেকেই বিএনপি প্রার্থীদের লোকজন, প্রার্থীর বাড়ি ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িঘর এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলার জড়ানোর ভয়সহ নানামুখী হয়রানি করা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক প্রার্থী এলাকাতেই যেতে পারছেন না। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে কিভাবে তারা নির্বাচন করবেন সেটাই বুঝতে পারছেন না।

এদিকে বিএনপি প্রার্থীদের অভিযোগগুলো আমলে নিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন। অনেক জায়গায় রিটার্নিং কার্যালয়ের মধ্যেই বিএনপির প্রার্থীর মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নিয়ে ছিড়ে ফেলার ঘটনা ঘটলেও কোন উদ্যোগ নেয়নি কমিশন। অর্ধশতাধিক ইউপিতে প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে রিটার্র্নিং কার্যালয়ে জমা দেয়া ফাইল থেকে কাগজপত্র সরিয়ে। বিএনপির তরফে এমন অভিযোগ আসছে প্রতিদিনই। কিন্তু বিএনপি প্রার্থীদের সব অভিযোগই বস্তাবন্দি হয়ে গুমরে মরছে।

সুনির্দিষ্ট সব অভিযোগ দেয়ার পরও নির্বাচন কমিশনের তরফে বলা হচ্ছে বিএনপির অভিযোগ সুনির্দিষ্ট নয়। বিএনপির অভিযোগগুলো ঢালাও মন্তব্য করে ইসি তরফে বলা হয়েছে, এমন ঢালাও অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব না। তার ওপর অভিযোগ বিবেচনায় জুড়ে দেয়া হয়েছে ৩টি শর্ত। কোথায়, কে, কখন ঘটিয়েছে তা উল্লেখ করতে হবে।

ইতিমধ্যে জমা দেয়া অভিযোগগুলোতে এ তিনটি শর্ত উল্লেখ করা থাকলেও সেটাকে বিবেচনায় নিচ্ছে না কমিশন। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে চিঠি দিয়েছেন বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। পরে তিনি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ করেন।

নানামুখী প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও থেমে নেই বিএনপির ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রক্রিয়া ও প্রস্তুতি। দলটির সিনিয়র নেতারা বলছেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। যত প্রতিকূল পরিস্থিতিই আসুক, নির্বাচন থেকে সরবেন না তারা। তাই প্রথম ধাপের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিতরণ করা হচ্ছে মনোনয়নপত্র, নেয়া হচ্ছে নির্বাচনের প্রস্তুতি। দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিতব্য ৬৭২টি ইউপি নির্বাচনের মধ্যে চার শতাধিক মনোনয়নপত্র বিতরণ করেছে বিএনপি।

ঠাকুরগাঁও জেলার প্রার্থীদের দিয়েই শুরু হওয়া এ প্রক্রিয়া আজকের মধ্যেই সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে। এরপর কোন জায়গায় জটিলতা দেখা দিলে দ্রুততম সময়ে সেটার সমাধান করা হবে। গত দুদিন ধরে মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হলেও কৌশলগত কারণে প্রার্থীদের নামের তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশ করেনি দলটি।

বিএনপির মনোনয়ন দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দলীয় প্রতীক বিশাল একটি সম্মানের বিষয়। দলের সবার মনেই স্বপ্ন থাকে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের। কিন্তু সরকার দলীয় প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের নৈরাজ্যের কারণে নির্বাচনে আগ্রহী বিএনপি নেতারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। অনেক ক্ষেত্রে দল সিদ্ধান্ত নেয়ায় তারা দলের প্রতি আনুগত্যের কারণেই কেবল অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনের যে স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ-উৎসাহ সেটা নেই।

মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা শতভাগ। কিন্তু  নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের দিন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার দিন পর্যন্ত নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা পার হতে হচ্ছে ধানের শীষের প্রার্থীদের।

তিনি বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে ইউপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। আমরা প্রতি পদে পদে প্রমাণ করতে চাই বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে না। বিএনপি এ সত্যটাই দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর সামনে বারবার তুলে ধরতে চায়। -এমজমিন
২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে