সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫, ০৬:০২:৩২

ইংলিশ মিডিয়ামের সেই তরুণীকে নিয়ে আহমাদুল্লাহর ‘আবেগঘন’ স্ট্যাটাস

ইংলিশ মিডিয়ামের সেই তরুণীকে নিয়ে আহমাদুল্লাহর ‘আবেগঘন’ স্ট্যাটাস

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : মা-বাবার নামে মামলা ও মিডিয়ার সামনে অসংলগ্ন আচরণ করে সারা দেশে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন মেহরীন আহমেদ নামে এক তরুণী। তিনি রাজধানীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এবার তাকে নিয়ে কথা বলেছেন জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমাদুল্লাহ।

সোমবার (১৪ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া আবেগঘন এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘এই বৃষ্টিস্নাত দিনে ইংলিশ মিডিয়ামপড়ুয়া আলোচিত সেই মেয়েটির মা-বাবার কথা ভাবছি।

নিশ্চয়ই বুকে জমানো সবটুকু আবেগ, ভালোবাসা ও মমতা দিয়ে তারা মেয়েটিকে বড় করছিলেন। ছোটবেলায় মেয়েটি যখন জ্বরে পড়েছে, মা-বাবার অসংখ্য নির্ঘুম রাত নিশ্চয়ই মেয়ের শিয়রে বসে কেটেছে। মেয়েটি কোনো কিছু পাওয়ার আব্দার করলে মা-বাবা হয়তো হৃদয় উজাড় করে তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। নিজেদের কষ্টার্জিত উপার্জন নিশ্চয়ই তারা ব্যয় করেছেন মেয়েটির সুস্থ-সবল ও হাসি-আনন্দে বেড়ে ওঠার জন্য।

নিজেদের চেয়ে মেয়েকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন সব কিছুতে। মেয়ে মা-বাবার চক্ষু শীতলকারী সন্তান হবে—আর দশজন মা-বাবার মতো এমন স্বপ্ন তারাও নিশ্চয়ই লালন করতেন। কিন্তু কে জানত, জীবনের মাঝপথে এসে ডানাভাঙা পাখির মতো তাদের সব আশা লুটিয়ে পড়বে মাটিতে!

সন্তানের করা মামলায় সেই মা-বাবাকে যখন জনাকীর্ণ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল, অসংখ্য মিডিয়ার সামনে তির্যক গলায় মেয়েটি যখন মা-বাবাকে ক্রিমিনাল বলছিল, তাদের মনের অবস্থা কেমন হয়েছিল? নিশ্চয়ই তারা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। বড় বেশি মায়া হচ্ছে ওই হতবাক মা-বাবার জন্য।

আমরা প্রায় সবাই ছোটবেলায় মা-বাবার শাসনের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। এই পরিণত বয়সে এসে সেসব দৃশ্য যখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে, মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধায় নুয়ে পড়ে হৃদয়, চক্ষু হয়ে ওঠে অশ্রুসজল।

তাদের সেসব আদরমাখা শাসনই আমাদের আজকের সাফল্যের সিঁড়ি। আজ এই মুহূর্তে একটি কথা বড় বেশি মনে হচ্ছে, তাদের শাসন ছিল অন্যদের আদরের চেয়েও মূল্যবান, জীবনের পথনির্দেশক।

আজকাল প্রায়ই সন্তানরা আমাদের স্বপ্নভঙ্গ করছে। এর দায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের, মা-বাবাদের। পশ্চিমা সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমরা অনেক বেশি বস্তুবাদী, ভোগবাদী, আত্মকেন্দ্রিক ও ক্যারিয়ারিস্ট হয়ে উঠছি।

সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে ঈমান, আত্মপরিচয়, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধকে আমরা উপেক্ষা করছি। সন্তানের ক্যারিয়ার, ইহজাগতিক সাফল্যই আমাদের কাছে হয়ে উঠছে প্রধান অর্জন। ফলে একটা সময় আমাদের সন্তানরা হয়ে উঠছে স্বেচ্ছাচারী, উশৃঙ্খল, বেপরোয়া। যার সর্বশেষ পরিণতি আমরা দেখলাম, অধিকার খর্বের অভিযোগে মা-বাবার বিরুদ্ধে সন্তানের মামলা। এটাই বোধ হয় সতর্কতার কফিনে শেষ পেরেক।

এর পরও যদি আমরা না শুধরাই, পড়াশোনার পাশাপাশি সন্তানকে আত্মপরিচয় ও মূল্যবোধ না শেখাই, তবে আফসোস, হতাশা ও স্বপ্নভঙ্গের বেদনাই হবে আমাদের চিরসাথী। সেই দুর্দিন আসার আগেই আসুন সচেতন হই।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে