শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫, ০২:১০:২২

জানেন চাঁদপুরে হঠাৎ ইলিশের কেজি কত হলো?

জানেন চাঁদপুরে হঠাৎ ইলিশের কেজি কত হলো?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : চলছে বর্ষা। আকাশে কালো মেঘ। তাই ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। আবার মাঝেমধ্যে ঝুম বৃষ্টি। বৈরী আবহাওয়া হলেও উপকূলে কিংবা তৎসংলগ্ন নদীগুলোতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ছোটবড় ইলিশ। কিন্তু চড়া দামেই কিনতে হচ্ছে রূপালি ইলিশ। এতে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে অধরা ইলিশের স্বাদ।

ইলিশের দাম নির্ধারণে চাঁদপুরসহ দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর সরকারি প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৎস্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়েছে। তবে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নেমে নিতে নারাজ মাছ ব্যবসায়ীরা।

জেলেরা বলছেন, নদনদীতে ইলিশ ধরা পড়ছে কম। তাই নৌকার জ্বালানি আর মজুরি খরচ মেটাতে গিয়ে চাহিদার বিপরীতে দাম বাড়ছে। চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে মাছ ধরেন জেলে মমিন গাজী। সদর উপজেলার হরিণাঘাটে তার বাড়ি। জেলে মমিন গাজীর সঙ্গে এক নৌকায় আরও সাত জেলে। যাদের বলা হয় ভাগিদার।

শনিবার (২১ জুন) ভোর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই দফায় নদীতে জাল ফেলে মাত্র ছোট ও মাঝারি আকারের চার হালি ইলিশ পেয়েছেন। পাশের হরিণাঘাটের আড়তে সেই ইলিশের ডাক উঠেছে দশ হাজার ৫শ’ টাকা।

মমিন গাজী বললেন, তিনিসহ ৮ জনের মজুরি, নৌকার জ্বালানি তেল খরচ, সকালের নাশতা এবং দুপুরের খাবার৷ এসব খরচ মিলিয়ে মাত্র সাড়ে চার শ টাকা। এ দিয়ে জেলেদের সংসার চলবে কী করে। এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।

চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনাসহ আশপাশের নদনদীতে আগের মতো ধরা পড়ছে না রূপালি ইলিশ। তাই জেলেরা নদীতে মাছের আশায় জাল ও নৌকা নিয়ে ঘুরছেন। তাদের জালে ধরা দিচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত রূপালি ইলিশ। সঙ্গত কারণে অনেকটা মাছশূন্য সেই জাল। মমিন গাজীর মতো আরও অনেক জেলেদের সেই একই পরিণতি। অথচ এখন চলছে বর্ষা- ইলিশের মৌসুম। তাই সাগর ও উপকূলে ইলিশ ধরা পড়ছে। আর সেই ইলিশের দরদাম ভালো পেতে নিয়ে আসা হয় চাঁদপুরের পাইকারি মাছ বাজার, বড়স্টেশনে।

কিন্তু আকারভেদে সেই ইলিশের দরদাম বেশ চড়া। এই নিয়ে পরস্পরবিরোধী কথা বলছেন জেলে এবং বেপারীরা। এতে দাম বেশি হওয়ায় নাভিশ্বাস ক্রেতাদের। শনিবার সরকারি ছুটি। তাই রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে অনেকেই চাঁদপুরে আসেন ইলিশ ক্রয় করতে। তাদেরই একজন রাজধানীর শ্যামলীর গৃহবধূ শাহনাজ বেগম। তরতাজা আর দামে সাশ্রয়ী। এমন চিন্তা করেই পাইকারি মাছ বাজার বড়স্টেশন তিনি। বলেন, ‘তরতাজা ইলিশ পেয়েছি ঠিকই। কিন্তু দাম একটু বেশি।’

কুমিল্লা শহরের দক্ষিণ ঠাকুরপাড়ার জসিম উদ্দিন। পেশায় চাকরিজীবী তিনি। চাঁদপুরের ইলিশের প্রতি খুব দুর্বল তার পরিবারের। তাই সবার স্বাদ মেটাতে এককেজি ওজনের চারটা ইলিশ কিনেছেন সাড়ে ৯ হাজার টাকায়। দাম বেশি হলেও কেবলমাত্র পরিবারের চাহিদার কারণে নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

সরকারি প্রশাসন ইলিশের দরদাম বেধে দেওয়া সম্পর্কে চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শবেবরাত বলেন, ‘কাঁচামাল বা পচনশীল পণ্যের দাম নির্ধারণ করা যায় না। এটা সম্পূর্ণ সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে বাজারে চাহিদার বিপরীতে যোগান কম ইলিশের। তাই আকারভেদে দরদামও ওঠানামা করে। তবে এখন ইলিশের দাম আগের চেয়ে কমেছে।’

ব্যবসায়ী এই নেতা আরও বলেন, শুধু চাঁদপুর নয়, যেখানে ইলিশ ক্রয় বিক্রয় হয়- এমন সব জেলায় একই দাম নির্ধারণ করা যেতে পারে। আর তার সপক্ষে যুক্তিও তুলে ধরেন ইলিশ গবেষক ও দেশের বিশিষ্ট মৎস্যবিজ্ঞানি ড. মোহাম্মদ আনিছুর রহমান। তার বক্তব্য সাগর কিংবা নদী, কোথাও ইলিশের প্রাচুর্যতা হ্রাস পায়নি। শুধু দিনক্ষণ এবং কিছু নিয়ম মেনে জেলেরা চললেই প্রকৃতির সম্পদ এই মাছ শিকার করতে কোনো সমস্যায় পড়বে না। তার সঙ্গে তিনি বলেন, উত্তাল ঢেউ পেরিয়ে সাগর থেকে জেলেরা জীবনের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ইলিশ আহরণ করেন। তার সঙ্গে নৌকা কিংবা ট্রলারের ইঞ্জিনের জ্বালানি একই সঙ্গে মজুরি। তবে সবকিছু আলোচনা করেই দাম নির্ধারণ করার পক্ষে মত দেন তিনি।

এদিকে, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে ইলিশের দাম সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এজন্য যেসব অঞ্চলে ইলিশ ধরা, পাইকারি বিক্রি হয়, যেসব জেলায় একই দামে ইলিশ বিক্রি করার বিষয় সংশ্লিষ্ট মৎস্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং মাছ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মতামত চাওয়া হয়। যা নিয়ে গত ১৭ জুন একটি পত্র দিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের প্রত্যাশা এতে জেলে, ব্যবসায়ী এবং ভোক্তা পর্যায়ে ইলিশের দরদাম নিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে চাঁদপুরে এখন আকারভেদে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি ২ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ গত সপ্তাহে তা ছিল ২৮শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। অন্যদিকে, আকারভেদে আজ শনিবারের দরদাম।

এক কেজি ওজনের ২৪০০-২৫শ’ টাকা, মাঝারি আকারের ৮শ’ থেকে সাড়ে ৯শ’ গ্রাম ওজনের দুই হাজার টাকা এবং সবচেয়ে বড় ১২শ’ গ্রাম থেকে ১৩শ’ গ্রাম ওজনের তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, স্বাদ আর গন্ধের কারণে সেই অনেক আগে থেকেই চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনার ইলিশের সুখ্যাতি রয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিগত ২০২৭ সালে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ এই পরিচয়ে সরকারিভাবে ব্র্যান্ডিং জেলা হিসেবে চাঁদপুরের নাম আরও ব্যাপকভাবে আলোচনায় উঠে আসে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে