এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : প্রায় দুই দশক ধরে সরাসরি নির্বাচনী মাঠে অনুপস্থিত বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারেন। এই খবরেই যেন নতুন করে চাঙা হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু বগুড়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে, খালেদা জিয়াকে এবার বগুড়া, ফেনী ও দিনাজপুর- এই তিনটি আসনে প্রার্থী করার সম্ভাবনা বেশি। এর মধ্যে বগুড়া-৬ অথবা ৭ আসন থেকে তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনেকটাই নিশ্চিত। বগুড়া-৭ আসনটি (গাবতলী-শাহজাহানপুর) শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি হওয়ায় এটি বরাবরই বিএনপির কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
বগুড়া দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে একাধিকবার এখান থেকে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এবং প্রতিবারই জয়ী হয়েছেন। ফলে বিএনপির রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা ও শক্তি পুনর্গঠনে বগুড়া থেকে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ দল ও সমর্থকদের মধ্যে ভরসা ও আশার আলো জাগিয়েছে।
বিএনপির এক নেতা বলেন, বগুড়া আমাদের জন্য শুধু একটি আসন নয়, এটি আমাদের রাজনীতির প্রতীক। খালেদা জিয়া এখান থেকেই গণমানুষের বার্তা দিতে চান। এতে দলের ভেতরে যে বিভক্তি শুরু হয়েছিল, সেটিও অনেকটা বন্ধ হবে।
দলীয় উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বেগম খালেদা জিয়া ফেনী-১, বগুড়া-৬ অথবা ৭ এবং দিনাজপুর জেলার একটি আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। এরই মধ্যে সম্ভাব্য মনোনয়নের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, বেগম জিয়ার মতো শুধু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও একাধিক আসনে নির্বাচন করার অনুমতি পাবেন।
ম্যাডাম জিয়া এখন দেশে ফিরেছেন, শারীরিকভাবে আগের চেয়ে ভালো আছেন। তিনি মনোবল হারাননি। আমরা আশাবাদী, তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং আবারও আমাদের নেতৃত্ব দেবেন।
২০০৮ সালের পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনটি আসনে প্রার্থী হলেও কথিত দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছিল। তবে ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা আদালতের রায়ে খারিজ হয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্ট তাকে দুটি মামলায় খালাস দেওয়ায় তার নির্বাচনে অংশগ্রহণে আর কোনো আইনি বাধা নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বগুড়া জেলা বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, ‘ম্যাডাম জিয়া এখন দেশে ফিরেছেন, শারীরিকভাবে আগের চেয়ে ভালো আছেন। তিনি মনোবল হারাননি। আমরা আশাবাদী, তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং আবারও আমাদের নেতৃত্ব দেবেন।’
বগুড়া জেলা বিএনপির নেতাদের মতে, খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণ শুধু দলের কর্মীদের নয়, সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও বড় ধরনের সাড়া ফেলবে। দলের একজন সাবেক সংসদ সদস্য বলেন, বেগম জিয়ার প্রার্থিতা মানেই মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার প্রতীক। বগুড়া থেকে তার অংশগ্রহণ আমাদের আন্দোলনকে শক্তিশালী করবে।
১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে পাঁচটি আসনে প্রার্থী হয়ে সবগুলোতেই জয়ী হন বেগম খালেদা জিয়া। ২০১৮ সালে চেয়েও আইনি জটিলতায় লড়তে পারেননি। এবার তার সরাসরি অংশগ্রহণ শুধু নির্বাচন নয়, একটি নতুন রাজনৈতিক সময়েরও বার্তা দিচ্ছে।
বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, বেগম জিয়া হচ্ছেন জনগণের আস্থার প্রতীক। আমরা বিশ্বাস করি, তার নেতৃত্বেই দেশে গণতন্ত্র আবার প্রতিষ্ঠিত হবে। তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ মানে হচ্ছে দেশে ভোটাধিকার ও ন্যায়ের বিজয়।
বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনী ইতিহাস এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে। একাধিকবার একাধিক আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রতিবারই তিনি জয়লাভ করেছেন। দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির উত্থান-পতনের নানা সময়েও বেগম জিয়ার নির্বাচনী মাঠে অবস্থান ছিল দৃঢ় ও প্রভাবশালী।
খালেদা জিয়ার বগুড়া থেকে নির্বাচন করার ইচ্ছা পোষণ করাই একটি রাজনৈতিক বার্তা। দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর বগুড়া তার প্রত্যাবর্তনের কেন্দ্রস্থল হচ্ছে—এতে নির্বাচন নিয়ে বিএনপি এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে এক ধরনের আগ্রহ ও প্রত্যাশা সৃষ্টি হবে।
বিশেষ করে বগুড়া, ফেনী, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা- এই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এলাকাগুলোতে তার জনপ্রিয়তা এবং ভোটের ব্যবধান ছিল অত্যন্ত লক্ষণীয়। তিনি কখনোই নির্বাচনী মাঠে পরাজয়ের মুখ দেখেননি, যতবারই ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন, বিজয় তার পক্ষেই এসেছে।
১৯৯১ সালে নির্বাচনে তিনি ৫টি আসনে প্রার্থী হয়ে ৫টিতেই জয়ী হন। উল্লেখযোগ্য আসন ছিল বগুড়া, ফেনী ও ঢাকা। ১৯৯৬ সালেও তিনি একইভাবে ৫টি আসনে প্রার্থী হয়ে সবগুলোতেই জয় পান। তখন তার নির্বাচনী এলাকা ছিল বগুড়া ও চট্টগ্রামসহ আরও কয়েকটি।
২০০১ সালের নির্বাচনেও তিনি ৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৫টিতেই বিজয় অর্জন করেন। তখন তিনি বগুড়া ও খুলনা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
২০০৮ সালে, রাজনৈতিকভাবে কঠিন এক সময়ে খালেদা জিয়া তিনটি আসনে প্রার্থী হয়ে তিনটিতেই বিজয়ী হন। এর মধ্যে বগুড়া-৬ ও ফেনী-১ ছিল গুরুত্বপূর্ণ আসন।
এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে, তিনি তিনটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও, দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। ফলে সেই নির্বাচন তিনি অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
বগুড়া জেলা বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার বগুড়া থেকে নির্বাচন করার ইচ্ছা পোষণ করাই একটি রাজনৈতিক বার্তা। দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর বগুড়া তার প্রত্যাবর্তনের কেন্দ্রস্থল হচ্ছে—এতে নির্বাচন নিয়ে বিএনপি এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে এক ধরনের আগ্রহ ও প্রত্যাশা সৃষ্টি হবে। দেশের রাজনীতিতেও এটি হবে একটি নতুন অধ্যায়।