এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : অনলাইন প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা, আর নিঃস্ব করেছেন শত শত পরিবার। প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ব্যয় করেন মা*দ*ক আর রাজকীয় জীবনযাপনে। এমনই প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে নড়াইলের কালিয়া উপজেলা থেকে গ্রেফতার করেছেন জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
সোমবার (৭ জুলাই) উপজেলার রঘুনাথপুর ও যাদবপুরে ৮ ঘণ্টাব্যাপী অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৬টি মোবাইল ফোন ও সিম জব্দ করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন— উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মো. শুকুর আলী মুন্সির ছেলে মো. মুসাব্বির মুন্সি ছিপাতুল্য (২৮), যাদবপুর গ্রামের শেখ বাহার উদ্দিনের দুই ছেলে মো. নাজমুল হুসাইন (৩১) ও তার ভাই বাপ্পি হাসান ওভি (২৭) এবং একই গ্রামের মো. আফসার মীনার ছেলে মো. রনি মীনা (৪১)।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুইটি মামলার সূত্র ধরে কালিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর থেকে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রথমে গ্রেফতার করা হয় মুসাব্বির মুন্সি ছিপাতুল্যকে। পরবর্তীতে যাদবপুর থেকে দুই ভাই নাজমুল হুসাইন ও বাপ্পি হাসান ওভিকে তথ্য প্রমাণ সাপেক্ষে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, সিমসহ গ্রেফতার করা হয়। পরে একই এলাকায় অভিযান চালিয়ে রনি মীনা নামের আরও এক অনলাইন প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়। সকাল থেকে আট ঘণ্টা ধরে চলা অভিযানে অনলাইন প্রতারণার অভিযোগে ছয়টি মোবাইলে ব্যবহৃত সিমসহ চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
অভিযুক্ত প্রতারক চক্রের সদস্যরা জানান, অতিরিক্ত টাকা উপার্জনের আশায় অনলাইন প্রতারণাকে পারিবারিক পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন কালিয়া উপজেলার যাদবপুর, রঘুনাথপুর, চাঁদপুর, মহিষখোলাসহ আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের হাজারো পরিবার। এ অর্থ পারিবারিক প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি নিজেদের বিলাসী জীবন, মা*দ*ক ও অনলাইন গেমিং প্লাটফর্মে খরচ করেন তারা। আর বিপরীত চরিত্রের এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষগুলো চায় সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে।
ভুক্তভোগী মাদারীপুরের নয়ন টিকাদার মুঠোফোনে বলেন, মোবাইলফোনের বিজ্ঞাপন দেখে প্রথমে ৩০০ টাকা দিই। পরে তাদের ফাদে পড়ে ৩ হাজার টাকার ফোনের জন্য ২১ হাজার টাকা দিছি। আমার অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য জমানো টাকা ছিল ওটা। কান্না কাটি করছি অনেকবার কল দিছি তাদের, আমার ফোন টাকা কোনোটাই দেয়নি তারা।
আরেক ভুক্তভোগী আহাদ বলেন, একটা মোটরসাইকেলের জন্য কয়েক দফায় পর্যায়ক্রেম ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা তাদের দিছি। গাড়ি দেওয়ার কথা বলে আমাকে এক মাস ধরে হয়রানি করছে। বাংলাদেশের আইনের বাহিরেও যদি কোনো বিচার থাকে প্রতারক চক্রের যেনো কঠোর শাস্তি হয়।
নড়াইল জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, পুলিশের অভিযানে অনলাইন প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ ও প্রতারণা সংক্রান্তের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সিম কোম্পানির এজেন্টদের মাধ্যমে অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম চড়া মূল্যে ক্রয় করে।
তিনি বলেন, চক্রটি ফেসবুকে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে এবং পেইজগুলোকে টাকা দিয়ে বুস্টিংয়ের মাধ্যমে অধিক মানুষের কাছে তাদের বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেয়। অন্যের নামের সিমগুলো ব্যবহার করে তারা ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে লেনদেন করে। গ্রেফতার এড়াতে তারা নানা কৌশল অবলম্বন করলেও নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে অনলাইন প্রতারক চক্র নির্মুলের আশ্বাসের পাশাপাশি অনলাইনে পণ্য ক্রয় বিক্রয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার পরামর্শ জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তার।