এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : জুলাই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন দেশের অনেক যুবক-তরুণ। এই তালিকায় আছে অনেক কিশোর শিক্ষার্থীরাও। যাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার শাসকের পতন হয়েছে। যাত্রা শুরু করেছে ‘নতুন বাংলাদেশ’। এই ‘নতুন বাংলাদেশে’ আজ শুরু হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।
আজকের এইচএসসি পরীক্ষায় বসার কথা ছিল ফাইয়াজ, আহনাফ, সাদ, মারুফ, জাহিদ, সৈকতদের। পরীক্ষায় বসার আগে জুলাই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন তারা। আজ ফাইয়াজ, আহনাফদের ছাড়াই পরীক্ষার হলে বসেছেন প্রায় সাড়ে ১২ লাখ পরীক্ষার্থী। বেঁচে থাকলে তারাও আজ পরীক্ষায় অংশ নিতেন। তবে জীবনের পরীক্ষায় ওরা পাস।
শহীদের ছাড়া ঈদ, উৎসব পালনে এখনও কাঁদেন পরিবারের সদস্যরা। আজ পরীক্ষার আগে তাদের জন্য মর্মাহত পরিবারের সদস্য, শিক্ষক, সহপাঠীরা।
আবদুল্লাহ বিন জাহিদ, ফারহান ফাইয়াজ, শাফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফ, আফিকুল ইসলাম সাদ, মারুফ হোসেন ও আব্দুল আহাদ সৈকত ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দাবিতে অভ্যুত্থান চলাকালে আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। তাদের আজকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
জাহিদ শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের মানবিক বিভাগের ছাত্র ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট রাতে উত্তরায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। জাহিদের মা ফাতেমা-তুজ-জোহরা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওর কলেজ থেকে পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে আমাকে ডেকেছিল। আমি যাইনি। মনে হচ্ছিল, সহ্য করতে পারবো না।’
তবে পরীক্ষার আগে জাহিদের বন্ধুরা দোয়া চেয়েছেন জাহিদের বন্ধুরা। স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তাকে। ফাতেমা বলেন, ‘ওর পাঁচ বন্ধু লামিম, হাসান, সালেহীন, রাকিব ও মেহেদি ফোন করে অনেক কেঁদেছে। বলেছে, খালাম্মা দোয়া করবেন। ওদের মুখেই যেন আমার ছেলেকে খুঁজে পাই।’
ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া, ডাকনাম ফারহান ফাইয়াজ। সেই নাম এখন হয়ে উঠেছে জুলাই অভ্যুত্থানের এক প্রতীক। ১৮ জুলাই আন্দোলনের সময় তার বুকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মারা যান ঘটনাস্থলেই।
বাবা শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, ‘ছেলেটা গবেষক হতে চেয়েছিল। বিদেশে পড়ালেখা শেষে দেশে ফিরে গবেষণা করতে চেয়েছিল।’
মিরপুর ১০ নম্বরে পুলিশের গুলিতে ৪ আগস্ট শহীদ হন শাফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফ। ছিলেন বিএএফ শাহীন কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী। আহনাফের বাবা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘পরীক্ষার সময় এসেছে, বুকটা আরও বেশি খালি লাগছে। ছেলের রেজিস্ট্রেশন কার্ডটা এখন শুধু যন্ত্রণার স্মৃতি।’
গত বছরের ১৯ জুলাই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন মারুফ হোসেন। তার মরদেহ পাওয়া যায় তিন দিন পর অর্ধগলিত অবস্থায়। আজ এইচএসসি পরীক্ষার অংশ নেওয়ার কথা ছিল মারুফের।
আব্দুল আহাদ সৈকত ঢাকা কমার্স কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে অংশ নেন বাবার সঙ্গে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে এনাম মেডিক্যাল কলেজের সামনে মাথায় গুলি লেগে শহীদ হন তিনি। স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। শহীদ হয়ে থেকে মারুফের সেই স্বপ্ন।
সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন সাদ। ৫ আগস্ট ধামরাইয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ৮ আগস্ট মৃত্যু হয় তার। তার বাবা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছেলেটা এখনো চোখের সামনে ভাসে। নিজের ডিজাইনে আন্দোলনের পোস্ট বানিয়ে ফেসবুকে দিত। পরিবারকে সাহায্য করতে চাইতো।’-কালের কণ্ঠ