এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে প্রথমবারের মতো ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নির্বাচন-সংস্কারসহ চলমান রাজনৈতিক নানা ইস্যুতে আলোচনা হবে তাদের মধ্যে।
আগামী শুক্রবারের (১৩ জুন) এই বৈঠকের ব্যাপারে দুই পক্ষই বেশ আশাবাদী। সরকারের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের যে টানাপোড়েন চলছে তা এই বৈঠকের মাধ্যমে দূর হবে বলে মনে করছে উভয় পক্ষই।
চার দিনের সরকারি সফরে মঙ্গলবার (১০ জুন) লন্ডনে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অনেক বছর ধরে লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপির অন্য শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক হলেও এবারই প্রথম তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন সরকারপ্রধান।
এই সাক্ষাতে অনেক সমস্যার সমাধান সহজ হয়ে যাবে বলে আমরা মনে করছি। রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করার একটি বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। জাতীয় স্বার্থে এই দুই নেতার মধ্যে সংলাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে এসেছে।
সূত্র জানিয়েছে, আগামী শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকে এই বৈঠকটি নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা-১১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে এই বৈঠকের জন্য। স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করা হচ্ছে, দীর্ঘ সময়ের বৈঠকে নানা ইস্যুতে কথা বলবেন দুই নেতা।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক নিয়ে সোমবার (৯ জুন) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটি একটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। চেয়াপারসনের গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন তারেক রহমান। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আলাদা করে সবার মত নেন। কয়েকজন নেতা বৈঠকে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করলেও দীর্ঘ আলোচনায় নানা হিসাব নিকাশ করে নেতারা সবাই এই বৈঠকের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আসেন।
মঙ্গলবার (১০ জুন) এই বৈঠকের ব্যাপারে জানাতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই বৈঠক ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হতে পারে বলে জানান। ফখরুল জানান, স্থায়ী কমিটির আলোচনার ভিত্তিতেই তারেক রহমান বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। তাকে দলের পক্ষ থেকে সব ধরনের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। তিনি যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্থায়ী কমিটি এই বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিভাবে এই বৈঠকে গুরুত্ব ও সম্ভাবনা অনেক। এই বৈঠক থেকে অনেক কিছুর ডাইমেনশন হতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব নিজের আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই সাক্ষাতে অনেক সমস্যার সমাধান সহজ হয়ে যাবে বলে আমরা মনে করছি। রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করার একটি বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। জাতীয় স্বার্থে এই দুই নেতার মধ্যে সংলাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে এসেছে।
তারেক রহমান বাংলাদেশের বড় একটি রাজনৈতিক দলের নেতা, তার সঙ্গে লন্ডন সফরে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক দেশের জন্য পজিটিভ মেসেজ।
তিনি জানান, বৈঠকের জন্য নির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা নির্ধারিত না থাকলেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হতে যাচ্ছে।
বৈঠকের সময়সূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। লন্ডন সময় শুক্রবার (১৩ জুন) সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এ বৈঠক হবে।
সরকারের পক্ষ থেকেও এই বৈঠকটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই বৈঠকের মাধ্যমে বিএনপির মতো বৃহৎ দলের সঙ্গে সরকারের যে সম্পর্কের অস্বস্তি রয়েছে তা অনেকটা কেটে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকার সংস্কার, গণহত্যার বিচার এবং নির্বাচনের যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে বিএনপির মতো প্রধান রাজনৈতিক শক্তির সমর্থন জরুরি বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, তারেক রহমান বাংলাদেশের বড় একটি রাজনৈতিক দলের নেতা, তার সঙ্গে লন্ডন সফরে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক দেশের জন্য পজিটিভ মেসেজ।